দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনে তীব্র গরম রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। এমনকি ভোরবেলা থাকছে কুয়াশাচ্ছন্ন। আবার শীত মৌসুম শেষ হতে না হতেই এরই মধ্যে যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে ৪০টি জেলায় মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
তীব্র গরম ও শীতের এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশের ১৮ জেলার ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
ঝুঁকির মুখে থাকা জেলাগুলো হলো টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে ধানের পরাগায়ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জমিতে পানি না থাকলে ধানের পরাগায়ণ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই অবস্থায় কৃষকের সেচের পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। তবে খরাপ্রবণ এলাকায় কিছুটা বৃষ্টিপাত হলেই এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এবারে ৫০ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এবার দুই কোটি ২৬ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করছে তারা।
এর মধ্যে খরাপ্রবণ ১৮ জেলায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৩০ শতাংশ। ফলে এসব এলাকায় ধানের ফলন কম হলে বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে।
ব্রি সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ বুলেটিনের মাধ্যমে ধানে তাপপ্রবাহের (হিটওয়েভ) আগাম সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি গত ২ এপ্রিল জানিয়েছিল, পাঁচ দিন (২-৬ এপ্রিল) দেশের বেশির ভাগ এলাকায়, বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা জেলার বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করতে পারে।
তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় ব্রি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
ধানগাছের বৃদ্ধির পর্যায় বা কাইচ থোড় থেকে শক্ত দানা অবস্থায় থাকলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। জমিতে সর্বদা পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়। ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই প্রিভেনটিভ হিসেবে বিকেলবেলা প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ট্রুপার ৮ গ্রাম/১০ লিটার পানি অথবা নেটিভো ৬ গ্রাম/১০ লিটার পানি পাঁচ দিন ব্যবধানে দুইবার স্প্রে করতে হবে।
ব্রি মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাপপ্রবাহ চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছি। এই মুহূর্তে খরাপ্রবণ এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলে প্রাকৃতিকভাবেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তার পরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পরিস্থিতি মোকাবেলার।’
চাল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা
এদিকে দেশের চাল উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। সংস্থাটির বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের (এফএএস) ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমতে পারে।
বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চালের উৎপাদন (মিলড রাইস বা ভাঙানো চাল) ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটি কমে তিন কোটি ৬৬ লাখ টনে আসতে পারে। আবার গত অর্থবছরে দেশে মোট ধানের আবাদ হয়েছিল এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। চলতি অর্থবছরে সেটি কমে এক কোটি ১৪ লাখ হেক্টরে নামতে পারে। ফলে দেশে এবারে ধানের আবাদ কমতে পারে তিন লাখ ৫০ হাজার হেক্টর।