পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে, তা কেটে বাদ দেওয়াকেই বলা হয় খতনা বা মুসলমানি। মেডিক্যাল টার্মে একে বলে সারকামসিশন। মুসলিম জাতি ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও খতনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউনেটাল সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু
উপকারিতা
খতনা বা মুসলমানি করার কিছু উপকারী দিক রয়েছে।
যেমন—
সংক্রমণ থেকে রক্ষা : মুসলমানি করালে মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি কম হয়। কিছু যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
প্রদাহ প্রতিরোধ : ব্যালানাইটিস (গ্লান্সের প্রদাহ), ব্যালানোপোস্টাইটিস (গ্লান্স ও ফরস্কিনের প্রদাহ) প্রভৃতি প্রতিরোধ করে।
ফাইমোসিস : অনেক সময় পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া মূত্রনালিতে এমনভাবে লেগে থাকে যে প্রস্রাব ভালো মতো বের হতে পারে না।
তখন প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন বা কিডনিতে জটিলতা হতে পারে। মুসলমানি করালে ফাইমোসিস হয় না।
প্যারাফাইমোসিস : পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে শক্ত হয়ে গেলে ওই চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নড়াচড়া করা যায় না। তখন লিঙ্গের মাথা ফুলে যায়, রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
কিন্তু মুসলমানি করালে এই জটিলতা থেকে রক্ষা মেলে।
ক্যান্সার : পেনাইল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করে খতনা।
এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্যও যেকোনো ধর্মের পুরুষরা খতনা করিয়ে থাকেন।
কখন করা যাবে না
হাইপোস্পেডিয়াস ও ইপিস্পেডিয়াস : প্রস্রাবের ছিদ্র নিচের দিকে থাকলে বা হাইপোস্পেডিয়াস হলে এবং ছিদ্র ওপরের দিকে থাকলে বা ইপিস্পেডিয়াস হলে খতনা করানো যাবে না। ওই অবস্থায় খতনা করালে ছিদ্রটি যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
হিমোফিলিয়া : রক্তক্ষরণজনিত রোগ হিমোফিলিয়া হলে খতনা দেওয়া যাবে না। অনেকের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে এবং সে কারণে অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না।
কিছু ঝুঁকি
খতনা বা মুসলমানির ক্ষেত্রে অপারেশনের ঝুঁকি খুব কম (২-১০ ভাগ)। সাধারণত রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশনই হলো মূল ঝুঁকি। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের কারণে হাইপোস্পেডিয়াস, ইপিস্পেডিয়াস, গ্লান্স ইনজুরি ইত্যাদি হতে পারে।
পরামর্শ
> দুই থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর খতনা করানো ভালো।
> দক্ষ চিকিৎসক বা সার্জন দ্বারাই খতনা করান। দক্ষ অবেদনবিদ দ্বারা সম্পূর্ণ ব্যথাবিহীন এবং নিরাপদ অপারেশন সম্ভব।
> হাজাম বা অনভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে খতনা না করানোই ভালো। অনেক সময় অনভিজ্ঞতায় অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেললে সমস্যা তৈরি হয়। অনভিজ্ঞতায় লিঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেললেও মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়।
> মুসলমানি দেওয়ার পরও কোনো কোনো শিশুর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। এটা মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে বা মৃত্যুও ডেকে আনে। তাই খতনা করার আগে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা উচিত রক্ত পড়া বন্ধ হতে বিলম্ব হয় কি না। মামাতো বা খালাতো ভাইদের এ রকম সমস্যা আছে কি না তাও জানা দরকার।