দিনাজপুরের বিরল ধর্মপুর সীমান্তে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময় গতকাল শুক্রবার দুই বাংলাদেশি কৃষককে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুই ভারতীয় কৃষককে ধরে এনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।
পরে রাত ৮টার পর বিজিবি-বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে এই হস্তান্তরপ্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। হস্তান্তরের পর বাংলাদেশি দুজনকে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে মামা-ভাগ্নেকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ।
অন্যদিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে রিয়াজ হোসেন (২২) নামের বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম পিপুলবাড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে বিরলের সীমান্তে ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন ধর্মজৈন এলাকার মাসুদ রানা ও এনামুল।
দুপুর ১২টার দিকে ৩২০ মেইন পিলারের সাব পিলার ৯ ও ১০-এর মাঝামাঝি থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।
এর প্রতিবাদে দুই ভারতীয় নাগরিককে ধরে এনে আটকে রাখে স্থানীয় গ্রামবাসী। পরে তাঁদের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহমানের মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবির হেফাজতে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা হলেন ভারতের গঙ্গারামপুর থানার অবিনাশ টুডু (২০) ও ফিলিপ সরেণ (৩০)।
ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ইসলাম ভারতীয় নাগরিক ফেরত দেওয়া এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বিজিবি ও বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের স্থানীয়রা জানায়, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৮২৫ নম্বর মেইন পিলারের ১ নম্বর সাব পিলারের কাছ থেকে রিমন ও সাজেদুলকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সন্ধ্যার কিছু আগে বাড়ির অদূরে কাঁটাতারের বেড়ার এ পাশে ভারতীয় চা-বাগান এলাকায় ছবি তুলতে যায়। এই অপরাধে বেড়ার ওপার থেকে বিএসএফ জওয়ানরা এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়।
পাটগ্রাম থানার ওসি আশরাফুজ্জামান সরকার দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে মহেশপুর সীমান্তে রিয়াজসহ সাত-আটজন ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন ফতেপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেন। গুলিবিদ্ধ রিয়াজকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমন হোসেন বলেন, ‘রিয়াজের শরীর থেকে ছররা গুলির কিছু অংশ বের করা হয়েছে। তবে একটি গুলি কিডনির মধ্যে ঢুকে গেছে।’
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মধুপুরের ওপারে ভারতীয় অংশে ওবায়দুল ইসলাম নামের এক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। গত ৮ এপ্রিল একই উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে ওয়াসিম নামের এক বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করে।