বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এতে দেশের বেশির ভাগ স্কুলেই হয়নি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা। তবে কিছু এলাকার স্কুলে শিক্ষকরা স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্লাস নিয়েছেন।
‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোথাও কোথাও শিক্ষা অফিসারের বাধার কারণে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালনে বাধার মুখে পড়েছেন।
এর পরও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার ৭৫টি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) দিয়েছেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে একটি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে কর্মবিরতি পালনের জন্য শোকজ করা হয়েছে।
আবার কোথাও কোথাও মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদপ্তরের ডিজির নির্দেশের কথা বলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হচ্ছে।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হচ্ছে—প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ; ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী ৩ জুন থেকে ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হবে, ২৩ জুন পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। ঠিক এর আগমুহূর্তে ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ ছাড়া অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতিও বাড়বে।
ঐক্য পরিষদের আহবায়ক-১ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের উচ্চমহল বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ শিক্ষক কর্মরত।
এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষক। আর এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এক কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম। তবে মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড হবে।
জানা যায়, দাবি আদায়ে গত ৫ মে থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। গত ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। আর ২৬ মে থেকে লাগাতার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা।