৩৬. আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো ও ‘তাগুত’ বর্জন করো। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মানুষকে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং কিছুসংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, মিথ্যা আরোপকারীদের কী পরিণতি হয়েছিল। [সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬ (তৃতীয় পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ মানুষের হেদায়েতের জন্য প্রত্যেক জাতির কাছেই প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে দুটি নির্দেশনা ছিল—এক. মহান আল্লাহর ইবাদত করা। দুই. ‘তাগুত’ বর্জন। পবিত্র কোরআনে মোট আট স্থানে ‘তাগুত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। একজন মানুষ মুসলমান হওয়ার প্রথম ধাপ হলো ঈমান আনা। কিন্তু ঈমান আনার আগে তার জন্য জরুরি হলো ‘তাগুত’ বর্জন করা। এদিকে ইঙ্গিত করে প্রথমে ‘তাগুত’ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে, পরে ঈমান আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, অবশ্যই সে দৃঢ়তর রজ্জু আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
‘তাগুত’ শব্দের মূল অর্থ হলো সীমা লঙ্ঘন।
পরিভাষায়, মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্য যা কিছু প্রভু ও উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে, তা-ই ‘তাগুত’। প্রতিটি যুগ, জায়গা ও সমাজে ‘তাগুত’ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে আসে। আসে নতুন রং, ভাষা ও পদ্ধতিতে। ‘তাগুতে’র মূল কাজ হলো, মানুষকে ঈমানের পথ থেকে কুফরের দিকে নিয়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে, “যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হচ্ছে ‘তাগুত’। এরা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়...।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৭)
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব (রহ.) তাঁর ‘মাজমুআহ আততাওহিদ’, পৃষ্ঠা ১৪ ও ১৫-তে লিখেছেন,
‘তাগুত’ প্রধানত পাঁচ প্রকার। এক. শয়তান। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম, আমি কি তোমাদের নির্দেশ দিইনি যে তোমরা শয়তানের দাসত্ব কোরো না...?’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬০)
দুই. আল্লাহর বিধান পরিহারকারী অত্যাচারী শাসক। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যারা দাবি করে যে তারা ঈমান এনেছে ওই বিষয়ে, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার প্রতি। অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা (তাগুত) প্রত্যাখ্যান করার জন্য...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬০)
তিন. যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘...আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা ফয়সালা করে না তারাই কাফির।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৪৪)
চার. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইলমে গায়েব বা অদৃশ্যের সর্বব্যাপ্ত জ্ঞান সাব্যস্ত করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অদৃশ্যের চাবিগুলো তাঁর কাছেই রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত...।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)
পাঁচ. আল্লাহর পরিবর্তে যার উপাসনা করা হয় এবং সে ওই উপাসনায় সন্তুষ্ট থাকে। ইরশাদ হয়েছে, “তাদের মধ্যে যে বলে, ‘তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই ইলাহ (উপাস্য)’, তাকে আমি প্রতিফল দেব জাহান্নাম...।” (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৯)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ