জেল খাটতে কেমন লাগে? এই অনুভূতি নেওয়ার একটা সুযোগ এসে যাচ্ছে। তবে এমনি এমনি নয়, টাকা দিতে হবে। টাকা দিয়ে জেল খাটার এই সুযোগ করা হচ্ছে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। প্রকল্পের আকর্ষণীয় অংশ সি জোনের ‘ফিল দ্য জেল’।
টাকা দিয়ে জেল খাটার সুযোগ
জহিরুল ইসলাম

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এই উন্নয়নকাজ চলছে। প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের অধীনে পুরনো কারাগারকে এ, বি ও সি তিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বি জোনের কাজ শেষ করেছে রূপায়ণ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বাকি দুই জোনের কাজও এগিয়ে চলেছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুর রব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বি জোন তথা বাজার জোনের কাজ শেষের দিকে। আশা করছি, এই অংশ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা চালু করতে পারব। সি জোন হচ্ছে কারাগারের জাদুঘর। এ ধরনের জাদুঘর বিশ্বে খুব কম। আমাদের এই কারাগার নিয়ে গবেষণার বিষয় রয়েছে।
বি জোনের কাজ নিয়ে রূপায়ণ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ডিরেক্টর অপারেশনস লে. কর্নেল (অব.) কবির উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব কাজ শেষ। এখন শুধু চূড়ান্তভাবে দেখে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া। নির্দিষ্ট সময়ের এক দিনও দেরি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের কাজের সময় রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার বলেছিলেন, এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছি, অংশ হতে যাচ্ছি। তাই বুঝিয়ে দেওয়ার সময় মান নিয়ে কোনো রকম ছাড় দেওয়া যাবে না। মুনাফা বা ক্ষতির দিকে আমরা তাকাইনি। বিদেশ থেকে অনেক নির্মাণসামগ্রী আনা হয়েছে, যাতে আগের মতো হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম এমন একটি কাজ হয়েছে, যা আমরা করেছি।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ‘পুরান ঢাকায় এই প্রকল্পের কাজ এমনভাবে করা হচ্ছে, যাতে আগামী ২০০ বছর টিকে থাকে, দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে আকৃষ্ট হয়, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যেন জানতে পারে। আশপাশের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা হবে। একটি চক মার্কেটে ৪১টি দোকান থাকবে। দোকানগুলোতে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ বিভিন্ন জিনিস থাকবে। এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। মসজিদটিও করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন।’
কারা অধিদপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা সূত্র জানিয়েছে, সি জোনে কারাগারের কয়েদিরা এলে প্রথমে কিভাবে রিসিভ করা হয়, তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড—এসব থাকবে। সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের কিভাবে দিন কাটে, বিনাশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের অবস্থা, কারাগারে থাকার জায়গা, খাবারের জায়গা, কিভাবে গোসল করে—সব কিছু মিলিয়ে কারাবন্দিদের থাকার অনুভূতি তৈরি করা হবে। কেউ যদি চায়, টাকা দিয়ে কারাবন্দির জীবন অনুভব করতে পারবে।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির তিনটি জোনের মধ্যে সেকশন এ-তে রয়েছে লেক, তিনটি সেল ভবন, একটা বিদেশি বন্দি ওয়ার্ড। বি-তে রয়েছে চক কমপ্লেক্স, মসজিদ, প্লে গ্রাউন্ড, পুকুর ও ওয়াকওয়ে। সি-তে থাকছে পুরনো কারাগারের বিভিন্ন রাস্তা, ফাঁসির মঞ্চ, চারতলা মাল্টিপারপাস ভবন, সিনেপ্লেক্স, সুইমিংপুল, একসঙ্গে ৪৭০টি গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা এবং কমিউনিটি সেন্টার।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৭৮৮ সালের গোড়ার দিকে ঢাকার একটি মোগল দুর্গ সংস্কার করে এর ভেতর একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয়। এটিই পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিণত হয়। ২২৮ বছর পর ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই কারাগারটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। এরপর খালি হয়ে যাওয়া বিশাল কারা স্থাপনার ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চলমান প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
বর্তমানে এ প্রকল্পের সেকশন বি জোনের কাজ শেষ হয়ে এসেছে। প্রকল্পের এই অংশে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, খাবার ও বইয়ের দোকানসংবলিত দোতলা চক কমপ্লেক্স, পুকুর ও ওয়াকওয়ে। এ ও সি জোনের কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে।
প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সে সময় পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয় মাত্র ২৮ শতাংশ। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পে বেশ কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা হয়। এখন ব্যক্তির স্মৃতি সংরক্ষণে গুরুত্ব কমিয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে ঢাকার সংস্কৃতি-ঐতিহ্যসহ ৪০০ বছরের ইতিহাসে।
কারা অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের শেষ সময় ৯ মাস কাজ প্রায় বন্ধ থাকে বাজেটসংক্রান্ত কারণে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রকল্পে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়।
সম্পর্কিত খবর

ভারতের পণ্যে মার্কিন শুল্ক বেড়ে ৫০%
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের পণ্যে আগেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটি রাশিয়ার জ্বালানি তেল ক্রয় অব্যাহত রাখায় এবার আরো ২৫ শতাংশ বসালেন। গতকাল বুধবার এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ভারতের পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ।
মিত্র দেশটির ওপর শুল্কহার বাড়ানোর কথা আগেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কহার ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ বাড়াতে পারেন তিনি। ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যে শুল্ক বসিয়েছে তা আজ ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘ভারত রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ তেল শুধু ক্রয়ই করছে না, তারা ক্রয় করা তেলের একটি বড় অংশ খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে এবং বড়সড় মুনাফা করছে।
তিনি আরো লেখেন, ‘এই কারণেই আমি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদত্ত ভারতের শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াব।’ ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ভারত তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ তিনি আরো বলেন, ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা অন্যায্য ও অযৌক্তিক।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, রাশিয়ার বাণিজ্য নিয়ে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

গুলশানে চাঁদাবাজি
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নেতা অপুর দায় স্বীকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশান থানার চাঁদাবাজি মামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামসেদ আলম তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আসামি জানে আলম অপুকে রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গতকাল রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপুর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
জবানবন্দিতে অপু জানান, গত ১৭ জুলাই সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের সঙ্গে তিনি গুলশানের ওই বাসায় যান। ওই বাসা থেকে তাঁরা ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। পরে দুজন সমানভাবে পাঁচ লাখ টাকা করে ভাগ নেন। ওই টাকা দিয়ে ওই দিন মোটরসাইকেল ক্রয় করেন।
এই মামলায় গত ৩ আগস্ট আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ওই দিন সাত দিনের রিমান্ড শেষে তাঁর তিন সহযোগী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদমান সাদাবকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ক্ষমতাধর ৭৬ পুলিশ কর্মকর্তা বদলি
- রাজধানী থেকে সরিয়ে বিভিন্ন রেঞ্জে ও সারদায় সংযুক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের একসময়ের ক্ষমতাধর ৭৬ কর্মকর্তাকে রাজধানী থেকে সরিয়ে বিভিন্ন রেঞ্জ ও পুলিশ একাডেমি সারদায় সংযুক্ত করা হয়েছে। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর তাঁদের ওএসডি করা হয়েছিল। বদলি করাদের মধ্যে আছেন ১০ জন ডিআইজি, ৪৬ জন অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২০ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তার অনেকে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় অবস্থানকালীন তাঁরা পলাতক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন—এমন তথ্য রয়েছে। কেউ কেউ সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়াতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকেই তাঁদের একযোগে বদলি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে গতকাল বুধবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বদলি করাদের মধ্যে ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও সৈয়দ নুরুল ইসলামকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বদলি করাদের মধ্যে কয়েকজন অতীতে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম একসময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অতিরিক্ত ডিআইজি টুটুল চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ রয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজিরা হলেন মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, ড. শামসুন্নাহার, মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, সঞ্জিত কুমার রায়, মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান, আসমা সিদ্দিকা মিলি, জয়দেব চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন, এ বি এম মাসুদ হোসেন, মোহা. আহমার উজ্জামান, মো. আলমগীর কবির, আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহ জালাল, মো. বরকতুল্লাহ খান, মো. সাজ্জাদুর রহমান, খান মুহাম্মদ রেজোয়ান, মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, মো. হাসানুজ্জামান, পংকজ চন্দ্র রায়, মো. মোকতার হোসেন, মো. মারুফ হোসেন, টি এম মোজাহিদুল ইসলাম, শেখ রফিকুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ আল মামুন, টুটুল চক্রবর্তী, মো. ইকবাল হোসেন, মো. রশীদুল হাসান, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ আবু সায়েম, মোহা. মনিরুজ্জামান, মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, এস এম রশিদুল হক, আবদুল মান্নান মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মাসুদ আহাম্মদ, মো. মারুফ হোসেন সরদার, মো. হামিদুল আলম, বিজয় বসাক, মো. ফারুক উল হক, মো. আমির জাফর, মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞাঁ ও মোহম্মদ শরিফুর রহমান।

প্রভাবশালীরা গিলে খাচ্ছে গোমতী
জাহিদ পাটোয়ারী, কুমিল্লা

দখলে-দূষণে অস্তিত্বসংকটে কুমিল্লার খরস্রোতা গোমতী নদী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের মাঝে চলছে নদী দখলের প্রতিযোগিতা। কুমিল্লা ৯৭ কিলোমিটার অংশে নদীকে শাসন করছেন তাঁরা। নদীগর্ভ ও দুই পারে গড়ে তুলেছেন বিনোদন পার্ক, রেস্টুরেন্ট, বাণিজ্যিক ও আবাসিক বহুতল ভবন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ছোট-বড় অসংখ্য স্থাপনা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রভাবশালীরা এই সব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এদিকে অবৈধভাবে গোমতী নদী দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১১ সালে একটি রিট আবেদন করা হয়। জনস্বার্থে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি ছিল গত ৩ আগস্ট। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ দখল-স্থাপনা আগামী ছয় মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করতে কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের প্রতি এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে কেউ যাতে গোমতী নদী দখল বা নদী ভরাট না করতে পারে, সে জন্য কুমিল্লার পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদারকি করতে বলা হয়।
সরেজমিন কুমিল্লা সদর উপজেলার গোমতী নদীর গোলাবাড়ি, বিবির বাজার, অরণ্যপুর, সাহাপুর, টিক্কার চর, চাঁনপুর, পালপাড়া, ছত্রখীল, রত্নবতী, ভাটপাড়া, বদরপুর, জালুয়াপাড়া, বানাশুয়া, আড়াইওড়া, দুর্গাপুর, বুড়িচং উপজেলার কংশনগর, বালিখাড়া, ভান্তি, বুড়বুড়িয়া থেকে গোবিন্দপুর, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর ভেতর অসংখ্য ছোট-বড় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যার মধ্যে বিনোদন পার্ক, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল, বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনসহ কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ডুমুরিয়া চাঁনপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান নদী দখল করে তাঁর বাবার ও নিজের নামে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গোমতীর তীরে বলপ্রয়োগ কিংবা অবৈধভাবে আমি কোনো স্থাপনা নির্মাণ করিনি।
দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জাফরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই নদীর জায়গা দখল করে একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন। তবে তাঁর দাবি, সরকারি জায়গা হলে তিনি ফেরত দেবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক নেতাই গোমতী দখল করেছেন। তবে তাঁদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁদের কেউ পলাতক, কেউ বা ফোনে সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবীর মাসউদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে, স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই আমার বিশ্বাস।
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরনো গোমতীর মানচিত্র ধরে জরিপ করে সব দখলি ভূমি উদ্ধার করে জনস্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, শত ভাগ অবৈধ স্থাপনা কখনো উচ্ছেদ করা যাবে না। তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। তবে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আমিরুল কায়ছার কালের কণ্ঠকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নদীর ম্যাপ অনুসরণ করে ৫০৮ হোক, আর দুই হাজার হোক, সব উচ্ছেদ করা হবে।