ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
পবিত্র কোরআনের আলো । ধারাবাহিক

‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের ব্যবহার ও অপব্যবহার

অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের ব্যবহার ও অপব্যবহার

২৩. তুমি কখনো কোনো বিষয়ে এ কথা বোলো না যে আমি এটি আগামীকাল করব—

২৪. ‘ইনশাআল্লাহ’ কথাটি না বলে। যদি (কথাটি বলতে) ভুলে যাও, তাহলে (যখনই তোমার স্মরণে আসবে) তোমার রবকে স্মরণ কোরো এবং বোলো, সম্ভবত আমার রব আমাকে এর (গুহাবাসীর বিবরণ) চেয়ে সত্যের নিকটতর পথনির্দেশ করবেন। [সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৩-২৪ (প্রথম পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে মহানবী (সা.)-এর প্রতি বিশেষ নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে। আয়াতে ভবিষ্যৎসম্পর্কিত কোনো কাজ ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলে করতে নিষেধ করা হয়েছে।

যদিও প্রাথমিকভাবে এ নির্দেশনা মহানবী (সা.)-এর জন্য ছিল, কিন্তু এই নির্দেশনা সব মুসলমানের জন্য।

মুমিন তার জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ করবে—এটাই স্বাভাবিক। সে নির্ভর করে একমাত্র আল্লাহর ওপর, নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও উপায়-উপকরণের ওপর নয়। তাই মুমিন ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে।

‘ইনশাআল্লাহ’ অর্থ ‘যদি আল্লাহ চান’ (তাহলে আমি কাজটি করব)।

কেউ কেউ বলে থাকে ‘ইনশাআল্লাহ’ ভালো আছি। এটি এ বাক্যের অশুদ্ধ ব্যবহার। কেননা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে হয় ভবিষ্যতে হবে, ঘটবে বা করবে—এমন বিষয়ে।

কথা ও কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ ব্যবহার ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্কৃতি, যা আল্লাহ কোরআনে শিখিয়েছেন।

ঈমানদার ব্যক্তিরা যেসব শব্দ অনেক বেশি ব্যবহার করে, তার একটি হলো ‘ইনশাআল্লাহ’। এই পরিভাষার ব্যবহার দেখা যায় আগের নবীদের জবানেও। পবিত্র কোরআন থেকে জানা যায়, কয়েকজন নবী যেমন—ইয়াকুব, শোয়াইব, খিজির ও ইসমাইল (আ.) কথা বলার সময় ‘ইনশাআল্লাহ’ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে দুটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো—এক. মুসা (আ.) সৃষ্টিজগতের গুপ্ত রহস্যসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য খিজির (আ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করার দরখাস্ত করেছিলেন।

জবাবে খিজির (আ.) বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমার সঙ্গে থাকার ধৈর্য আপনার নেই।’ এ কথার জবাবে মুসা (আ.) বলেছেন, ‘ইনশাআল্লাহ’ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। (সুরা কাহফ, আয়াত : ৬৭-৬৯)

দুই. ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক একটি ঘটনা সবার জানা। যখন ইবরাহিম (আ.) তাঁকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবেহ করছি। এবার চিন্তা করে বলো, তোমার অভিমত কী?’ এমন ভয়াবহ স্বপ্নের কথা শুনেও ইসমাঈল (আ.) বলেন, “আব্বাজান! আপনি সেটাই করুন। ‘ইনশাআল্লাহ’ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন।” (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০২)

যেখানে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা নিষিদ্ধ

বৈধ কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা ফজিলতপূর্ণ হলেও অবৈধ কাজ করার আশা ব্যক্ত করে ‘ইনশাআল্লাহ’ যোগ করার সুযোগ নেই। এটি হারাম। যেমন—চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ইচ্ছা করে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা সম্পূর্ণ হারাম। আবার কোনো কোনো বৈধ কাজেও ‘ইনশাআল্লাহ’ যোগ করা নিষিদ্ধ। যেমন—এমন ভাষায় দোয়া করা : ‘হে আল্লাহ, তুমি চাইলে আমাকে অমুক জিনিসটি দান করো। তোমার মর্জি হলে আমাকে আরোগ্য দান করো। তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো ইত্যাদি।’ কেননা এর মধ্যে এক ধরনের অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রতিভাত হয়। অথচ মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দোয়ায় এভাবে না বলে—হে আল্লাহ, তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো। তুমি চাইলে আমার প্রতি দয়া করো। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করো। কেননা আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। তাঁকে বাধ্য করার মতো কেউ নেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ