ঢাকা, শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫
৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫
৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ সফর ১৪৪৭
ন্যাম ভবন

অবহেলায় প্রায় পরিত্যক্ত এমপি হোস্টেল

  • নেই আগের মতো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী
  • বেশ কটি ফ্ল্যাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা গাদাগাদি করে থাকছেন
  • বসবাসের উপযোগী করতে প্রয়োজন হবে মোটা অঙ্কের অর্থ ও সময়
নিখিল ভদ্র
নিখিল ভদ্র
শেয়ার
অবহেলায় প্রায় পরিত্যক্ত এমপি হোস্টেল

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সংসদ সদস্যদের আবাসস্থল ন্যাম ভবন (এমপি হোস্টেল) বর্তমানে অবহেলায় অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে নেই আগের মতো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। করা হয় না নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও। বিধি-বিধান না মেনে বর্তমানে তিনটি ভবনের বেশ কটি ফ্ল্যাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা গাদাগাদি করে থাকছেন।

বহিরাগতদেরও রয়েছে অবাধ চলাচল। বাকি ফ্ল্যাটগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে কেউ বসবাস না করায় সেগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ত্রয়োদশ সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে এই ফ্ল্যাটগুলো সংস্কারে মোটা অঙ্কের অর্থ ও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ন্যাম সম্মেলনের অতিথিদের থাকার জন্য মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়ায় তৈরি করা হয় ভবনগুলো।

এর মধ্যে মানিক মিয়া এভিনিউতে তৈরি করা হয় ছয়টি ভবন এবং নাখালপাড়ায় চারটি ভবন। পরে ২০০৩ সালে সংসদ সদস্যদের বসবাসের জন্য এই ভবনগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। মানিক মিয়া এভিনিউর ছয়টি ভবনের ২৬৪টি ফ্ল্যাট এবং নাখালপাড়ার চারটি ভবনের ৯১টি ফ্ল্যাটে নামমাত্র ভাড়ায় সংসদ সদস্যরা বসবাস করে আসছিলেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দৃশ্যপট সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।

মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ভবনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন এক হাজার ২৫০ বর্গফুট, আর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ভবনের ফ্ল্যাটের আয়তন এক হাজার ৮৫০ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে তিনটি বেডরুম, একটি ড্রয়িংরুম, একটি ডাইনিংরুম, একটি কিচেন ও দুটি বাথরুম। ফ্ল্যাটের পেছনে রয়েছে ব্যালকনি। ভবনগুলোর চারপাশে গাছগাছালি লাগিয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

২০০৩ সাল থেকে ভবনগুলো এমপি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পরও এই সময়টায় এমপি হোস্টেলে সাবেক সংসদ সদস্যরা থেকেছেন। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে ভবনগুলো খালি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আপত্তি জানান তৎকালীন স্পিকারসহ বসবাসকারী সাবেক সংসদ সদস্যরা।

কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ছাত্র-জনতা সংসদ ভবন, গণভবনের পাশাপাশি ন্যাম ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর গত বছর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিলে ব্যক্তিগত মালপত্র সরিয়ে নিতে ১৫ আগস্ট সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখা থেকে সাবেক সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর সাবেক সংসদ সদস্যরা তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে মালপত্র সরিয়ে নিলে সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখা ফ্ল্যাটগুলোর দখল বুঝে নেয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী ও দর্শনার্থীদের কোলাহালে মুখর ন্যাম ভবনে বর্তমানে সুনসান নীরবতা। ঝলমলে এলাকাটিতে জমে আছে শুকনা পাতা ও ময়লা আবর্জনা। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকাজও বন্ধ। ভবনগুলোর প্রবেশ মুখে নিরাপত্তাকর্মীরা অলস বসে থাকেন। যে কেউ ইচ্ছা করলে ভেতরে ঢুকে যেতে পারছে। কোনো কোনো ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে জামা-কাপড় মেলে দেওয়া দেখে বোঝা যায়, সেখানে কেউ থাকছেন। রাতেও এসব ভবনের কিছু ফ্ল্যাটে আলো জ্বলতে দেখা গেছে।

দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ভবনে বসবাস করছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও ব্যারিস্টার মঈনুল করিমসহ বেশ কজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়) অনুমতি নিয়েই সেখানে বসবাস করছেন। তাঁদের নামে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র। বিধি মোতাবেক তাঁদের বেতন থেকে ভাড়াও কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদও ওই ভবনে বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে তিনি ওঠেননি। সাতটি ফ্ল্যাটে বসবাসের জন্য আবেদন করেছিল অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটরের অফিস। দুটি ছাড়া বাকিগুলোতে বসবাস করছেন তাঁর অধীনরা।

জানা গেছে, বর্তমানে এমপি হোস্টেলের ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনে বসবাস করছেন আনসার, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা। যাঁদের বেশির ভাগই ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। ৪ ও ৫ নম্বর ভবনে কেউ থাকেন না। আনসার ও পুলিশ সদস্যরা যে ফ্ল্যাটগুলোতে থাকেন সেই ফ্ল্যাটগুলোয় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোক বাস করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকছেন। যত দিন পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা না হবে, তত দিন তাঁদের সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগের সংসদ ভবন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ না থাকলে অতীতে এমপি হোস্টেলে অন্য কাউকে থাকতে দেওয়ার নজির নেই। কিন্তু এখন অনুমতি নিয়ে কেউ কেউ থাকলেও অনেকে অনুমতি ছাড়াই থাকছেন। তাঁরা ফ্ল্যাটগুলো যথেচ্ছা ব্যবহার করছেন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। আবার ৪ ও ৫ নম্বর ভবনে কেউ নেই। সেগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গত বছর ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ভবনের নিচের অংশে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে ফ্ল্যাটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ শুরুর আগেই ভবনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ফ্ল্যাটগুলো এমপিদের ব্যবহার উপযোগী করতে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ এবং বেশ সময় দরকার।

সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখার সহকারী সচিব আলম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করার পর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমপি হোস্টেল (ন্যাম ভবন) খালি করা হয়। তবে অনেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে সেখানে থাকছেন। আনসার, পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির অফিসের কয়েকজন সেখানে থাকছেন। যাঁরা থাকছেন, নিয়ম মেনে থাকছেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ১৫ কারখানায় ছুটি

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
শেয়ার
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ১৫ কারখানায় ছুটি

সাভারের আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। পরে পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী অন্তত ১৫টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শিল্প পুলিশ ও আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় নাসা গ্রুপের নাসা বেসিক কমপ্লেক্স কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।

এ সময় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের অনুরোধে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। তবে পরে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একটি অংশ পাশের অন্যান্য কারখানায় গিয়ে সেখানকার শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

শিল্প পুলিশ জানায়, নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর দ্রুত আশপাশের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

এ অবস্থায় অন্তত ১৫টি পোশাক কারখানায় আজকের (গতকাল) জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শ্রমিকরা জানান, ১০ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত চার দিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ১৩ আগস্ট বকেয়া বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে নতুন করে আরো চার দিনের সাধারণ ছুটির নোটিশ টানানো হয়।

এ কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন।

নাসা বেসিক কমপ্লেক্স কারখানায় টাঙানো সর্বশেষ নোটিশে বলা হয়, অনিবার্য কারণে আগামী ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে ১৮ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত কারখানার সব বিভাগ ও শাখা (জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মী ব্যতীত) সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে কারখানার সব বিভাগ ও শাখা যথারীতি খোলা থাকবে।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই এলাকার ১৫টি পোশাক কারখানা বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে।

মন্তব্য
সিএমপি কমিশনার

পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র বের করলেই গুলির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র বের করলেই গুলির নির্দেশ

চট্টগ্রাম নগরে অভিযানের সময় পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র বের করলে আত্মরক্ষার্থে তাৎক্ষণিকভাবে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।

গত মঙ্গলবার রাতে সিএমপির ওয়্যারলেসে দেওয়া এক মৌখিক বার্তায় সিএমপি কমিশনার এ নির্দেশ দেন। এর আগে চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ রানা আহত হন। ওই ঘটনার পরপরই কমিশনার এ নির্দেশনা দেন বলে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

ওয়্যারলেস বার্তায় পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে অস্ত্রের প্রাধিকার ছিল, ওই অস্ত্র-গোলাবারুদের প্রাধিকার অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, প্যাট্রল পার্টি, ডিবির টিমগুলো ও সব ফোর্স অস্ত্র ক্যারি করবে। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া, আই রিপিট আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাইভ অ্যামুনিশন ছাড়া কোনো প্যাট্রল পার্টি, মোবাইল পার্টি, টহল পার্টি, চেকপোস্ট পার্টি, ডিবির পার্টি তাদের ডিউটিতে বের হবে না। অবশ্যই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের অস্ত্রের প্রাধিকার অনুযায়ী লাইভ অ্যামুনিশনসহ তাদের বের হতে হবে। প্রাধিকার অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও স্যুট পরে তারপর ডিউটিতে যাবে।

তিনি আরো বলেন, শুধু রাবার বুলেট দিয়ে আমাদের কাজ হচ্ছে না। আই রিপিট, শুধু রবার বুলেট দিয়ে আমাদের কাজ হচ্ছে না। বন্দরে (বন্দর থানা) আমার একজন সাব-ইন্সপেক্টর গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেক দিন আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।

আমি সবাইকে বলে দিয়েছি। বন্দর থানার সাব-ইন্সপেক্টর যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, ওই পরিস্থিতিতে কেউ পড়লে কোনো অবস্থায়ই যেন দু-চারটা লাশ ছাড়া মোবাইল পার্টি, প্যাট্রল পার্টি ফেরত না আসে। হাসিব আজিজ বলেন, সোজা কথা, পুলিশের কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের করা মাত্র, আই রিপিট, অস্ত্র বের করা মাত্র, সেটা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে বা ধারালো অস্ত্র। অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, এটা সবাইকে বলে দিচ্ছি।
আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার, দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত, আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সব পুলিশ অফিসারের আছে। অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়ার আগে অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। হয় মাথায়, নয়তো বুকে, নয়তো পিঠে করবে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমার মেসেজ ক্লিয়ার হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার সল্টগোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছেনএমন তথ্য পেয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন বন্দর থানার এসআই রানার নেতৃত্বে একটি টিম।

এ সময় তল্লাশি চলাকালে রানার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। পরবর্তী সময়ে বন্দর থানা এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ছুরি, ধারালো অস্ত্রসহ ১৮ জনকে আটক করে। এর পরই মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এক ওয়্যারলেস বার্তায় এসব নির্দেশনা দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মন্তব্য
এক্সে টিউলিপের ক্ষোভ

ঢাকার বিচার প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ঢাকার বিচার প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়
টিউলিপ সিদ্দিক

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার শুরু হয়েছে। এই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পূর্বাচলে মা, ভাই, বোনকে অনিয়মের মাধ্যমে প্লট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। নিজের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিচার নিয়ে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে একটি পোস্ট করেছেন টিউলিপ। সেখানে নিজেকে নির্দোষ এবং এই বিচারকে প্রহসন হিসেবে দাবি করেছেন সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাগনি।

তিনি লিখেছেন, ঢাকায় এখন যে তথাকথিত বিচার চলছে, তা একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি বানানো অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দ্বারা পরিচালিত। গত এক বছরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, তবু বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ একবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমি কখনো কোনো আদালতের সমন পাইনি, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাইনি।

তিনি আরো লিখেছেন, যদি এটি একটি প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়া হতো, তাহলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমার বা আমার আইনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করত, আমাদের আনুষ্ঠানিক চিঠিপত্রের জবাব দিত এবং তাদের কাছে থাকা প্রমাণ পেশ করত। এর পরিবর্তে তারা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ ছড়িয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তদন্তকারীরা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করেনি।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস এতে সাড়া দেননি।

এ বিষয়টি আবারও উল্লেখ করেছেন তিনি। টিউলিপ লিখেছেন, লন্ডনে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক সফরের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই স্পষ্ট যে আমি কোনো ভুল করিনি এবং আমার কাছে উপস্থাপন করা যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের জবাব দেব।

এদিকে দুদকের তদন্তে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নামে মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

তার মধ্যে একটি শেখ হাসিনার নিজের নামে, আরেকটি তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে, অন্য একটি তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার নামে একটি, তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে একটি এবং অন্যটি তাঁর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে। টিউলিপের নামে প্লট না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে নিজের মা, বোন ও ভাইকে প্লট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে আসামি করা হয়েছে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

প্রিজন সেলে অবহেলায় আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু হয়

বিশেষ প্রতিনিধি ও খুলনা অফিস
বিশেষ প্রতিনিধি ও খুলনা অফিস
শেয়ার
প্রিজন সেলে অবহেলায় আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু হয়
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দলটির সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইন্তেকাল করেন।

তাঁকে কাশিমপুর কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় এনে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নেননি। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চিকিৎসায় অবহেলার নানা তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁর  স্ত্রী ও সন্তানদের সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এমন এক পরিস্থিতিতে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মৃত্যুর পর ঢাকায় তাঁর জানাজা আদায় করতে দেওয়া হয়নি। লাখো তৌহিদী জনতা জানাজা আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে এলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে অনেককে আহত করে। পরে তাঁর মরদেহ পিরোজপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।

সেখানে লাখো মানুষ উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁর জন্য দোয়া করেন।

বিবৃতিতে জামায়াত আমির আরো বলেন, আল্লামা সাঈদী আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি তাঁর জীবন ও কর্ম দিয়ে যে আদর্শ রেখে গেছেন, তা আমাদের পথ দেখায়। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে তিনি দেশে-বিদেশে কোরআনের তাফসির করেছেন। তাঁর অসংখ্য বক্তব্য ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে রয়েছে, যা মানুষকে ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে।

তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য ও বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর রচিত ইসলামী সাহিত্য, তাফসির ও সিরাত গ্রন্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবে। তিনি যে দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখান থেকে ইসলামের দাঈ ও মুফাসসির তৈরি হয়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি আল্লামা সাঈদীর ইলম, দাওয়াত ও ত্যাগময় জীবনকে। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর, যিনি আজীবন আল্লাহর দ্বিন প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করেছেন, কিন্তু তাঁর কর্ম ও আদর্শ আজও আমাদের মাঝে জীবিত রয়েছে। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ন্যায়, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে আমরা এগিয়ে যাব।

ইসলামী রাষ্ট্র হলে ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে পাহারা দিতে হবে না: গোলাম পরওয়ার

এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তা পাবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।

গতকাল সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে আয়োজিত হিন্দু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বান্দা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদার অধিকারী। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে নাগরিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা যারা করেছে, তারাই মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে। ইসলামের ছায়াতলে সব মানুষ নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারে। ইসলাম কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয় না, বরং এতে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে সবাইকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির সভাপতি ডা. নিত্যরঞ্জন রায়। সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে জামায়াত নেতাসহ বক্তব্য দেন উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মণ্ডল, বান্দা কলেজের অধ্যক্ষ সৌমেন মণ্ডল, অধ্যাপক ডা. প্রকাশ চন্দ্র মজুমদার, অ্যাডভোকেট বিপুল মণ্ডল, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র, অধ্যাপক গৌতম রায়, দীপংকর ঢালী, প্রীতিশ মণ্ডল, দূর্বাদল বিশ্বাস, সঞ্জয় বৈরাগী প্রমুখ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ