ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

এখনো সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দাপট, সাবোটাজের শঙ্কা

নিজামুল হক
নিজামুল হক
শেয়ার
এখনো সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দাপট, সাবোটাজের শঙ্কা
আব্দুর রাজ্জাক

ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এখন জেলহাজতে। এরই মধ্যে সাবেক এই মন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী শিরিন আখতার বানু এবং ছেলে রেজওয়ান শাহনেওয়াজ সুজিতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু সাবেক এই মন্ত্রীর সাজানো ছকেই চলছে কৃষি প্রশাসন।

আওয়ামী লীগ রক্ষায় যেসব কৃষি ক্যাডার কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাঠে সরব ছিলেন, অর্থ জুগিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁরা এখনো কৃষি প্রশাসনের দায়িত্বে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর অনুগত কর্মকর্তারা যোগাযোগ করছেন, সাবেক মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা চলছেন। কৃষিতে সাবোটাজ হতে পারে যেকোনো সময়।

বিসিএস কৃষি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব মো. রেজাউল ইসলাম (মুকুল) বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আওয়ামী প্রকল্প পরিচালকদের কাছে জিম্মি। ঠিকাদারদের সঙ্গে মিলেমিশে সরকারি অর্থ লুট করেছেন এসব কর্মকর্তা।

কৃষিবিদরা বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৭টি সংস্থার মাধ্যমে কৃষককে সেবা দিচ্ছে। এই সংস্থার মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রধান ভূমিকা রাখছে। শুধু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরই রয়েছে মাঠ পর্যায়ে কর্মীবাহিনী, যাঁরা প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, উদ্বুদ্ধকরণ, মাঠ দিবসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরাসরি কৃষককে সহায়তা দেন। আর এ কাজে অর্থ সহায়তা করে বিভিন্ন প্রকল্প।

বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রায় ৩০টিরও বেশি প্রকল্প রয়েছে। সাধারণত দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তারাই প্রকল্প প্রস্তুতে সহায়তা করেন এবং তাঁকেই প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় এই নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। প্রকল্প যেই প্রস্তুত করুক না কেন আওয়ামীপন্থী কৃষিবিদ নেতার বাইরে কাউকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগই ছিল না। 

মানসম্মত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুত করেন ড. মাহফুজ হোসেন।

কিন্তু প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর আস্থাভাজন এস এম কামরুজ্জামানকে। একইভাবে আউয়ুবুর রহমানের প্রস্তুতকৃত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছিল বেনজীর আহমেদকে। ড. সাইফুল ইসলামের তৈরিকৃত টিস্যু কালচার প্রজেক্টে তাঁর মতামত উপেক্ষা করে এর প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে তালহা জোবায়ের মাশরুরকে, যাঁর হর্টিকালচারে কাজ করার অভিজ্ঞতাই নেই। একইভাবে অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা না থাকার পরও কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছিল মোহাম্মদ বনি আমিনকে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে পরিচালক করা হয়েছিল ছাত্রলীগের পদধারী জিয়াউর রহমানকে। এভাবে প্রতিটি প্রকল্প সাজানো হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সাবেক নেতাকর্মীদের দিয়ে।

আর এই প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগী কৃষিবিদ হামিদুর রহমান, যাঁকে ৩৪ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মহাপরিচালক করা হয়েছিল। তিনি আবার বর্তমানে একটি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত।

আবার নতুন করে যাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধেও রয়েছে পতিত সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ। প্রগাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আবুল কালাম আজাদকে। যিনি কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আশীর্বাদপুষ্ট এবং তাঁর ছেলের তদবিরে রাজবাড়ী থেকে বদলি হয়ে কিশোরগঞ্জে আসার অভিযোগ রয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ও প্রকল্প পরিচালকদের অর্থায়নে গত বছরের ৪ আগস্ট শেখ হাসিনায় আস্থা জানিয়ে শান্তি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ, যিনি আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এতটাই সক্রিয় ছিলেন যে, তাঁর অবসরের পরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল; যা ডিএই-এর ইতিহাসে প্রথম। যদিও সম্প্রতি তাঁর চুক্তি বাতিল হয়।

বর্তমান মহাপরিচালক সাইফুল আলম ৪ আগস্টের আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিলে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক ছাড়াও আটটি পরিচালকের পদ রয়েছে। প্রতিটি পদেই রয়েছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের আস্থাভাজন কর্মকর্তারা।

সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীপন্থী নেতা ওবায়দুর রহমান মণ্ডল। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধা। সব সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। গত ১৭ বছরে তিনি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে সব সময়ই সুবিধাজনকভাবে পদায়ন নিয়েছেন। পরিচালক, প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পদে রয়েছেন মো. হাবিব উল্লাহ, যিনি শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামালের মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা এবং পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এলাকায় তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

অন্যদিকে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্তমান মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার শেখ হাসিনার আস্থায় বিশ্বাসী। গত বছরের ৪ আগস্ট শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাখার পক্ষের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এই কর্মকর্তাকে এখনো মহাপরিচালক হিসেবে বহাল রাখার প্রতিবাদে ফার্মগেটের বিভিন্ন দেয়ালে তাঁর ছবিসংবলিত পোস্টার সেঁটে দিয়েছে ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগঠন

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদও  আব্দুর রাজ্জাকের আস্থাভাজন হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিপক্ষের শক্তির নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী সরকার পতনের পরও আব্দুর রাজ্জাকের আস্থাভাজন কর্মকর্তা রয়েছেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনেও। সাবেক মন্ত্রীর আস্থাভাজন ড. বখতিয়ারের নির্দেশনায় এই সংস্থাটি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেজিএফের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার সাবেক কৃষিমন্ত্রীর স্বজনদের পরামর্শ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন বলেন, খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছেন। এমনকি বর্তমান কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন। নতুন পদায়নেও তাঁরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। অনেক অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তিনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ