ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি

ঢাবির আদি যুগের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

মানজুর হোছাঈন মাহি, ঢাবি
মানজুর হোছাঈন মাহি, ঢাবি
শেয়ার
ঢাবির আদি যুগের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়া এখনো পুরনো ও জটিল ব্যবস্থায় পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ভোগান্তির মুখে পড়ছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক পর্যায়ে অনলাইনে ফি জমাদানসহ প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাইজড হলেও মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া আদি যুগের মতো দীর্ঘ ও কাগজপত্রভিত্তিক থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

মাস্টার্সে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের কয়েক ধাপ পেরোতে হয়। প্রথমে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসের ওয়েবসাইটে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ফি জমা দিতে হয়, যা অনলাইন অথবা ব্যাংকে দেওয়া যায়।

এরপর নিজ নিজ বিভাগ থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে হয়। এই ফরম পূরণের জন্য বিভাগ থেকে একটি রসিদ দেওয়া হয়, যেটি ব্যাংকে জমা দিতে হয়; অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার সুযোগ নেই।

২১ ধরনের তথ্য সংবলিত ফরমটি শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পূরণ করতে হয়, যেখানে ছবিও আঠা দিয়ে লাগাতে হয়। সঙ্গে দিতে হয় অভিভাবকের আয়ের সনদপত্র, পূর্ববর্তী পরীক্ষার সত্যায়িত নম্বরপত্র ও ব্যাংকের রসিদ।

বিভাগে জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের সুপারিশ নেওয়া হয়।

চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের পর ফরম ফেরত নিয়ে আবার হলে গিয়ে নতুন একটি ফরম পূরণ করতে হয়, যা সত্যায়িত কপি, আয়ের সনদসহ হল অফিসে জমা দিতে হয়। এখানে ব্যাংকে ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইনে নেই, লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকে যেতে হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত জটিল ও কাগজপত্রভিত্তিক প্রক্রিয়ায় মাস্টার্সে ভর্তি হতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর।

তাঁরা আশা করছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল হলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।

অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী জাওয়াদ হোসেন আবির বলেন, আয়ের সনদ ও এসএসসি-এইচএসসির মার্কশিটের সত্যায়িত কপির জন্য অনেককে উপজেলা পর্যন্ত যেতে হয়। অনেকের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এই প্রক্রিয়া খুবই সমস্যাজনক। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখনো এই আদি যুগের ব্যবস্থায় ভর্তিপ্রক্রিয়া চলছে।

স্যার এ এফ রহমান হলের সাদ আহমেদ বলেন, মাস্টার্স ভর্তি পদ্ধতিতে অনলাইন-অফলাইন মিশ্রণ অনেক সমস্যা তৈরি করে।

আবার ছবি নিয়ে আঠা দিয়ে ফরমে লাগানো থেকে শুরু করে অভিভাবকের আয়ের সনদপত্র নিতে উপজেলায় যেতে হয়, যা সময় ও শ্রমের অপচয়।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রাফিউজ্জামান লাবীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কার্যক্রম ডিজিটাইজড হলেও ভর্তিপ্রক্রিয়া অর্ধেক ম্যানুয়াল। একাধিকবার বিভাগ, হল ও ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এ ছাড়া আয়ের সনদ জমা দেওয়ার জন্য বিকল্প পদ্ধতি প্রবর্তন জরুরি।

এর আগে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অধিক জটিল ছিল। নতুন শিক্ষার্থীদের তিন-চার দিন ধরে বিভাগ, ব্যাংক ও ইনস্টিটিউটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় স্নাতক পর্যায়ের ভর্তিপ্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অথবা নিজ নিজ বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল অফিসে ফি ও জামানত জমা দিতে পারবেন। তাতে স্নাতক ভর্তিপ্রক্রিয়া অনেক সহজ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাস্টার্স ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটাল করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ভর্তিপ্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অটোমেশন ধাপে ধাপে শুরু করেছি। বর্তমানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে তা চালু করা হয়েছে। মাস্টার্স পর্যায়েও এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। তাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেক কমবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাগুলো ধীরে ধীরে অটোমেশন করা হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ