কুমিল্লায় জামাতার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে মাইক্রোবাসে বগুড়ার বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধা মালেকা বানু রুবি (৬৫)। সঙ্গে ছিলেন ছেলে রিফাত আল হাসান (৩৫)। উল্টোপথে আসা একটি বাস চাপা দেয় তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটিকে। এতে মারা যান মা-ছেলে দুজনই।
ছেলেকে নিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, নাটোর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একতা পরিবহনের বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পরই চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি উল্টে গিয়ে বিপরীত লেনের মাইক্রোবাসের ওপর পড়ে।
মাইক্রোবাসে থাকা নিহত চারজন হলেন বগুড়া সদর উপজেলার আলতাফুন নেছা খেলার মাঠের উত্তর-পূর্ব পাশের বাসিন্দা প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী মালেকা ভানু রুবি, ছেলে রিফাত আল হাসান, মাইক্রোবাসচালক কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুতুম্বপুর গ্রামের দুলাল মিয়া (৪৮) এবং তাঁর সহযোগী একই এলাকার সুশীল চন্দ্র শীল।
বাসের নিহত দুই যাত্রী হলো বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক, পাবনার বেড়া উপজেলার জোরদহ গ্রামের জহিরুল ইসলাম (৫৫) এবং নাটোরের বড়াইগ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে তাহসনি (৬)।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, আহতদের উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তাকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে পাঠান। ঘটনার পর বাসের চালক পালিয়ে যান। তবে সুপারভাইজার ও সহকার্রী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা হলেন পারভেজ (২৭), জাকির হোসেন (৩০), মনিরুজ্জামান (২১), উৎসব (১৭) ও মালা বেগম (২৫)।
আহত বাসযাত্রী নাটোরের কলেজছাত্র মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সেতু পার হওয়ার পরই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসের ওপর গিয়ে পড়ে। বিকট শব্দ হয়। আর বলতে পারব না। আমার সঙ্গে আমার ভাগ্নে ছিল। পরে দেখি আমরা হাসপাতালে।’
বগুড়ার বাড়িতে শোকের মাতম : মা-ছেলের মৃত্যুতে বগুড়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত রিফাতের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বারবার চিৎকার দিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন। আর রিফাতের বাবা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। বাড়িতে আসা স্বজনরা কোনোমতেই তাঁদের আহাজারি থামাতে পারছে না।
রিফাতদের বাসায় ভাড়া থাকা তাঁর দূরসম্পর্কের ভগ্নিপতি নূরুল মোমিন জানান, রিফাতরা দুই ভাই ও এক বোন। তাঁর ছোট ভাই রিয়াদ হাসান মানসিক ভারসাম্যহীন। এ কারণে রিফাতই ছিলেন পরিবারের ভরসা। তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার বগুড়ার বিএফ শাহীন স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের সংসারেও পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে সুমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
স্ত্রী-ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করতে করতে রিফাতের বাবা বলেন, ‘রিয়াদকে (মানসিক ভারসাম্যহীন) কে দেখবে?’
পরিবার থেকে জানানো হয়, লাশ বগুড়ায় পৌঁছার পর গ্রামের বাড়ি গাবতলী উপজেলার বাইগুনিতে নিয়ে আজ শুক্রবার দাফন করা হবে।
গাড়ি উল্টে বরযাত্রী নিহত : ঢাকার বর ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে কনের বাড়িতে যাওয়ার সময় রানীশংকৈল উপজেলায় মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে। মাইক্রোবাসটিতে ৯ জন বরযাত্রী ছিল।
হতাহতদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ধামরাই উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে বর নিয়াজুল ইসলাম হরিপুর উপজেলার খলড়া গ্রামে সলেমান আলীর বাড়িতে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন। পথে রানীশংকৈল উপজেলার রামপুর বেইলি ব্রিজসংলগ্ন সড়কে গরু-ছাগল সামনে পড়লে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় বর সামান্য ব্যথা পেলেও ধামরাইয়ের ছোট চন্দ্রাইল গ্রামের সফিকুলের স্ত্রী শামীমা আক্তার (৫০) নিহত হন।
গাজীপুরে ট্রাকচাপায় পথচারী নিহত : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ীতে ট্রাকচাপায় একরামুল হক (৩৫) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। একরামুল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মৌলভীবাজারে শিশু নিহত : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে অটোরিকশা খাদে পড়ে ইসরাত জাহান তায়বা (৬) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে পাঁচ যাত্রী। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে জুড়ী-ফুলতলা সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সাভারে পার্কিংয়ের সময় চালক নিহত : সাভারের আশুলিয়ায় পার্কিং করার সময় গর্ত দেখতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যান উল্টে চাপা পড়ে শাহাদাত হোসেন নামের এক চালক নিহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইলে এস কে এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সপোর্ট নামে পরিবহনের ডিপোতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ট্রাকচালক শাহাদাত হোসেন (২৪) কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মঘুয়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
সম্পর্কিত খবর

শাহজালালে প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে দুজন সঙ্গী প্রবেশের নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন সঙ্গী প্রবেশ করতে পারবেন—এমন নির্দেশনা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই নির্দেশনা আগামী রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে। বিমানবন্দর এলাকার ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ দুজন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় আসা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
যানজট ও নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপকে জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিমানবন্দর সূত্র বলছে, প্রয়োজনে এই নিয়ম আরো কড়াকড়ি করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ পরিচয়পত্র রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার মামাতো ভাই হিরা কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আমির হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই শেখ ওয়ালিদুর রহমান হিরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন হিরাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ রানা তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

দেড় দশকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসে’ নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ‘সন্ত্রাসী’ হামলা এবং তৎকালীন ‘সরকারের নির্দেশে’ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এবং মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই নির্দেশ দেন।
সাক্ষাতে আবরার ফাহাদের পরিবার দাবি জানায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকারের উদ্যোগ চান তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এ ঘটনার বিচার অবশ্যই শেষ হবে। গণ-অভ্যুত্থানের আগের ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের সংগঠনের হাতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোও তদন্তের আওতায় রয়েছে।
সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসম পানিবণ্টনের বিরুদ্ধেও সে কথা বলেছিল। আজও তার মা ছেলের জন্য কান্না করে।

হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজউকের প্লট
- রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান!
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৫ চালককে প্লট দেওয়া হয়।
গত বুধবার কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে এই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
দুদক সূত্র জানায়, রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে চার শ্রেণিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চিঠি দিলে রাজউক তা বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পে ১৩/এ ধারার আওতায় বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক, বিশেষ সহকারীর গাড়িচালক, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর চালক, একান্ত সচিব-১ ও ২-এর চালক, প্রটোকল অফিসারের চালক, মুখ্য
সচিবের চালক, চিফ ফটোগ্রাফারের চালকসহ প্রায় ১৫ জন চালককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তবে এসআরও এবং রাজউক বিধিতে অসামান্য অবদানের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া পাওয়া যায়নি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কোন কোন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রয়েছে তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।