সংশপ্তক, জাগ্রত বাংলা, মৃত্যুঞ্জয়ী, বিজয় কেতন কিংবা স্বাধীনতা চিরন্তন—বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এমন বহু ভাস্কর্যের স্রষ্টা হামিদুজ্জামান খান আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৭৯ বছর বয়সী এই ভাস্কর ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে আইসিইউতে এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের ইন্তেকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক

হামিদুজ্জামানের মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গতকাল বিকেল ৩টায় নেওয়া হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে রাতেই মরদেহ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের সহশ্রামে। আজ সোমবার দুপুরে সেখানে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ গ্রামেই দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (এখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
বিমূর্ত এবং নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন হামিদুজ্জামান খান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ছেড়েছিলেন হামিদুজ্জামান খান। যাওয়ার পথে ২৭ মার্চ ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় তিনি অসংখ্য মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানুষের অভাবনীয় দুর্দশা তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তাঁর বেশির ভাগ ভাস্কর্যের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি ‘জাগ্রত চৌরঙ্গি’ নির্মাণে কাজ করেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘শান্তির পায়রা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘ফ্রিডম’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ এবং মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।
সম্পর্কিত খবর

রাজপথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান


‘৩৬ জুলাই উদযাপন অনুষ্ঠানমালা’ উপলক্ষে মঞ্চ তৈরি


শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক
সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জামায়াতের
বিশেষ প্রতিনিধি

জামায়াতে ইসলামী দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে এক বৈঠকে এ দাবি তুলে ধরে দলটি। জামায়াতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘জাতি গঠনের মূল ভিত্তি যদি শিক্ষা হয়, তবে শিক্ষকই হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। তাই আমাদের প্রথম দাবি সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের দ্রুত জাতীয়করণ করতে হবে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা এবং সিলেবাস প্রণয়ন কমিটিতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-প্রতিনিধি রাখার দাবি জানানো হয়।
প্রতিনিধিদলে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং জামায়াত-সমর্থিত আদর্শ শিক্ষক ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ
সজীবের দায় স্বীকার রিমান্ডে আকরাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় প্রবাসী সজীব মিয়া আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একই সঙ্গে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব রহমানের আদালত অপর আসামি ওয়াসিম আকরামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৫ জুলাই অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের ইনটেলিজেন্স শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তাঁরা মলয়েশিয়ায় অবস্থান করে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিদের মালয়েশিয়ান পুলিশ পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গোয়েন্দা তথ্য ও অপরাপর তথ্যের আলোকে জানা গেছে, আসামিরা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, জনসাধারণের কোনো অংশে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে যেকোনো সময় বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার শঙ্কা রয়েছে।