চট্টগ্রামে চলতি বছর গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু এবং মহানগর এলাকায় করোনা রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস দুই দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং গত প্রায় এক মাস (২৯ দিন) করোনার দৈনিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে তিন মাস ধরে এডিস মশাবাহী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। চলতি বছরের গত ছয় মাস দুই দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৯ জন।
এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সর্বশেষ তিন মাসে ৩২৫ জন আক্রান্ত হয়, যা গত ছয় মাস দুই দিনে আক্রান্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর ৬৯ শতাংশ (তিন মাসে)। উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেশি।
অন্যদিকে গত ৪ জুন প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৯ দিনে চট্টগ্রামে ১৬৫ জন সংক্রমিত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ নগরের বাসিন্দা।
অর্থাৎ চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম গ্রামাঞ্চলে (উপজেলা পর্যায়ে) ডেঙ্গু এবং মহানগর এলাকায় করোনা রোগী বেশি।
তবে করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরে স্বাস্থ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে যেভাবে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবেলায় তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অনেকে জানায়। তারা বলছে, চট্টগ্রামে এখন তুলনামূলকভাবে করোনার চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে যে বৃষ্টি হচ্ছে, এতে ডেঙ্গুর বিস্তার অনেক বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাড়ি বাঁশখালী। আমার মা-বাবা দুজনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এবার দেখা যাচ্ছে, গ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। নগরের চেয়ে বিভিন্ন উপজেলায় মানুষ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট পাওয়া না গেলেও রোগীদের চিকিৎসার জন্য আগের মতো ফ্লু কর্নার চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোধে গত শনিবার থেকে নগরে তিন মাসব্যাপী বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ, নগর বিশেযজ্ঞ, বিভিন্ন সেবা সংস্থাসহ নানা শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধি নিয়ে আমরা গত রবিবার একটি বৈঠক করেছি। করোনার জন্য একটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে। একই সঙ্গে চসিক হাসপাতালে বিনা মূল্যে করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতাল চালু করা হয়েছে।’
গত শনিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) চত্বরে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচির উদ্বোধনকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনা রোগের প্রকোপ না কমা পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে তিনটি ভাইরাল রোগ মোকাবেলা করা। এর মধ্যে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সিজনাল হলেও সঠিক প্রস্তুতি ও গণসচেতনতা ছাড়া ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার (৪ জুন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ২৯ দিন) করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬৫ জন। এর মধ্যে নগরে ১৪৯ জন এবং বিভিন্ন উপজেলায় ১৬ জন। এই হিসাবে নগরে করোনায় সংক্রমিত রোগী ৯০ শতাংশ এবং জেলায় ১০ শতাংশ। এর মধ্যে একটি শিশু, ৮০ জন নারী এবং ৮৪ জন পুরুষ। করোনায় এ পর্যন্ত মারা যাওয়া সাতজনের (তিনজন পুরুষ এবং চারজন নারী) মধ্যে চারজন উপজেলার বাসিন্দা।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৬৯। প্রথম তিন মাসে আক্রান্ত হয়েছে ১২০ জন, যা মোট আক্রান্তের ২৬ শতাংশ। পরের তিন মাস দুই দিনে আক্রান্ত ৩৪৯ জন, যা মোট আক্রান্তের ৭৪ শতাংশ।