টানা বর্ষণে খানাখন্দে ভরে গেছে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের বেশির ভাগ অংশ। বিশেষ করে গোদাগাড়ী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ দেখলে কে বলবে এটা মহাসড়ক?
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। ব্যস্ত এই মহাসড়কটির বেশির ভাগ স্থানে বড় বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা পার হতেই খানাখন্দ ডিঙ্গানো শুরু হয়, যা চলতে থাকে একেবারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত।
এর মধ্যে গোদাগাড়ী গোলচত্বর থেকে শেষের প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ পার হওয়া সত্যি কষ্টকর। এই অংশে কোথাও কোথাও বিশালাকার গর্ত, আবার কোথাও এবড়োখেবড়ো, বিটুমিন উঠে গেছে। এই অংশ পার হতে লাগে অন্তত ৩০ মিনিট।
গোদাগাড়ীর গোলচত্বরে প্রায় ৫০ ফিট এলাকাজুড়ে বিশাল বিশাল গর্ত।
একই অবস্থা গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর বাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাতনাবাদ বাজার, বালিয়াঘাটা বাজার, ছয়ঘাটি, রাজাবাড়ীহাট, রেলগেট, সিঅ্যান্ডবি, মহিষালবাড়ী বাজারসহ অন্তত ১৫টি স্থানে। এসব স্থানের কোনো কোনো জায়গায় কাদা পানিতে সড়ক একাকার হয়ে আছে। আবার কোনো কোনো স্থান মিশে গেছে যেন মাটির সঙ্গে। বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুতগতির যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চললেও দুর্ঘটনা এড়াতে পারছে না। গত রবিবার সকালে বাসুদেবপুর এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী গেটলক সার্ভিস নামের একটি বাস গর্তে পড়ে পেছনের এক্সেল ভেঙে অচল হয়ে যায়। গতকাল বুধবারও সেখানে পড়েছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
ন্যাশনাল ট্রাভেলস নামের একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাসচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার আগে রাস্তা যখন ভাল ছিল, তখন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগত ৫০ মিনিট। কিন্তু এখন দেড় ঘণ্টার আগে যাওয়া যায় না।
সোনামসজিদ থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক জমসেদ আলী বলেন, 'সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়ক ভালোই আছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসামাত্র শুরু হচ্ছে ভাঙনের রাস্তা। এত বড় বড় ভাঙন যে ট্রাক চালাতেই মনের মাঝে ভয় কাজ করছে-এই বুঝি ট্রাক উল্টে যাবে।'
জানা গেছে, এই মহাসড়কটি দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী শত শত যানবাহনের যাতায়াত।
এ অবস্থায় মহাসড়কের গর্তগুলোয় ইট ও বালু ফেলে দায়সারা গোছের সংস্কার করা হয়েছে কোথাও কোথাও। আবার কোথাও কার্পেটিং করেও সংস্কার হচ্ছে। তবে নিম্নমানের কাজের কারণে একদিকে কাজ হচ্ছে, আরেকদিকে ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কোনোই কাজে আসছে না ওই সংস্কারকাজ। গর্ত ভরাটের জন্য বড় ইট ফেলার কারণে হালকা যানবাহনের জন্য সড়ক হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ।
জানতে চাইলে সওজের রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বর্ষাকাল না কাটলে কোনোমতেই মহাসড়কটির স্থায়ী সংস্কার সম্ভব নয়। তা ছাড়া সংস্কারের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা-ও নেই। তার পরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আপতকালীন সংস্কারের জন্য।' আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাস্তাটি অনেকটাই ভালো অবস্থায় ফিরে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ষার আগেই এই মহাসড়ক সংস্কারের কাজ করে সওজ। কিন্তু বর্ষা আসতেই আবার বিশাল বিশাল গর্তে ভরে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই ওই সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষার দাপটে সেগুলো আবার ভেঙে গেছে। আমাদের কিছু করার নাই।'
তাহলে তুলনামূলক অন্য স্থানগুলোয় কম ভেঙেছে কেন জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, 'যেখানে সংস্কার হয়েছে, সেখানে একটু ভাঙার পরে গোটাটাই ভেঙে গেছে।'