চাঁদার দাবিতে দুই শতাধিক বাড়িতে পোস্টারিং করার পর বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে পুলিশ পাহারা বাসানো হয়েছে। পোস্টারিংয়ের ঘটনায় তথ্য উদঘাটনে তিন যুবককে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পোস্টারিংয়ের পর গ্রামের অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
কেউ কেউ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যান। আতঙ্কে সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফেরে সবাই। সন্ধ্যার পর দোকানপাটে আড্ডা বন্ধ করে দিয়েছে গ্রামবাসী।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী গতকাল দুপুরে বিষ্ণুপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন।
তিনি গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গ্রামে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার জানান, পোস্টারিংয়ে জড়িতদের শনাক্ত করতে রবিবার সকাল থেকেই পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে।
এদিকে র্যাব সদস্যরাও ওই গ্রামে টহল দেওয়াসহ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানায় বাসিন্দারা।
কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসান জানান, গ্রামের একটি ক্লাবে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু যুবক আড্ডা দিতেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাতে ওই গ্রামের তিন যুবককে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের কাছে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষ্ণুপুর মাজাগাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলাম, নয়ন প্রামাণিক, সুলতান প্রামাণিকসহ গ্রামবাসী জানায়, তারা ভাবতেই পারছে না এভাবে বাচ্চাদের অপহরণের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হবে। গ্রামের মানুষ চাঁদাবাজির মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হয়নি।
এ কারণেই সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কিত তারা।
মুরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই দিনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের পরিবার আতঙ্কে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ের পাঠাচ্ছে না।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার) মাধ্যমে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের ভয় না পেতে কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু ভয় কাটছে না। অন্য সময়ের তুলনায় কম শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে।’
কাহালু থানার পুলিশ জানায়, চারপাড়ার বাড়ি বাড়ি সাঁটানো পোস্টারগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আর্থিক অবস্থা বুঝে বাড়ি বাড়ি পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদের বাড়িতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা, আবার যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের বাড়িতে ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রামের লোকই পোস্টারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, যারা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানে।
কাহালু থানার ওসি বলেন, ‘যেহেতু আগামী ৬ অক্টোবর রাতে টাকা দিতে বলা হয়েছে, এ কারণে ৬ তারিখ পর্যন্ত দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গ্রামে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এর পরও নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে পুলিশ সেই ব্যবস্থা নেবে।’