ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

অনভিজ্ঞ কম্পানিকে এসিআর কেনার কাজ দিতে তৎপরতা চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অনভিজ্ঞ কম্পানিকে এসিআর কেনার কাজ দিতে তৎপরতা চলছেই

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সম্প্রতি ১১ কেভি ও ৩৩ কেভি এসিআর ক্রয়ের জন্য দুটি স্থানীয় দরপত্র আহবান করে। প্রযুক্তিনির্ভর বৈদ্যুতিক প্রটেকশন ডিভাইস অটোমেটিক সার্কিট রিক্লোজার (এসিআর) সরবরাহের কার্যাদেশ নিয়ে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। নামসর্বস্ব একটি কম্পানিকে এসিআর কেনার কাজ দিতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে একটি চক্র। অতীতেও অনভিজ্ঞ কম্পানিকে এসিআর কেনার কাজ দেওয়ায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে হয়।

জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই প্রতিষ্ঠানের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার যোগসাজশে অনভিজ্ঞ এক সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহকারী সাজিয়ে নিম্নমানের এসিআর ক্রয় বাণিজ্যের ছক তৈরি করা হচ্ছে। এসিআর হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর বৈদ্যুতিক প্রটেকশন ডিভাইস, যা বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরি হলেও কিছু কর্মকর্তা তাঁদের নিজেদের লাভের স্বার্থে মালপত্র ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এসিআর ক্রয় নিয়ে সম্প্রতি কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি বিষয়টি নিয়ে বোর্ডসভায় কথা বলি।

তারপর বোর্ড এটি চূড়ান্ত অনুমোদন না দিয়ে পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইপূর্বক পরবর্তী বোর্ডসভায় উপস্থাপনের জন্য বলে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত কম্পানির গ্যাপ থাকা ডকুমেন্টগুলো পাঠাতে বলা হয়েছে। ডকুমেন্টগুলোকে স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করতেও বলা হয়।

তিনি বলেন, এসিআর ক্রয়ে অযোগ্য কোনো কম্পানিকে মনোনীত করার কোনো সুযোগ নেই।

সাধারণত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে চারটি স্টেজে অনুমোদন হয়। তাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাপবিবো দুটি আলাদা প্যাকেজের আওতায় পিবিএসএফ/২৪-২৫/জি-৭২ ও পিবিএসএফ/২৪-২৫/জি-৭৩ ১২০টি ১১ কেভি এবং ১০০টি ৩৩ কেভি এসিআর কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে দরপত্র আহবান করে। এসব দরপত্রে অংশ নেয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এমআরবিআর করপোরেশন নামের একটি নতুন কম্পানি দক্ষিণ কোরিয়ার বিএইচ সিস্টেম কো. লিমিটেডের পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব দেয়।

যদিও এই কম্পানি বা তাদের প্রস্তাবিত সরবরাহকারীর আগে বাংলাদেশের কোনো বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় কিংবা নিজ দেশসহ পৃথিবীর কোথাও কোনো বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থায় দরপত্রে চাহিদাকৃত ১১ কেভি এসিআর সরবরাহের অভিজ্ঞতা নেই। তার পরও সংশ্লিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি তাদের প্রস্তাবিত পণ্যের কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই না করে এসিআরের কন্ট্রোল প্যানেলের টেস্ট রিপোর্ট একই মডেলের না হওয়া সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ এসিআর উৎপাদনকারী ও সার্ভিস প্রদানকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। অথচ একই কম্পানিকে ৩৩ কেভি এসিআর সরবরাহকাজে ৭১৩ নম্বর বোর্ডসভায় কারিগরিভাবে নন-রেসপন্সিভ করা হয়েছে।

যদিও দরপত্রে আইটিটি-১৫.১(সি) নম্বর শর্তে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, উৎপাদনকারীর ন্যূনতম এক বছরের দরপত্রে আহবানকৃত মালের সন্তোষজনক অপারেশনের অভিজ্ঞতা সনদপত্র পৃথিবীর যেকোনো বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা থেকে দিতে হবে। কিন্তু দরপত্রে গুণগত মালপত্র ক্রয় নিশ্চিত করার এই শর্তকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, দরপত্রে ১২০টি ১১ কেভি এসিআর ক্রয়ের জন্য আহবান করা হয়েছে, অথচ ওই কোরিয়ান কম্পানির ৯ বছরের উৎপাদন মেয়াদে এতগুলো এসিআর বানানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. আহসানুর রহমান হাসিব কালের কণ্ঠকে বলেন, অযোগ্য কোনো কম্পানিকে মনোনীত করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে নতুন কম্পানি যোগ্য হলে অবশ্যই সুযোগ পাবে। দরপত্র প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। আমাদের চেয়ারম্যান এসব বিষয় খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বোর্ডের মাধ্যমেও স্বচ্ছতার সঙ্গে দেখা হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) আরমান আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে, এটি এখনো যাচাই-বাছাই চলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশের বিদ্যুৎ বিতরণকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় এসিআর ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত অনুসারে কোনো বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থায় সরবরাহ করা একই ভোল্টেজ লেভেলের এসিআরের ন্যূনতম দুই থেকে পাঁচ বছরের সন্তোষজনক অপারেশনের অভিজ্ঞতার সনদপত্র (পারফরম্যান্স সার্টিফিকেট) দাখিল করতে হয়। অথচ বাপবিবোর দরপত্রে এক বছরের সন্তোষজনক অপারেশনের অভিজ্ঞতার সনদপত্র দাখিলের শর্ত থাকার কারণে যেকোনো অভিজ্ঞতাহীন দরদাতা বা উৎপাদনকারী খুব সহজেই নিম্নমানের এসিআর সরবরাহ করার সুযোগ পায়। দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের দরপত্রের সঙ্গে যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে, তাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের আয় দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, যা আয়কর বিভাগের একজন উপকর কমিশনার কর্তৃক প্রত্যয়নও পেয়েছে। কিন্তু হাফিজ আহমেদ অ্যান্ড কোং কর্তৃক জারি করা অডিট রিপোর্ট অনুসারে, গত বছরের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আয় ছিল এক কোটি ২০ লাখ ১১ হাজার ৩২৯ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে কার্যত রাষ্ট্রীয় রাজস্ব হরণ করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা শুধু দুর্নীতির ইঙ্গিতই দেয় না, বরং সরকারি ক্রয়নীতির আইনি শর্তাবলির সরাসরি লঙ্ঘনও। এর আগে বিআরইবি এই ধরনের জাল কাগজপত্রাদির জন্য সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু এই দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিআরবি সম্পূর্ণ ঘটনাটি লুকিয়ে গিয়েছিল ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এর আগে বাপবিবো ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চার্ডন কোরিয়া কম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ৫২৭টি এসিআর কেনে, যেগুলোর প্রায় সব কটিই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। সাবস্টেশন এবং বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনে সংযোগ দেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সব কটি এসিআর অকার্যকর হয়ে পড়ে। এসিআরগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করা হলেও তৎকালীন সময়েও ওই চার্ডন কোরিয়া কম্পানি লিমিটেডের ৩৩ কেভি এসিআর বানানো এবং তাদের মালপত্রের পৃথিবীর যেকোনো দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থায় তিন বছরের সন্তোষজনক অপারেশনের শর্তটিকে উপেক্ষা করা হয়েছিল এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে দরপত্রের শর্ত অনুসরণ করে করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে এই ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ প্রদান করে, কিন্তু আজ পর্যন্ত বাপবিবো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এই ঘটনার পেছনে একটি পুরনো স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেটের পুনরায় সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ছাড়া এর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড শিংসুং কোরিয়া থেকেও ৩৯০টি নিম্নমানের এসিআর ক্রয় করেছিল। এসব এসিআর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ব্যবহার করতে পারেনি। ফলে এসিআর ক্রয়ের সময়ে আরইবি ২৭ কেভি এসিআর সরবরাহের অভিজ্ঞতা দেখে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু ১১ কেভি এসিআর সরবরাহের অভিজ্ঞতা না থাকায় পরবর্তী সময়ে তাদের সরবরাহ করা এসিআর মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজে আসেনি। পরবর্তী সময়ে ওই এসিআর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে উচ্চমূল্যে ক্রয়কৃত নিম্নমানের এসিআরের বিলগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকেই বহন করতে হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
শেয়ার
স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিটন দাস ও শামিম হোসেন। পরে বোলারদের দাপটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।ছবি : মীর ফরিদ, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।

এর পরও ফুর্তিবাজ লঙ্কানরা দুলেছে। তবে ১৭৭ রানের পূঁজি গড়া বাংলাদেশ দল ওই রান আউটে রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। স্বাগতিকদের ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৩ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে ফেরা তাই একরকম নির্ধারিতই ছিল!

বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধোনা করা লঙ্কান সিংহকে বাংলাদেশ খাঁচাবন্দি করে ফেলে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ওই বলে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। স্বাগতিকরা থমকে যায় ৩০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে। এমন অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে পাথুম নিশাঙ্কা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দাসুন শানাকাকে সঙ্গী করে।
কিন্তু বাংলাদেশকে এদিন কে রোখে! এই ম্যাচে একাদশে জায়গা করে নেওয়া শরিফুল ইসলামের সুইং, মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার আর রিশাদ হোসেনের লেগস্পিন সামলানোর সক্ষমতা ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। এঁদের মধ্যে শেষোক্তজনের কথা ম্যাচ শেষে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। তবে ঘুরেফিরে দুই অধিনায়কের মুখেও উচ্চারিত হয়েছে শামীম হোসেনের সেই রান আউটের ঘটনাটি। বাংলাদেশের বোলার আর ফিল্ডারদের দক্ষতায় দুজন ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে যাঁদের কাজে লাগানোর কথা, সেই দুই ওপেনারতানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন গতকাল। এরপর রানখরায় ভোগা অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের রক্ষণশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বেশিদূর যাওয়া হবে না বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!

মন্তব্য

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

শেয়ার
অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরে জানা যায়, এই মামলার দুজন আসামি এরই মধ্যে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে আগের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আগের আদেশটি পরিমার্জন করা হলো।
২৬ জন আসামির মধ্যে যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য নয়।

পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মন্তব্য
হত্যা মামলায় জামিন

আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।

আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি রাজনীতি করতে চাই না।

এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি যে অর্থের জোগান দিয়েছেন, তা এজাহারে বলা নেই। নুসরাত ফারিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
আসামি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জামিন চাই। এ সময় বিচারক আসামি অপু বিশ্বাসের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু তিনি দুইবার মাথা নেড়ে না উত্তর দেন। এ সময় তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়।
তখন পাশ থেকে আইনজীবীরা বলতে থাকেন, অপু বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। টাকার বিনিময়ে মঞ্চে স্টেজে নেচে-গেয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিতেন। তিনি আবার হাসেন। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখে-মুখে ভীতি দেখা যায়। তখন তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তাঁকে থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। লাশের বন্যা বয়ে যায়। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাঁরা ছিলেন সবাই শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এই অপু বিশ্বাসরা ফেরদৌসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। শেখ হাসিনা আবার আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।

এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না। এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ