খাদ্য বিতরণ ও মজুদ করার ব্যবস্থা উন্নত করতে জরাজীর্ণ ৪২৪টি খাদ্যগুদাম এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে ৬৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরা হয়। তবে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০টি খাদ্যগুদাম সংস্কারের নির্দেশনা দিয়ে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে পাঠাতে বলেছে কমিশন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রকল্পের আওতায় খাদ্যগুদাম সংস্কার ও মেরামতকাজের জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, তা নতুন ভবন নির্মাণের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রকল্পটির প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগটির সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক। সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) সিলিং অনুযায়ী প্রকল্পের চাহিদার চেয়ে বাজেট ঘাটতি দুই হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
চলমান প্রকল্পেই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না, তার ওপর এই প্রকল্পে কিভাবে বরাদ্দ পাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি গুদাম সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় গত পাঁচ বছরে যেসব খাদ্যগুদাম সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব স্থাপনা আবার সংস্কারের প্রস্তাবনা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, যে খাদ্যগুদামগুলো বেশি জরাজীর্ণ সেগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্রুত বাস্তবায়নেই প্রকল্পের আকার ও ব্যয় কমানো হয়েছে। এমটিবিএফের সিলিং থেকে চলমান প্রকল্পগুলোতেই তারা চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছে না।
পিইসি সভা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুনে সারা দেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও অন্য স্থাপনার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পিইসি সভা হয়। সভায় ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামত ও সংস্কার অংশ বাদ দিয়ে শুধু ১৬টি জরাজীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম এবং সংশ্লিষ্ট অন্য স্থাপনা পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় পিইসির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধারণক্ষমতার খাদ্যগুদাম ও অন্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মেরামত ও সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬টি জরাজীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনা পুনর্নির্মাণের পরিবর্তে বর্তমানে একই শিরোনামে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদামসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কারকাজ করা প্রয়োজন। অর্থ বিভাগের উপসচিব নূরউদ্দিন আল ফারুক বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে সাধারণত নতুন ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ২৫ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় সংস্কার ও মেরামতকাজের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ৪৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক।