ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

গরিবের পাতে উঠছে না ইলিশ!

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী ও গণেশ পাল, গোয়ালন্দ
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী ও গণেশ পাল, গোয়ালন্দ
শেয়ার
গরিবের পাতে উঠছে না ইলিশ!

আজ বাংলা নববর্ষ। বাঙালির ঐতিহ্য এ নববর্ষ এখন পান্তা-ইলিশের দিন হিসেবে পরিচিত। তবে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বর্ষবরণে ইলিশ এখন মধ্য ও নিম্নবিত্তের পাতে সহজে উঠছে না।

অথচ পদ্মা নদীর রাজশাহীর কিংবা গোয়ালন্দ অংশে একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলত।

এত ইলিশ পাওয়া যেত যে খাওয়ার লোক ছিল না। ফলে ইলিশের পচা গন্ধ থেকে বাঁচতে জেলেরা তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। তাঁরা ইলিশের শুঁটকিও তৈরি করতেন। ফরিদপুর-পাবনা হয়ে রাজশাহীর পদ্মায় প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ত ৭০ থেকে ৮০ বছর আগে।
কিন্তু এখন মাঝে মাঝে ছোট ছোট জাটকা ছাড়া বড় ইলিশের আর দেখা পাওয়া যায় না। খুলনা বা বরিশাল থেকে বাসে বা ট্রাকে করে রাজশাহীর আড়তে যে সামান্য ইলিশ আসে, সেটার ওপরই নির্ভর করতে হয় উচ্চবিত্ত ভোজনরসিকদের। পদ্মায় ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় এখন আর ইলিশ মেঘনা থেকে রাজশাহীর পদ্মায় তেমন আসে না বলে দাবি করেছেন অভিজ্ঞরা।

রাজশাহীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর বাজারে গতকাল রবিবার এক কেজি বা তার চেয়ে একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

দিন কয়েক আগেও এটি ছিল এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা কেজি। তিন বছর আগে এই সময় এক কেজি ওজনের ইলিশ রাজশাহীতে পাওয়া গেছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা দরে। দেড় কেজি সাইজের ইলিশ পাওয়া যেত এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে। এখন সেখানে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এই তিন বছরে গড়ে অন্তত ৬০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে ইলিশের দাম।
গতকাল রবিবার রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে। কিছুদিন আগে এই ওজনের ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে।

গতকাল রাজশাহীর নিউমার্কেটের পাশে আড়তে খুচরা দোকানে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন মাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর ইলিশ এক দিনও কিনতে পারিনি। বর্ষবরণের দিন ইলিশ খাব বলে কিনতে এলাম। কিন্তু দাম এত বেশি যে কেনার সাধটাও যেন হারিয়ে গেল।

খুচরা ইলিশ বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, এখন ইলিশ তেমন আসে না। এলেও বেশি দামের কারণে তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না। সারা দিন বসে থেকে ৫০ জন ক্রেতা পাওয়া দায় হয়ে যায়।

এদিকে রাজশাহীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে গত বছরের অক্টোবরে ইলিশ কেটে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিন এভাবে বিক্রিও করতে দেখা গেছে। কিন্তু ২৫০ গ্রামের নিচে কাটা ইলিশ বিক্রি না হওয়ায় ক্রেতারা কয়েক দিন পরই মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে কাটা ইলিশ বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায় মাস না পেরোতেই। 

সাহেববাজারের ব্যবসায়ী আজমত হোসেন বলেন, বছর বিশেক আগেও আমরা রাজশাহীর পদ্মার ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাঝে মাঝে বিক্রি করেছি। এখন ওই ওজনের ইলিশ আর পদ্মায় পাওয়া যায় না। বর্ষায় জাটকা কিছু জেলেদের জালে আসে।

গোয়ালন্দেও পদ্মার ইলিশের আগের দৃশ্য দেখা যায় না। উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাহিরচর গ্রামের জেলে পরান হালদার বলেন, গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে এখন আর আগের মতো ইলিশ নেই। সারা দিন জাল বেয়ে হাতে গোনা কিছু ইলিশ পাওয়া যায়। তবে ইলিশ ধরতে গিয়ে বাঘাইড়, কাতল, পাঙ্গাশসহ ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে।

গোয়ালন্দ পৌর শহরের মাছের আড়তদার বাদল বিশ্বাস জানান, গোয়ালন্দের পদ্মায় ইলিশ নেই বললেই চলে। তাই বরিশাল থেকে ইলিশ মাছ এনে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকার ইলিশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাজাহান শেখ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে পদ্মা নদীর ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু জেলেদের  জালে সামান্য পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। পদ্মা নদীর ইলিশসহ সব মাছের দাম অনেকটা বেশি। গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাটের হালিম সর্দারের আড়ত থেকে নিলামে দুটি ইলিশ কিনেছি। এর মধ্যে একটির ওজন এক কেজি ৭০০ গ্রাম, অন্যটির ওজন এক কেজি ৬০০ গ্রাম। চার হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে ওই দুটি ইলিশ কিনেছিলাম। পরে সামান্য লাভে মাছ দুটি ময়মনসিংহের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ