ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭
বাজার পরিস্থিতি

পেঁয়াজ তেল সবজির দামে আবারও অস্বস্তি

  • কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
  • পুরনো বোতলজাত সয়াবিন তেল বর্ধিত নতুন দামে বিক্রি
  • কিছুটা সহনীয় আলু, ডিম ও মুরগির দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পেঁয়াজ তেল সবজির দামে আবারও অস্বস্তি

ঈদের পর বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামে হঠাৎ আবার অস্বস্তি শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের ভরা মৌসুম এখন। এর পরও কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। গত মঙ্গলবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছে।

সয়াবিনের বিকল্প পামতেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। সবজির সরবরাহ কমায় প্রায় সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। তবে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে আলু, ডিম ও মুরগিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম।

এদিকে বাজারে নির্ধারিত নতুন দরের তেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরনো সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে তদারকি না থাকায় ব্যসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ পাইকারিতে দাম বেড়েছে।

ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ঢাকার বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাজারে নির্ধারিত নতুন দরের সয়াবিন তেল এখনো আসেনি।

বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট থাকায় অনেকে এই সুযোগ নিচ্ছেন। পুরনো বোতলজাত তেল বিক্রি করছেন নতুন দামে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য বলছে, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪৬ টাকায়।

বাড্ডার খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হেলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে দাম বাড়ার হার অস্বাভাবিক। সিন্ডিকেটও সক্রিয় রয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে।

পুরনো বোতলজাত তেল নতুন দামে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলছেন, দাম বাড়ানোর ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী কম্পানির ডিলাররা আগের দামে আর তাঁদের কমিশন দিচ্ছিলেন না। ডিলাররা কমিশন ছাড়াই বোতলের গায়ের দামেই খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে বোতলের গায়ের আগের দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

বাজারে নতুন করে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসে সাদিকুল ইসলাম ও মঞ্জরুল হক নামের দুজন ক্রেতা বলেন, নতুন করে কারসাজি শুরু। একদিকে কৃষক পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ভোক্তাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। পাইকারি, মোকাম ও আড়তে এখন থেকে নজরদারি না বাড়ালে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যাবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন ঝিঙা ও লাউ দামি সবজি। ঝিঙা প্রতি কেজি মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৮০ টাকা। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটোল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, শজনে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ টাকা। প্রতি পিস চালকুমড়া ৬০ টাকা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি

শেয়ার
কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি
রাঙামাটিতে টানা ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকাসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল

সুপ্রিম কোর্টকে পূর্ণ ক্ষমতা দিলে বিচারকরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সুপ্রিম কোর্টকে পূর্ণ ক্ষমতা দিলে বিচারকরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন

সুপ্রিম কোর্টের কাছে পূর্ণ ক্ষমতা দিলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বিচারব্যবস্থা বা সরকারি ব্যবস্থা যেকোনো এক জায়গায় ক্ষমতা দিলে সেই ক্ষমতাটা দানবে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দোবশীষ চন্দ্র রায়ের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়।

আগামী ১১ আগস্ট পরবর্তী শুনানি।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, আজকে প্রশ্ন উঠেছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতিসব কিছু সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত একজন সহকারী জজকে বদলির ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠায় সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটির কাছে।

জিএ কমিটি সেটি যাচাই-বাছাই করে এরপর অনুমোদন দেয়। এটিই ক্ষমতার ভারসাম্য। আমরা এই ক্ষমতার ভারসাম্য চাই।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের সমাজে বিচারব্যবস্থা বা সরকারি ব্যবস্থা যেকোনো এক জায়গায় ক্ষমতা দিলে সেই ক্ষমতাটা দানবে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

আজকে যদি সুপ্রিম কোর্টের কাছে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয় তাহলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় করার। একজন বিচারকের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি প্রশাসনিক কাজ। এই কাজগুলো হয়ে থাকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। আমরা মনে করি, এই বিধান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী নয়।

এমনকি এই বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে যে আইন মন্ত্রণালয় একজন সহকারী জজকে বদলি, পদায়ন ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ছাড়া।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে থাকেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিট করেন।

প্রাথমিক শুনানির পর ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এসংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এখন এই রুলের শুনানি চলছে।

 

মন্তব্য
শোকজের জবাবে এনসিপি নেতারা

‘নীরব প্রতিবাদ’ ও ‘চিন্তা করতে’ই কক্সবাজার সফর

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘নীরব প্রতিবাদ’ ও ‘চিন্তা করতে’ই কক্সবাজার সফর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন তাঁরা। এতে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে কিছু বিষয়ের প্রতি নীরব প্রতিবাদে তাঁদের এই কক্সবাজার সফর। এ ছাড়া তাঁরা ধীরস্থিরে চিন্তা করার জন্য সেখানে গেছেন বলে জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার এনসিপির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সারজিস আলম ছাড়া বাকি চার নেতা গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কক্সবাজার সফরে আসা এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এখনো শহরের সাগরপারের বিলাসবহুল হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসে অবস্থান করছেন। গতকাল সকালে এনসিপির নেতা সারজিস আলম ও তাঁর স্ত্রী হোটেল থেকে গাড়িতে ঘুরতে বের হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফেরেননি।

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেলেও তাঁরা কখন কক্সবাজার ছেড়ে যাবেন, এ ব্যাপারে জানা সম্ভব হয়নি।

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইয়াকুব আলী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনসিপির নেতারা হোটেল কক্ষ বুকিং রেখেছিলেন। তবে কক্ষ ছাড়ার সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়ালেও তাঁরা এখনো হোটেলে অবস্থান করছেন। এনসিপি নেতারা হোটেল কক্ষ নতুন করে বুকিং না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার কক্সবাজার অবস্থান করবেন না ছেড়ে দেবেন, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  সারজিস ও তাঁর স্ত্রী গাড়ি যোগে বান্দরবান ঘুরতে গেছেন।

বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁদের সফরসূচি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির ঐতিহাসিক দিন হঠাৎ করে কক্সবাজারে আসেন এনসিপির পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁরা হলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারা, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও খালিদ সাইফুল্লাহ। এ ছাড়া সার্জিসের স্ত্রী রয়েছেন। এর পর থেকে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।
এই গুঞ্জনের মধ্যে উখিয়ার ইনানীর সী পার্ল হোটেলে এক রাত অবস্থান করে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টসংলগ্ন হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে ওঠেন। বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় এনসিপি নেতাদের দলটি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সী পার্ল হোটেল ত্যাগ করেন। দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে পৌঁছান। পরে সেখানে শালিক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খান তাঁরা। বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত তীরের অভিজাত হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে গিয়ে ওঠেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সফরে যাওয়ার ঘটনায় গত বুধবার পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এনসিপি। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। তবে সশরীর উপস্থিত না হলেও যথাসময়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আবদুল্লাহর নোটিশের জবাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্টে প্রকাশ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে ফেসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাই-বোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একই সঙ্গে এটি ছিল একটি অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে আমি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাঁকে না পেয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করি যে, আমি আমার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি সে সময় অফিসে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন, আমি তাঁকে অনুরোধ করি যাতে তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানান। তিনি আমাকে জানান যে তিনি তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাকে নিশ্চিত করেন যে তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক এতে সম্মতি প্রদান করেছেন। পরবর্তী সময়ে আমার সঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে ফেসবুকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করতে। সাগরের পারে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ-অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।

কক্সবাজার সফরের আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

 

মন্তব্য
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হুমকি

দাবি না মানলে ১২ আগস্ট দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
দাবি না মানলে ১২ আগস্ট দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট

গাড়ি দুর্ঘটনায় চালকের জামিন না পাওয়ার আইন সংশোধনসহ আট দফা দাবি মানতে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে এসব দাবি না মানলে পরদিন ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন সড়কের একটি হোটেলে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের এই ঘোষণা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কফিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, সারা দেশেই দাবির পক্ষে প্রচার চলছে।

উপদেষ্টা দুটি দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আমরা বলেছি, সব দাবি মানতে হবে। আগামী ১১ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নিলে ১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।

আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল এই  সমাবেশের আয়োজন করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মোরশেদুল আলম কাদেরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন হুমায়ুন কবির খান, একরামুল করিম ও হুমায়ুন কবির সোহেল।

কফিল উদ্দিন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, একজন চালকের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁর জামিন মিলবে না, পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা বলছি, দুর্ঘটনার কারণে মামলা হতে পারে, কোর্ট সাজা দিতে পারেন। কিন্তু জামিন পাওয়া যাবে কি না, তা নির্ধারণ করা আদালতের বিষয়।

এটি নাগরিক অধিকার। আইনে জামিন নিষিদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। এই ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।

সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আট দফা দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরো জোরদার হবে এবং ধর্মঘট থেকে পেছানোর সুযোগ থাকবে না।

আট দফা দাবি হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন করা; পুরনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা।

সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা; বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে আগের মতো বহাল করা; মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসেবে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন্ড যানবাহন আমদানির সময়সীমা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা; দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান কার্যকর করা; মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন করা; মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স-নবায়ন দ্রুত দেওয়া এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা বাস্তবায়ন করা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ