<p>দিনগুলো ভালোই কাটছিল রাজধানীর উত্তরার মনজুয়ারা বেগম পারভীনের। ২০১৬ সালে হঠাৎ টের পান ডান পাশের স্তনে চাকার মতো কী যেন অনুভূত হচ্ছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারলেন তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপর শুরু হয় তাঁর জীবনের কঠিন লড়াই।</p> <p>মনজুয়ারার বড় মেয়ে তখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তেন। চিকিৎসার সময় মাকে দেখভাল করতে মাস সাতেক ভারতে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। মনজুয়ারা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দেশে ফিরে মেয়েটা আর পড়াশোনা চালাতে পারেনি। আসলে এখানে মানুষ আঘাত করতে ভালোবাসে। শারীরিকভাবে মরার আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মানসিকভাবে মেরে ফেলতে চায় সমাজ।’</p> <p>পাবনার মীমের গল্পটা অনেকটা একই রকম। এইচএসসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে তাঁর। বললেন, ‘সমাজ ক্যান্সার হওয়াকে অপরাধ মনে করে। চিকিৎসার সময় মানসিকভাবে এত হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে একসময় তো মাকেও মুখে যা আসত বলে ফেলতাম।’ অবশ্য এসবের বিপরীতে আশা-জাগানিয়া গল্পও আছে। দীর্ঘদিন প্রেমের পর ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছিলেন সাতক্ষীরার সাগর। ছয় বছরের দাম্পত্যজীবন। একদিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ১১টার সময় রিপোর্ট পেলেন তিনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ডাইনিং টেবিলে একটা কাচের গ্লাস। তার নিচে চিরকুট রাখা। তাতে লেখা—‘তোমার জন্য আমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারি না। ভালো থেকো, বিদায়।’ ক্যান্সারকে হার মানিয়ে সেই সাগর পরে আবার বিয়ে করেছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখন সুখের সংসার তাঁর।</p> <p>ক্যান্সার আক্রান্তদের একেকজনের গল্পটা একেক রকম। কাউকে দীর্ঘদিন ধরে লড়ে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ এখনো লড়ছে। এই মানুষগুলোকে মানসিকভাবে ভালো রাখার উদ্দেশ্যে ব্যতিক্রমী এক কর্মশালার আয়োজন করেছে ধানমণ্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়। শিরোনাম ‘রং রেখা বর্ণে ছন্দে-কাটবে দিন মঙ্গলালোকে’।</p> <p>আধুনিক শিল্প আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ। আগামী ২৩ জুন এই কর্মবীরের জন্মশতবর্ষ। সে উপলক্ষেই এমন প্রয়াস বলে জানালেন সফিউদ্দীন শিল্পালয়ের নির্বাহী পরিচালক নাহিদা শরমিন। ক্যান্সারযোদ্ধাদের নিয়ে দুই দিনের এই কর্মশালা পরিচালনা করছেন চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নান। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন ১৫ জন ক্যান্সারযোদ্ধা ও তাঁদের প্রিয়জনরা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, শিল্পী আইভী জামান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হাসান শাহরিয়ার কল্লোলসহ আরো অনেকে। বিকেলে ক্যান্সারযোদ্ধাদের সঙ্গে গল্প করতে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান।</p> <p>কর্মশালার মাধ্যমে মূলত এই ক্যান্সারযোদ্ধাদের অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে ছবি আঁকায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা তাঁদের মনের ভেতর বয়ে যাওয়া দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা কিংবা হতাশাকে রংতুলিতে ধরতে পারেন ক্যানভাসে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের আঁকা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।</p> <p>কর্মশালার পরিচালক শিল্পী আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার স্ত্রীও স্তন ক্যান্সারের রোগী। ফলে ক্যান্সার আক্রান্তদের লড়াইটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনেকে হতাশায় খুব ভেঙে পড়ে। তাদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে এ ধরনের উদ্যোগ দারুণ ফলপ্রসূ হবে।’</p> <p>কর্মশালায় এসেছিলেন নূর এ সাফী আহনাফ। দীর্ঘ ৯ বছর লড়াইয়ের পর কিছুদিন আগেই তিনি ক্লিনিক্যালি ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন।</p>