রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এখন ২০ টাকা কেজিতে মিলছে নতুন আলু, যা গত দেড়-দুই মাস আগেও ছিল ৬০ টাকার ওপরে। একই সঙ্গে সব ধরনের শীতকালীন সবজির দরেও স্বস্তি এসেছে। খুচরা বাজারে এখন ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে আলু ও সবজির দাম কমে যাওয়ায় খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক।
এরই মধ্যে বাজারে নতুন রসুন চলে এসেছে। এতে দামও কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজ ও আদার দামও বেশ কমেছে। বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। এতে অস্বস্তিতে আছে সাধারণ মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, মহাখালী কাঁচাবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের নতুন আলু প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, নতুন দেশি রসুন প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
আমদানি করা রসুন আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিনির প্যাকেট ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা কেজি।
রামপুরা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কম থাকায় বিক্রি করতেও ভালো লাগছে। বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্যান্য পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
এতে দামও কমতির দিকে। আশা করছি, এবার রমজানে পণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম মানভেদে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা, পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা।
জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিলন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সবজির উৎপাদন খুব ভালো হওয়ায় বাজারে দাম একদম কমে এসেছে। অন্যান্য বছর সবজির মৌসুমেও এত কমে সবজি বিক্রি হয়নি।’
বাজারে মুরগির দাম এখনো চড়া। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরায় ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৩০ টাকা।
আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক
দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ। লোকসানের ভয়ে কেউ কেউ আলু তোলা বন্ধ রেখেছেন। কৃষকেরা সরকারের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন। আলু চাষিরা বলছেন, বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ আর শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠছে না।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বামন গ্রামের কৃষক গাফফার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণ করে আলু চাষ করেছি। কিন্তু দাম এমন কম যে, পাওনাদারদের টাকা দিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে কেজিপ্রতি আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা ২০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।’
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কালাই উপজেলা (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি]