বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ (আনুমানিক ১০০ কোটি) মানুষ কোনো না কোনো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের (এইচআইইএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যা ৭ শতাংশ। বৈষম্য, প্রান্তিক এলাকায় বসবাস, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে তারা বাংলাদেশের বিপন্ন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এইচআইইএস ২০১০ অনুযায়ী, প্রতিবন্ধকতাবিহীন ৩০ শতাংশ মানুষের তুলনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিতে উদ্যোগ
অন্যান্য

জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদে (ইউএনসিআরপিডি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জীবন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসনের অধিকার, উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক সুরক্ষা, পারিবারিক জীবন ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকার, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও জনজীবনে অংশগ্রহণসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করে প্রতিবন্ধকতার অধিকারগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সামগ্রিক কৌশল গ্রহণ করেছে ইউএনসিআরপি।
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির জন্য অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ ২০০৭ সালে ইউএনসিআরপি অনুমোদন করেছে, তাই ইতোমধ্যে এর অনেক আইন ও নীতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণীত হয়, যা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিতার প্রকৃতিকেই সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করেনি বরং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মানবাধিকার মডেলকেও অনুসরণ করে।
ডিজঅ্যাবিলিটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য কাজ করা অনেক অংশীজনদের মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য কাজ করছে, যারা শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছে। ‘DARE’ (ডিজঅ্যাবিলিটি আর্টস: রিডিফাইনিং এমপাওয়ারমেন্ট)-প্রোজেক্টের মাধ্যমে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্রিয়ভাবে মূলধারার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করে, যেনো সংশ্লিষ্ট খাতে তাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত না করে শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা হয় যারা আর্ট কমিউনিটিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
‘ডেয়ার’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইনস্টিটিউশন অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইআইডি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করে এমন নীতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাবিষয়ক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বেশ কয়েকটি পলিসি কনসালটেশনের আয়োজন করেছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবেই সম্প্রতি গত ০৭ ডিসেম্বর ২০২২-এ একটি ‘পলিসি ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠিত হয়। এটি আইআইডির একটি ফ্ল্যাগশিপ কনসালটেশন সিরিজ, যা চ্যাথাম হাউজের নিয়ম অনুসরণ করে পলিসি কমিউনিটির প্রধান প্রভাবশালীদের মধ্যে এভিডেন্স-ইনফর্মড ও সল্যুশন-কেন্দ্রিক নীতি বক্তৃতা প্রচার করে। যেখানে উন্মুক্ত আলোচনাকে উৎসাহিত করা হয়। এবারের পলিসি ব্রেকফাস্ট-এর আলোচ্য বিষয় ছিলো ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ পার্লামেন্ট’; যেখানে প্রতিবন্ধী সহায়ক প্রক্রিয়া এবং চর্চার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সংসদের মূল কার্যাবলিতে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা, যা নীতিনির্ধারণ এবং সরকারি কার্যক্রমকে দেখভাল করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু। এ সময় আরো যেসব সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন : আহসান আদেলুর রহমান, এমপি; অ্যারোমা দত্ত, এমপি; শামীম হায়দার পাটোয়ারি, এমপি; তানভীর শাকিল জয়, এমপি। এ সময় তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস্ ডেভিড নক্স, ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ; ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী; হ্যান্ডিক্যাপ ফেডারেশনসহ এমওএসডাব্লিউ, এমওসিএ, বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, অ্যাকাডেমিয়ার প্রতিনিধি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিবর্গও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আইইডির সিইও সৈয়দ আহমেদ পলিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কমপক্ষে দু’টি আসন সংরক্ষিত করা প্রয়োজন বলে আলোচনায় উঠে আসে। এই দাবি পূরণের জন্য স্বল্পমেয়াদী অংশগ্রহণকারীরা সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী নারীকে নির্বাচন করার পরামর্শ দেন, যা একই সাথে সমাজের দুই প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে। সংসদের অধিবেশনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে কথা বলার বিষয় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যমান আইন ও নীতিগুলো পর্যালোচনা করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এছাড়াও, বিদ্যমান জাতীয় ও স্থানীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের বাজেট এবং প্রকল্পগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একমত পোষণ করেন যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিবিদদের মূলধারায় আনার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
সম্পর্কিত খবর

সচিবালয়ের ঘটনায় ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক

সচিবালয়ে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এক হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত মামলাটির এজাহার গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাংলাদেশ সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিদর্শক গোলাম মুক্তি মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা করেন।

‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে চলতি মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা না হলে আগামী ৩ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও এবং ‘কফিন মার্চ’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ উসমান হাদি বলেন, ‘সরকার বারবার সময় নিয়েও জুলাই সনদ ঘোষণা করেনি, যা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা না হলে ৩ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও এবং কফিন মার্চের মাধ্যমে চূড়ান্ত মুক্তির ডাক দেওয়া হবে।

সাবেক ডিআইজি বাতেনের স্ত্রীসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় পুলিশের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান আক্তার হীরার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আব্দুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গতকাল আবেদন করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমি। আব্দুল বাতেনের আবেদনে বলা হয়, আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত চলছে।

সংক্ষিপ্ত
আবুল বারকাত ২ দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাননটেক্সের ঋণ জালিয়াতি করে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা, গতকাল সকালে কারাগার থেকে তাঁকে আদালতে এনে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাঁর আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।