রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশি-বিদেশি চাপে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নত হলেও ক্রেতাগোষ্ঠী চলে যাওয়ার পর কারখানাগুলো পরিদর্শনের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। চার হাজার পোশাক কারখানার ২২.৫ শতাংশ এখনো পরিদর্শনের বাইরে রয়ে গেছে। এ ছাড়া বিগত ২০২০ সালে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বেড়েছে।
গতকাল রবিবার আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি অব দ্য আরএমজি সেক্টর ডিউরিং দ্য পোস্ট-অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পিরিয়ড’ শীর্ষক ওই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এফইএস। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের প্রায় চার হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে সাড়ে ২২ শতাংশ এখনো কোনো ধরনের পরিদর্শনের বাইরে রয়ে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের গতি স্থবির হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ উদ্যোগ দলগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থায় নেওয়া না গেলে এই সংকট থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।
তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে পাঁচ হাজার ৮০০ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২২২টিই ঘটেছে পোশাক খাতে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে এক হাজার ৪৩৯, তৈরি পোশাক খাতবহির্ভূত কারখানায় ২৮০ ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে ৫৩৬টি।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিভিশন (বিএফএসসিডি), গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিলস এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও গবেষণা প্রতিবেদন থেকে গবেষণার এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ক্রেতাদের চাপে নয়; নিজেদের প্রয়োজনেই কারখানার নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে কমপ্লায়েন্স ও নিরাপত্তায় উন্নতি করব না, তা হতে পারে না।’
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগানো হয়নি। পোশাকের বাইরে রপ্তানিমুখী অন্যান্য শিল্প ও স্থানীয় শিল্পের নিরাপত্তায় নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৯০ লাখ কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় রয়েছে। এখনো প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে।’ প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে তাঁদের জনবলের ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।