ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
পবিত্র কোরআনের আলো

নতুন মসজিদ নির্মাণের মাসায়েল

notdefined
notdefined
শেয়ার
নতুন মসজিদ নির্মাণের মাসায়েল

১০৮. তুমি এতে (মুনাফিকদের নির্মিত ইবাদতখানায়) কখনো দাঁড়িয়ো না (নামাজ পড়ো না)। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর, সেটাই তোমার নামাজের জন্য অধিক যোগ্য। [সুরা  তাওবা, আয়াত : ১০৮ (প্রথমাংশ)]

তাফসির : আগের আয়াতে মুসলমানদের মসজিদবিমুখ করার জন্য মুনাফিকদের ইবাদতখানা নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা ছিল। এই আয়াতে সে ইবাদতখানায় নামাজ আদায় বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে মসজিদে জেরার তথা মুনাফিকদের ইবাদতখানায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন এবং মসজিদে কোবায় নামাজ আদায় করতে উৎসাহী করেছেন। মসজিদে কোবা কী? নবী করিম (সা.) হিজরত করে মদিনায় পদার্পণ করার প্রাক্কালে কোবা নামক স্থানে পৌঁছে যে মসজিদ নির্মাণ করেছেন, তা-ই মসজিদে কোবা। মসজিদে কোবার বিশেষত্ব কী? এই আয়াত থেকে জানা যায়, মসজিদে কোবার দুটি বিশেষত্ব রয়েছে—এক. এটি নির্মিত হয়েছে তাকওয়া ও খোদাভীতির ওপর ভিত্তি করে। দুই. সেখানে এমন লোক আছেন, যাঁরা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।
তা ছাড়া এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ।

এক মসজিদের কাছে অন্য মসজিদ নির্মাণ : মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, বর্তমান যুগে কোনো মসজিদের কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে এবং এর পেছনে যদি মুসলমানদের বিভক্ত করা ও আগের মসজিদে মুসল্লি হ্রাস করার অসৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে এতে মসজিদ নির্মাতার সওয়াব তো হবেই না, বরং বিভেদ সৃষ্টির কারণে সে গুনাহগার হবে। তা সত্ত্বেও শরিয়ত মতে, সে জায়গাকে মসজিদ বলা হবে এবং মসজিদের বিধিবিধান এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। একে ধ্বংস করা কিংবা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।

(মা’আরেফুল কোরআন)

একটি স্থান কখন মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত হয় : যখন কোনো স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়, মৌখিক বা লিখিতভাবে ওয়াক্ফ করা হয়, নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়, আজান ও ইকামতের ব্যবস্থা করা হয় এবং ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ওই মসজিদকে রাস্তা ইত্যাদি থেকে পৃথক করা হয়, তখন সর্বসম্মতিক্রমে এটি মসজিদ বলে বিবেচিত হয়; যদি ওয়াক্ফনামা লিপিবদ্ধ করা না-ও হয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৩৯১)

এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদের দূরত্ব : যদি কোনো মসজিদে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হয়, তাহলে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা হলো, এতটুকু দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করবে, যাতে এক ইমামের কিরাতের সঙ্গে অন্য মসজিদের ইমামের কিরাত সাংঘর্ষিক না হয়। তবে উভয় মসজিদের মাঝখানে যদি কেবল একটি দেয়াল থাকে, তবু উভয় স্থানে পৃথক জামাত আদায় করা বৈধ। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪১০)

মসজিদে জেরার বা জেদবশত মসজিদ নির্মাণ : মসজিদে জেরারের সংজ্ঞা হলো, যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে লোক দেখানোর জন্য, লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা অপবিত্র ও অবৈধ অর্থে যেটি নির্মাণ করা হয়েছে, শরিয়ত মতে তা মসজিদে জেরারের অন্তর্ভুক্ত (মাদারেকুত তানজিল : ২/১১১)।

তবে হ্যাঁ, স্বাভাবিক নিয়ম মেনে, ওয়াক্ফ করে এক মসজিদের পাশে অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে সেখানে নামাজ আদায় বৈধ। (তানবিরুল আবসার : ৪/৩৫১-৩৫২) স্মরণ রাখতে হবে, শরিয়তের শর্ত মেনে যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, কঠিন সমস্যা (মুসল্লির সংকুলান না হওয়া, মসজিদ অনেক পুরনো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) ছাড়া তা ভেঙে ফেলা জায়েজ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো মসজিদের সংস্কার করলে কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৫৮) মতানৈক্য, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্য এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য পৃথক মসজিদ নির্মাণ দোষের কিছু নয়। এমন মসজিদকে মসজিদে জেরার আখ্যা দেওয়া অনুচিত। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪৩২)

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ