কক্সবাজারের উখিয়ায় পালংখালী ইউনিয়নের থাইনখালী এলাকার সরকারি পাহাড় কাটার বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। ছবি তোলা ব্যক্তি বলছেন, গত বৃহস্পতিবার ঝুঁকি নিয়ে তিনি মোবাইল ফোনে ওই ছবিগুলো ধারণ করেন।
ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এলাকাটি পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কারা কাটছে পাহাড়—জানতে চাইলে উখিয়ার বন কর্মকর্তা গাজি শফিউল আলম কালের কণ্ঠকে জানান, থাইনখালী, মধুরছড়া ও মুছারখোলা এলাকায় আবদুল গণি, কামাল মেম্বার, রাশেল, হাশেম ড্রাইভার, এজাহার মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের সিন্ডিকেট এই পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত।
তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে পাহাড় কাটার ঘটনায় ৯৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ১২৩ জন আসামি রয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
’

উখিয়ায় পাহাড়ের মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। ছবি : সংগৃহীত
থাইনখালী বন বিট কর্মকর্তা বিকাশ দাশ বলেন, ‘এখানে জীবন বাজি রেখে চাকরি করছি। আমরা পাঁচজন বনকর্মী এতগুলো বালু সিন্ডিকেট সদস্যের বিরুদ্ধে কী করতে পারব। তবু গত দুই মাসে ছয়টি মামলা করেছি।
’
কতগুলো পাহাড় কাটা হয়েছে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে, তাই কেটে ফেলা পাহাড়ের সংখ্যা বলা মুশকিল।’
মুছারখোলা বন বিট কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে থাকতে হয়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই সব সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে বালু ও মাটি বিক্রি করছে। ওই সিন্ডিকেটের মাটি পরিবহনের নিজস্ব ডাম্প ট্রাক ও ড্রেজার মেশিন থেকে শুরু করে পাহাড় কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম রয়েছে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
কেননা সিন্ডিকেটের লোকজন সশস্ত্র পাহারাদার বসিয়ে পাহাড় কেটে নেয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়খেকোদের হাতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাও প্রহৃত হয়েছেন। সম্প্রতি এক সিন্ডিকেটের পাহাড় কাটার স্থানে অভিযান চালিয়ে দুটি বন্দুক, ৩০টি কিরিচসহ অন্যান্য অস্ত্রও উদ্ধার করে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন।
পাহাড় কাটার অভিযোগ থাকা হাশেম ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত রাতে দাবি করে বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটা থেকে উঠে এসেছি। এখন করি না। তবে অন্যরা করে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভাই মাত্র কয়েক দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এসেছি। মাদক মামলায় কারাগারে ছিলাম। আমি পাহাড় কাটায় জড়িত নই।’
পাহাড় কাটার ছবি তোলা প্রতিবাদী যুবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দেশের স্বার্থে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝুঁকি নিয়ে ছবিগুলো তুলেছি। পরে এগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর আইডিতে দেওয়া হলে ভাইরাল হয়।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি গেল মাসে থাইনখালী এলাকায় অবৈধ পাহাড় কাটা মাটির ট্রাক ধরার অভিযানে গিয়ে উদ্ধার করেছি বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও চারটি ড্রেজার মেশিন। ভাগ্যিস সঙ্গে পুলিশের দল ছিল। আমার জানা ছিল না পাহাড় যারা কাটে তারা সঙ্গে এত অস্ত্রশস্ত্র রাখে।’