ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ফিরে দেখা ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান

  • আবদুল মান্নান
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
ফিরে দেখা ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু ব্যক্তির নাম, সময়কাল, ঘটনাপঞ্জি সময়ের বিচারে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে। এসবের মধ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও তাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অন্যতম। এসব ঘটনা বা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। আর আছেন এ দেশের কালজয়ী ছাত্রনেতারা।

এসব সময়কাল বা ঘটনা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে সহায়তা করেছে অথবা দেশকে তার স্বাধীনতার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে গেছে। তবে বলতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; আর সেই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এই আন্দোলনের সূচনা করেছিল এই দেশের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো, যার নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগঠন বা ডাকসু। তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
এই পরিষদে ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ আর ছাত্র ইউনিয়নের উভয় গ্রুপ (মেনন-মতিয়া)। পরবর্তীকালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সব কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাতে যোগ দেয় মোনায়েম খানের পেটোয়া ছাত্রসংগঠন থেকে বের হয়ে আসা মাহবুবুল হক দোলন ও নাজিম কামরান চৌধুরীর নেতৃত্বে এনএসএফের একটি অংশ। উল্লেখ্য, এই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন ছাত্রলীগের তোফায়েল আহমেদ (ইকবাল হল, পরবর্তীকালে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ও এনএসএফের নাজিম কামরান চৌধুরী (জিন্নাহ হল, পরবর্তীকালে সূর্য সেন হল)। বলে রাখা ভালো, সে সময় ডাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হতো পরোক্ষ ভোটে আর ছাত্রাবাসওয়ারি রোটেশনের ভিত্তিতে।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পুরোভাগে ছিলেন এ দেশের ছাত্রনেতারা, যাঁদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ ও নাজিম কামরান চৌধুরী ছাড়াও ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শামসুদ্দোহা, সাইফুদ্দীন আহমেদ মানিক, মোস্তাফা জামাল হায়দার, খালেদ মোহাম্মদ আলী, আবদুর রউফ, মাহবুব উল্লাহ, মাহবুবুল হক দোলন প্রমুখ (কারো নাম বাদ পড়লে তা অনিচ্ছাকৃত)। তবে বলে রাখা ভালো, সিরাজুল আলম খানের আচরণ এখনকার মতো তখনো ছিল বিভ্রান্তিমূলক ও রহস্যাবৃত। ছাত্রনেতারা গঠন করেছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। তাঁদের বাইরে ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে আর যে ছাত্রনেতারা যুক্ত থেকেছেন তাঁদের মধ্যে নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরী অন্যতম। ওই মাপের ছাত্রনেতা বাংলাদেশে আর জন্মগ্রহণ করেননি।
ভবিষ্যতে করবে তেমন আলামত এখন আর দেখা যায় না। কেমন ছিল সে সময়ের ছাত্রনেতৃত্ব তা বর্তমান সময়ের ছাত্রনেতারা কল্পনাও করতে পারবেন না। এই সময় বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা জেলে ছিলেন। একমাত্র উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নেতা, যিনি মুক্ত ছিলেন তিনি হচ্ছেন মওলানা ভাসানী। তাঁকেও মাঝেমধ্যে আটক করা হতো। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল মূলত আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলন হিসেবে, যেমনটি শুরুতে বলেছি। শুরুতে এই আন্দোলনে পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্ররাও শামিল ছিল। কিন্তু বাঙালি ছাত্রদের মতো তাদের বড় মাপের কোনো ছাত্রনেতা না থাকার কারণে তারা পুরো সময় এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকতে পারেনি। সুতরাং ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন ও পরবর্তীকালে গণ-অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিল এ দেশের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ