বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অবিচল আছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তরে আলাদা ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ওই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য জানতে চান একজন সাংবাদিক। শেখ হাসিনার অধীনে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কিভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের প্রসার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম—আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছে। ওই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহযোগিতা করতেই যুক্তরাষ্ট্র দুই সপ্তাহ আগে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে।
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘ওই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা হবে—এমন সাবেক বা বর্তমান বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারপন্থী বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য কিংবা অন্য কোনো বাংলাদেশির ওপর আমরা ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ পাব।
’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ছয় কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠি নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রচারণার তথ্য তুলে ধরে আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান, ওই চিঠির প্রভাব বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর পড়বে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, যেকোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আমরা কংগ্রেসে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলি ও তাদের পরামর্শ নেই।’ তিনি সুনির্দিষ্ট ওই চিঠির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের বিষয়টি তাঁরা আড়ালেই রাখেন।
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘গত বছর আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বার্ষিকী (সুবর্ণজয়ন্তী) পালন করেছি।
জ্বালানি, জলবায়ু অর্থনৈতিক সহযোগিতার মতো ইস্যুতে আমরা সম্পর্ক জোরদারের অপেক্ষায় আছি।’
বেদান্ত প্যাটেল আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে সব ধর্ম ও বিশ্বাসের অনুসারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এগিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কারণেই কি গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে—জানতে চাইলে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘অন্য দেশের সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের বিষয়ে আমি কথা বলব না। আমি শুধু বলব, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের প্রসার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’
এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগবিষয়ক সমন্বয়ক জন কিরবি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠির বিষয়ে বলেন, “আমি সেই যোগাযোগের (মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসম্যানদের চিঠি) বিষয়ে অবগত আছি।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আমরা অবিচল আছি। সেই অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসেবে আমরা ‘৩সি’ ভিসানীতি ঘোষণা করেছি। এটি বাংলাদেশের নির্বাচন ক্ষুণ্ন করা ব্যক্তিদের নামে ভিসা ইস্যু সীমিত করবে।”