বঙ্গোপসাগরে গত দুই দিনে দুই দফায় জেলেদের নৌকায় গণডাকাতির পর ২৬ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। গত শনিবার রাতে সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের কচিখালী এলাকায় এবং গতকাল রবিবার সকালে পক্ষীদিয়া এলাকায় গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। অপহৃত জেলেদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বরও দিয়ে গেছে জলদস্যুরা।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, শনিবার রাত ১২টার দিকে কচিখালী এলাকায় জাল ফেলে ট্রলারেই ঘুমিয়ে ছিল জেলেরা।
রাত দেড়টার দিকে সুন্দরবনকেন্দ্রিক একটি জলদস্যু বাহিনী জেলেদের নৌকার বহরে হামলা চালায়। এ সময় তারা জেলেদের ওপর নির্যাতন চালায় এবং মাছ, জাল, খুচরা যন্ত্রাংশসহ নগদ অর্থ লুট করে। একই সময় ছয় ট্রলার থেকে ছয় জেলেকে অপহরণ করে সুন্দরবনের গহিনে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আরো জানান, পরদিন গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের পক্ষিদীয়া এলাকায় জেলেদের নৌকায় হামলা চালিয়ে গণডাকাতি শেষে আরো ২০ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।
অপহরণের সময় নিজেদের 'ভাইভাই বাহিনী'র সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং অপহৃত জেলেদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিতে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নম্বরসহ একটি টোকেন দিয়ে যায় তারা।
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আরো জানান, তাৎক্ষণিকভাবে অপহৃত সব জেলের নাম জানা যায়নি। তবে ছগির মিয়া, রফিক হাওলাদার, আ. খালেক, দুলাল, কালাম মীর, লিটন, রফিক, জাহাঙ্গীর, লাল মিয়া, কবীর মিয়া, জাফর মিয়া ও ইউনুস মিয়া নামের কয়েক জেলের নাম জানা গেছে। তাদের সবার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
এদিকে ২৬ জেলে অপহরণের খবর পাওয়ার পর থেকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো। অপহৃত জেলে কালাম মীরের স্ত্রী ছালমা (২৩) জানান, একমাত্র ছেলেশিশু নিয়ে অভাবী সংসার তাঁদের। সাগরে ঠিক সময়ে মাছ না পড়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। এমন এক পরিস্থিতিতে তাঁর স্বামী কালাম মীরকে জলদস্যুরা ধরে নিয়ে গেছে। এখন তাঁর শিশুকে কী খাওয়াবেন, নিজেই বা কী খাবেন আর স্বামীকেই বা কী করে ছাড়িয়ে আনবেন_এ সবের কিছুই জানা নেই তাঁর। অপহৃত জেলেদের একাধিক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবার অবস্থা ছালমা বেগমের মতোই।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার এস এ রউফ জানান, জেলে অপহরণের বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।