৬৫. বলে দাও, তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা তলদেশ থেকে শাস্তি প্রেরণ করতে, তোমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে ও এক দলকে অন্য দলের নিপীড়ন আস্বাদন করাতে তিনিই সক্ষম। দেখো, আমি কিভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিদর্শনাবলি বর্ণনা করি- যাতে তারা বুঝে নেয়। ৬৬. তোমার সম্প্রদায় একে মিথ্যা বলছে, অথচ তা সত্য। বলো, আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নই।
পবিত্র কোরআনের আলো
বিভক্তি ও দলাদলি আল্লাহর এক ধরনের আজাব

তাফসির : আগের আয়াতসমূহে আল্লাহর নজিরবিহীন শক্তি-সামর্থ্যের বিষয়ে বলা হয়েছিল যে প্রত্যেক মানুষের বিপদাপদ তিনিই দূর করেন এবং বিপদের সময় যে তাঁকে সকাতরে ডাকে, সে তাঁর সাহায্য স্বচক্ষে দেখতে পায়। আলোচ্য আয়াতসমূহে এর উল্টো দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ যেভাবে আজাব-গজব, বিপদ-আপদ দূর করতে পারেন, ঠিক তেমনি তিনি যে কাউকে শাস্তি দেওয়া ও বিপদাপদের সম্মুখীন করাও তাঁর পক্ষে খুবই সহজ।
আল্লাহর শাস্তির তিনটি ধরন : প্রথম আয়াতে তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে : এক. যা ওপর দিক থেকে আসে। দুই. যা নিচের দিক থেকে আসে। তিন. যা নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের আকারে সৃষ্টি হয়।
তাফসিরবিদরা বলেন, ওপর ও নিচের দিক থেকে আজাব আসার বহু দৃষ্টান্ত বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে রয়েছে।
ওপর ও নিচের আজাবের ব্যাখ্যা : শ্রেষ্ঠতম কোরআন ব্যাখ্যাদাতা হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, 'ওপরের আজাবের অর্থ অত্যাচারী বাদশাহ ও নির্দয় শাসকবর্গ এবং নিচের আজাবের অর্থ নিজ চাকর, নওফর ও অধীনস্থ কর্মচারীদের বিশ্বাসঘাতক, কর্তব্যে অবহেলাকারী ও আত্মসাৎকারী হওয়া।
অত্যাচারী শাসকও সর্বসাধারণের পাপের শাস্তি : রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের (ভালো-মন্দ) কাজকর্মের ন্যায় শাসকবর্গ তোমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে'- (মিশকাত)। অর্থাৎ তোমরা সৎ ও আল্লাহর বাধ্য হলে তোমাদের শাসকবর্গও দয়ালু ও সুবিচারক হবে। পক্ষান্তরে তোমরা মন্দ ও কুকর্মী হলে তোমাদের শাসকবর্গও নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হবে। এ বিষয়ে আরো বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কাজেই অত্যাচারী শাসকও আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের পাপের শাস্তিস্বরূপ।
বিভক্তি ও অনৈক্য আল্লাহর আজাব : আলোচ্য প্রথম আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, 'এক ধরনের আজাব এই যে তোমরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে যাবে এবং এক দল অন্য দলের জন্য আজাবে পরিণত হবে।' এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা আমার পরে আবার কাফির হয়ে যেয়ো না যে একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দেবে'- (মাজহারি)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, "রাসুল (সা.) বলেছেন, 'অদূর ভবিষ্যতে এই উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তার মধ্যে একটি দল ছাড়া সব দলের লোক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা একে অন্যের সঙ্গে হত্যাসহ বিভিন্ন গর্হিত কাজে লিপ্ত হবে'।" ইসলামে ঐক্যের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দলবদ্ধভাবে শক্ত করে ধারণ করো আর বিভক্ত হয়ে পড়ো না'- (সুরা আলে ইমরান : ১০৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'যারা বিভক্ত হয়ে গেছে ও মতবিরোধ করেছে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না'- (সুরা আলে ইমরান : ১০৫)।
(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)
সম্পর্কিত খবর