“আমি প্রায়ই আলভীকে বলতাম, তুমি পড়াশোনা না করলে বড় হতে পারবে না। আমার বোনের ছেলেরা অনেক বড় বড় জায়গায় আছে। তখন আলভী বলত, ‘আমি ওদের চেয়েও বড় কিছু হব। আমাকে পুরো দেশের মানুষ দেখবে এবং চিনবে।
গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ
জীবন দিয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছে আলভী
- তৌফিক হাসান

অশ্রুভরা চোখে জড়ানো কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে কথাগুলো বলছিলেন শহীদ আলভীর মা সালমা বেগম।
শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভী জন্মগ্রহণ করেন ২০০৯ সালে।
সেই থেকে এখনো দিনশেষে সন্ধ্যা নামলে আলভীর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন মা সালমা বেগম। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এভাবে কাটে তাঁর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা নামলে চেয়ে থাকি—এই বুঝি আমার সন্তান ঘরে ফিরে এসেছে। যখন রাত ১০টা বেজে যায় তখন বুঝতে পারি, আলভী আর ফিরে আসবে না। ও আর নেই!’
দিনের বেলা মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে যখন স্কুলে যান, সালমা বেগম চারদিকে খুঁজে বেড়ান আলভীকে।
মা সালমা বেগমের মতো দীর্ঘদিন বাবা ডাক না শুনে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসানের বুকটাও খাঁ খাঁ করে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘প্রতিমুহূর্তে ছেলের কথা মনে পড়ে। আগে আমি বাসায় ঢুকে প্রথমেই আলভীর রুমে যেতাম। এখন ওই রুমটা ফাঁকা। এখন আর ওই রুমে যেতে সাহস পাই না। আগে বাসায় পৌঁছেই শুরুতে আলভীর খবর নিতাম, ও বাসায় এসেছে কি না, খাওয়াদাওয়া করেছে কি না, ঠিকভাবে লেখাপড়া করছে কি না! প্রায় এক বছর হয়ে গেল আমার সন্তান আমাকে আর বাবা বলে ডাকে না। এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না!’
শহীদ আলভী খুব নরম স্বভাবের ছিলেন জানিয়ে তাঁর বাবা আরো বলেন, ‘আলভী খুব ভদ্র ও নরম স্বভাবের ছিল। ওকে যখন যেটা বলতাম, সেটাই করত। কখনো ভুলত্রুটি হলে দ্রুত বলত, আর কখনো হবে না, আর কখনো করব না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলভী কোনো দিন কারো সঙ্গে কোনো ধরনের ঝগড়াঝাঁটি করেনি।’
আলভীর শহীদ হওয়ার দিনের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আবুল হাসান বলেন, ‘আলভী গত বছর আগস্টের ৪ তারিখে মিরপুর ১০ নম্বরে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পৌনে ৬টার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়। ওর লাশ আমাদের বাসায় পৌঁছায় ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাসায় এসে দেখি, আলভী বাসায় নেই। ওর মাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, হুজুর তো সাড়ে ৫টায় পড়াতে আসেন। ও তার আগেই চলে আসবে। তো, হুজুর এলো, আমার মেয়ে পড়তে বসল; কিন্তু আলভী আর এলো না। তখন আমার মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়। আমি বারান্দায় পায়চারি করতে থাকি। ওর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কাউকে পাওয়া গেল না। মাগরিবের আজানের সময় অনেকগুলো কণ্ঠের আওয়াজ শুনি। আমি দৌড়ে আবার বারান্দায় যাই। ওপর থেকে দেখি, একটি অটোরিকশায় আলভী শুয়ে আছে। সঙ্গে আরো পাঁচ-ছয়জন। আমি দৌড়ে নিচে নামি। দেখি, আমার ছেলের বুকের দুই পাশে ব্যান্ডেজ করা। বুঝতে পারি না আমার ছেলের কী হয়েছে। পরে আমি ওদের জিজ্ঞেস করি, কোন হাসপাতালে আলভীকে নিয়ে গিয়েছিল? ওরা জানায়, আজমল হাসপাতালে। জিজ্ঞেস করি, ডাক্তার কী বলেছে? ওরা বলল, আলভী আর নেই!’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল হাসান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার। ভেবেছিলাম এই সরকারের কাছে শহীদ পরিবারের সদস্যরা সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাবে। আজ একটি বছর শেষ হতে চলল, কিন্তু আমার ছেলে হত্যার বিচারের ন্যূনতম কিছু পাইনি। বিচার পাওয়ার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হয়! এই সরকারের প্রথম কাজ ছিল শহীদদের হত্যার বিচারের অগ্রগতি দেখানো। কিন্তু বাস্তবে কেউ আমাদের কথা ভাবে না। আমরা সরকারের কাছে কিছু চাইনি; শুধু বিচার চেয়েছিলাম। শহীদ পরিবার যদি বিচার না পায় তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না।’
শহীদ আলভীর মা সালমা বেগম বলেন, ‘তারা কিছুই করছে না। শুধু সান্ত্বনার বাণী শোনায়। এখন আর কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না।’
সম্পর্কিত খবর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে লাল কার্ড সমাবেশ


মুরাদনগরে আসিফ মাহমুদের সমর্থকদের ওপর হামলা সাংবাদিকসহ আহত ২০
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি

কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বের করা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। এতে ছয় সাংবাদিকসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সদরের আল্লাহ চত্বরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
আহত ইউপি সদস্য মো. শেখর জানান, ‘আমরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আল্লাহ চত্বরে এসে সমাবেশ শুরু করার পরপরই সমাবেশ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ সময় আমাকে ব্যাপক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়।’
মিছিল নিয়ে আসা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মজিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, ‘মিছিল নিয়ে এসে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের লোকজন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে ওমর আলী নামের যুবদলকর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মুরাদনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কর্মকর্তা আমিন কাদের খান বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কর্মী-সমর্থকরা আগেই আমাদের কাছ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের লিখিত অনুমতি নিয়েছেন। তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছিলেন, এ সময় পাশে অবস্থানকৃত কিছু লোক বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এর পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করে। এতে কিছু লোক আহত হয়েছে। উপজেলা সদরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে।

রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলা
গ্রেপ্তার ৫ জনই নীলফামারীর, আজ রিমান্ড শুনানি
রংপুর অফিস ও গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের রংপুর আমলি আদালতে (গঙ্গাচড়া) শুনানি শেষে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ওই পাঁচজনই ঘটনাস্থলের পাশে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে ওই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন দক্ষিণ সিংগেরগাড়ি গ্রামের লাভলু মিয়ার ছেলে ইয়াছিন আলী (২৫), একই গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২), মাগুড়া ধনিপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে স্বাধীন মিয়া ( ২৮), দক্ষিণ চাঁদখানা মাঝপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৮) এবং উত্তর সিংগেরগাড়ি পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত বাবুল খানের ছেলে এম এম আতিকুর রহমান খান।
আদালত পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল রংপুর আমলি আদালতের (গঙ্গাচড়া) বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় শুনানি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল এমরান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে আসামিদের রংপুর সদর কোর্টে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, রঞ্জন রায় নামের এক কিশোর তার ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট করে।
অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে রঞ্জন রায়কে আটক করে পুলিশ। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

জামায়াত আমিরের হৃদযন্ত্রে ৩টি গুরুতর ব্লক জরুরি বাইপাসের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের হৃদযন্ত্রে তিনটি গুরুতর ব্লক ধরা পড়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, সে জন্য জরুরি বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমিরের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় সমাবেশে বক্তৃতা করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মঞ্চেই পড়ে যান ডা. শফিকুর রহমান। এর পর থেকে তিনি চিকিৎসকদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
চিকিৎসকরা বাইপাস সার্জারির পাশাপাশি বিদেশে চিকিৎসার কথাও বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের চিকিৎসকদের ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
এই বাইপাস সার্জারি কবে কোথায় এবং কার তত্ত্বাবধানে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই। এ বিষয়ে পারিবারিক ও দলীয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
ডা. শফিকুর রহমান এবং তাঁর পরিবার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, যেন মহান আল্লাহ তাঁকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন, তিনি যেন আবারও দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।