মৌলভীবাজারের বড়লেখা রেঞ্জের সমনভাগ সংরক্ষিত বনের ধলছড়ি ও মাকাল জোরা এলাকায় প্রায় ৪০ হেক্টর সংরক্ষিত বনের কয়েক হাজার গাছ আগুনে পুড়ে গেছে। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ছয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরেই পুড়ছে বন। আগুন নেভানোর ব্যাপারে বন বিভাগকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বনের এক পাশে এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
আগুনে পুড়ে অজগর সাপ, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্চপ, বনরুই, শজারুসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির বিরল কীটপতঙ্গ এবং বেশ কিছু প্রজাতির বৃক্ষের ক্ষতি হয়েছে।
সমনভাগ বনাঞ্চলে প্রায় ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং উভচর সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর সমন্বয়ে মোট ২০৯ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে এর সবই এখন ঝুঁকির মুখে।
এদিকে বনের একপাশে অবাধে চলছে বাঁশ কাটার মহোৎসব। প্রায় ৪০ জন শ্রমিক এ কাজ করছে।
স্থানীয় রফিক মিয়া ও কামাল আহমদ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে বনে আগুন দেখতে পাই। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় বনের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরে বিষয়টি বন বিভাগকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে এখানকার বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বড়লেখা সমনভাগ বিট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপকারভোগীদের মাধ্যমে ২০ হেক্টর জায়গায় একটি আগর বাগান করা হবে। সে জন্য বন কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগুন লাগার ব্যাপারটি এখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
হয়তো কেউ বিড়ি খেয়ে এখানে ফেলে দিয়েছে আর সেখান থেকে আগুন লেগে বনের চার-পাঁচ হেক্টর ভূমি পুড়ে গেছে।’
বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিভাবে আগুন লেগেছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’
সিলেট বন বিভাগের প্রধান তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি। যেকোনো অসাবধানতায় হয়তো এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ঝোপঝাড়, গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে। সে জন্য এখানে আগুন লেগে এই এলাকা পুড়ে গেছে। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের একটি টিম আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি বনে আগুন লাগার বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু সংরক্ষিত বন এলাকায় আগুন লেগেছে, এতে সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণীসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পাখির বাসার ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি সংরক্ষিত বনে আগুন লাগার বিষয়টি জানতাম না। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এই বিষয়ে সিলেট ডিভিশনের ডিএফওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করব।’