প্রায় দুই যুগ পর ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড়’ জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ১৯ জুলাই রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ঘোষিত এ সমাবেশ। এতে ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছে জামায়াত। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করতে জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশ জামায়াতের
নিজামুল হক

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা, জুলাই মাসজুড়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, সংবিধানে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি এবং প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণসহ সাত দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও মহানগরগুলোর নেতাদের সঙ্গে একাধিক সমন্বয় সভা করা হচ্ছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন। তিনি মঞ্চ নির্মাণ, নিরাপত্তা, পানি সরবরাহ, স্যানিটেশনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার খোঁজখবর নেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, সমাবেশস্থলে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের একটি বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। সামনে ও পেছনে বসানো হবে এলইডি স্ক্রিন। থাকবে অস্থায়ী শৌচাগার, খাবার পানির ব্যবস্থা, অজু ও নামাজের জায়গা, পর্যাপ্ত ছাউনি, চিকিৎসক দল ও নিরাপত্তাব্যবস্থা।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, এটি হবে দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমরা ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ আশা করছি। সমাবেশে বিএনপিসহ সব ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হবে।’
ঢাকার পাশের জেলা—গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও দুই মহানগর থেকে অন্তত ১০ লাখ লোক অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডাকে সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা অংশ নিয়েছিলেন। তবে সেখানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, ওই সমাবেশে বিএনপিকে না ডাকা ভুল হয়েছে। এ ভুল জামায়াত করতে চায় না।
সমাবেশস্থল পরিদর্শনকালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের সময় পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে নই। আমরা চাই সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ। সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচারব্যবস্থার অগ্রগতি এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি তোলা।’
অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, সমাবেশ থেকে দলীয় নেতারা ‘সাত দফা’ উপস্থাপন করবেন, যা নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের ভূমিকায় এখনো জনগণ সংশয়ের মধ্যে আছে। এ জন্যই বলছি, দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আমরা মেনে নিতে পারি না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানো নিয়ে জামায়াতের নেতারা কখনো কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন পেছানো, না করা, এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য কখনো রাখিনি। জামায়াত আমির বলেছেন, ‘নির্বাচন আমরা চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন যেন যেনতেন নির্বাচন না হয়।’ এই যেনতেনর অর্থ হলো কোনো দিকে প্রশাসন ঝুঁকে পড়বে, নিরপেক্ষ হবে না, আবার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে, আবার প্রশাসন জবরদস্তি করবে, কেন্দ্র দখল হবে এসব।”
সম্পর্কিত খবর

বন্যার শঙ্কা, তলিয়ে গেছে ফসল, নদ-নদীতে পানি বাড়ছেই
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রধান প্রধান নদী ও শাখানদীতে পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষিত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : জেলায় ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলাসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
তিস্তার ভাঙনে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চাপড়ারপাড় থেকে থেতরাই পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। রাজারহাটের চরগতিয়াশাম, ডাংরা, কালাপানি বজরা, উলিপুরের হোকডাঙা, গোড়াই পিয়ার, সাদুয়া দামারহাটসহ তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। দুধকুমারের ভাঙনে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের সাতটি পরিবার গত এক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
লালমনিরহাট : টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি আবারও বেড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলার পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবাসহ প্রধান নদীগুলোর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কমে এসেছে পানিবৃদ্ধির হার।
কুষ্টিয়া : জেলার দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর পানিবৃদ্ধির কারণে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৪৫ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় দুটি ইউনিয়নের শত শত একর আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নীলফামারী : জেলায় উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর সকাল ৯টায় দুই সেণ্টিমিটার এবং বিকেল ৪টায় আরো এক সেন্টিমিটার কমে চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার পানিবৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর কয়েকটি গ্রামের তিন সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পঞ্চগড় : গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কুচিয়ার মোড় এলাকায় প্রবল স্রোতে একটি স্লুইস গেট সেতু (রেগুলেটর) দেবে গেছে। ভেঙে গেছে সেতুর দুই পারের সংযোগ সড়ক। এতে ওই এলাকার সঙ্গে উপজেলা ও জেলা শহরের সংযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।

জামায়াতের নায়েবে আমির
আরেকটি ১/১১-এর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না
বিশেষ প্রতিনিধি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারকে আলোচনায় বসার আহবান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যেক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবেন না, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না, আরেকটি ১/১১-এর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না। আমরা চাই জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর জামায়াতের (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে রাজধানীর বিজয়নগরে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এই আহবান জানান। ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আইনগত স্বীকৃতি এবং এর ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘অনেকে বলে পিআর (আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি) বোঝে না, অথচ জরিপ বলছে ৭১ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে। জনগণ বোঝে, কিন্তু আপনারা বুঝেও না বোঝার ভান করেন কেন? ৭১ শতাংশ মানুষ যখন পিআর চায়, তখন এর বিরোধিতা করার কী কারণ?’
জামায়াতের এই নেতা আরো বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, ক্ষমতায় গেলে সংস্কার করবেন।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুলনা অফিস জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে।
গতকাল দুপুরে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ভোটার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাতে ফুল দিয়ে বিভিন্ন দল থেকে ২০-২৫ জন নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

অর্থ উপদেষ্টা
কেউ বললেই নির্বাচন বন্ধ হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে রাজনীতির মাঠে কারো বক্তব্যে কিছু আসে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের একজন নেতা নির্বাচন হবে না বললেই তা বন্ধ হয়ে যাবে না। আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য ওরা রাখুক।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ‘ইউ পেনশন’ অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। গতকাল মালয়েশিয়ায় এক অনুষ্ঠানেও প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে এর দুই মাস আগে সূচি ঘোষণার কথা বলেছে।
তবে সংস্কার ও অভ্যুত্থান ঠেকানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার না হওয়ার আগে নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত দলটি নির্বাচনের আগে এই দুই দাবির বাস্তবায়ন চায়। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘নির্বাচনের ডেট ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।
রাজনীতির মাঠে নির্বাচন নিয়ে এমন বক্তব্য এলেও অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সব ধরনের সহযোগিতা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে ভালো একটি নির্বাচন দেওয়ার চেষ্টা আমরা করব। ঋণখেলাপিরা তো থিওরেটিক্যালি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ঋণখেলাপি বিষয়টি দেখবে।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোর্টের স্টে অর্ডার নিয়ে। মহীউদ্দীন খান আলমগীর তো এই ঋণখেলাপি নিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়েই দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য যা যা লাগে, সব সাপোর্ট আমরা দেব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।’
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘কালো টাকার উৎস বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আগে তো ব্যাংকের মালিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক, নিউজ পেপারের মালিক, ফ্ল্যাটের মালিক—সব একজনই। এখন তো মোটামুটি একটু চেক অ্যান্ড ব্যালান্স হচ্ছে। এখনো আমাদের কাছে বিষয়টি আসে নাই। নির্বাচন কমিশন চিন্তা করবে যে এটা কিভাবে ঠিক করবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর। রাজনীতিবিদরা যদি উৎসাহ দেন যে টাকা-পয়সা দিয়ে মনোনয়ন দেবেন, ভোট দেবেন, তাহলে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ে থেকে তো কিছুই করতে পারব না।’

প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের সমাবেশ
সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম, দাবি না মানলে কর্মবিরতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে ‘দৃশ্যমান ও যৌক্তিক’ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশস্থলে এই ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতারা।
জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ সারা দেশে প্রতিটি এমপিওভুক্ত স্কুল, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব রেখেছি, আমাদের বাড়িভাড়া পার্সেন্টেজ হিসেবে বাড়াতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় আমাদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করা হবে বলে জানিয়েছে।
দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা যৌক্তিক দাবি পূরণে গড়িমসি করছে।
এর আগে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থল থেকে ১০ জন শিক্ষক নেতা সচিবালয়ে যান। তাঁরা শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, বর্তমানে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাসে বাড়িভাড়া বাবদ এক হাজার টাকা পান। আর চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা। এই বাড়িভাড়া আরো এক হাজার বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয়করণ অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। কারণ জাতীয়করণ একটি কঠিন বিষয়। জাতীয়করণ নির্বাচিত সরকার করবে। তা ছাড়া শিক্ষকদের অন্য যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলো সরকার বিবেচনা করবে।’ শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক উল্লেখ করে ধাপে ধাপে এগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের জানানো হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলি নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সভায় বসেই এ কমিটি করার ঘোষণা দেন উপদেষ্টা।
সভা সূত্র জানায়, সর্বজনীন বদলি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানকে।