ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

দেড় হাজার কোটির হাসপাতাল অচল

শিমুল মাহমুদ
শিমুল মাহমুদ
শেয়ার
দেড় হাজার কোটির হাসপাতাল অচল

উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যায়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। বাক্সবন্দি শতকোটি টাকার যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ। চালুর আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ অনেক যন্ত্রাংশের।

দেড় হাজার কোটির হাসপাতাল অচলজানা গেছে, হাসপাতাল নির্মাণের আগে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে জনবলকাঠামো ও হাসপাতাল পরিচালনার নীতিমালার তথ্য জমা দেওয়া হয়নি।

আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে লুটপাটের প্রতিযোগিতায় নামেন বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী।

সাবেক উপাচার্য অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন তিন শতাধিক অদক্ষ মেডিক্যাল অফিসার, নার্স ও কর্মচারী। আর হাসপাতাল নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি কিনে অর্থ আত্মসাৎ করেন প্রকল্প পরিচালক। শুরুতে দুজনের সম্পর্ক আস্থার মধ্যে থাকলেও শেষটা ছিল টানাপড়েনের।

তখন গণমাধ্যমে একের পর এক খবর আসতে থাকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে। সংবাদ প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায় লোকবল নিয়োগ। তবে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বিষয়টি চালু থাকে।

বিএসএমএমইউয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৪০৩ রকমের ছয় হাজার ৬১২টি চিকিৎসাযন্ত্র কেনা হয় প্রায় আড়াই শ কোটি টাকায়।

জনবল না থাকায় ৭০ শতাংশ যন্ত্রপাতি এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এসব যন্ত্রের মেয়াদ রয়েছে তিন বছরের কমবেশি। ফলে ব্যবহারের আগেই মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক যন্ত্রের। এদিকে যন্ত্রাংশ ত্রুটির দায় সময়কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবর্তনেরও সুযোগ নেই।

 

কেন এই হাসপাতাল

কেন্দ্রভিত্তিক চিকিৎসাসেবা প্রদানে হাসপাতালটি করা হয়েছে।

এতে জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হূদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, কিডনি রোগ কেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকবে। এসব কেন্দ্রে যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে তাতে করে রোগীর অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার হবে না। সব ধরনের পরীক্ষা করে একই ছাদের নিচে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দেশে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিরুৎসাহ করাও ছিল বড় উদ্দেশ্য। এতে মানুষের দুর্ভোগ ও চিকিৎসা ব্যয় উভয়ই কমবে।

 

সরেজমিনে গিয়ে যা দেখা গেল

গতকাল সোমবার দুপুরে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নিচতলার রিসিপশনের পুরো লাউঞ্জে কোনো এসি নেই। শীতের দিনেও গরম অনুভূত হচ্ছে। ১০০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তালা ঝুলছে। বন্ধ আছে দুটি ভিভিআইপি ও চারটি ভিআইপি কেবিন। ৫৮ সাধারণ কেবিনে ভর্তি রয়েছে ২৩ জন রোগী। এ ছাড়া ১০০ শয্যার জরুরি ইউনিটে চিকিৎসা চলছে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগীর। উদ্বোধনের পর কিছুদিন বেশ কিছু অস্ত্রোপচার হলেও এখন তা-ও বন্ধ।

হাসপাতালের কিছু জায়গায় এসির পাইপ চুইয়ে দেয়াল ভিজে আছে। শৌচাগারের পানি ওয়ার্ড ও কেবিনে চলে আসে। বেশ কিছু ফ্লোর টাইলসে শেওলা পড়ে গেছে। পলেস্তারা ও পেইন্ট খসে পড়ছে। এক্স-রে মেশিনের বেশির ভাগই অ্যানালগ পদ্ধতির, সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যবহূত হচ্ছে পুরনো কয়েকটি মেশিন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অকেজো অনেক আগে থেকে। আইপিএসগুলো ব্যবহূত না হওয়ায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও আধুনিক নয়।

আইসিইউসংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, আইসিইউ ভেন্টিলেটরের ফিল্টার ও অন্যান্য সাপোর্ট ডিভাইস নেই। একই সঙ্গে পোস্ট-ট্রান্সপ্লান্ট আইসিইউ নেই।

প্রথম বছরেই যে সমস্যাগুলো উঠে আসে  : প্রকল্পে স্বয়ংক্রিয় গেট ও পার্কিং ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হলেও ক্রটিপূর্ণ যন্ত্রের কারণে ব্যবস্থাটি কাজ করে না। হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে সাধারণের চলাচলের পথে ঘাস লাগিয়ে অর্থের অপচয় করা হয়। পশ্চিম পাশে পাঁচ হাজার লিটার অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সেটি সঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। এতে অক্সিজেন সরবরাহকারী কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সেটি অব্যবহূত।  হাসপাতালের বেইসমেন্ট-২-এ মর্গ থাকলেও মরদেহের গোসলের ব্যবস্থা নেই। বেইসমেন্ট-১-এ গাড়ি ওঠা ও নামা ঝুঁকিপূর্ণ। পার্কিং টাইলসের স্থলে ব্যবহূত হয়েছে পিচ্ছিল টাইলস। এতে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

লেভেল-১-এ অবস্থিত জরুরি বিভাগে ১০০ শয্যার জায়গায় শয্যা রয়েছে মাত্র ৫০টি। বাকি ৫০ শয্যা রাখা হয়েছে লেভেল-৭-এ। এতগুলো রোগীর জন্য শৌচাগার রয়েছে মাত্র চারটি। জরুরি অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকদের হাইজিন ব্যবস্থা ও ড্রেস পরিবর্তনে কোনো কক্ষ রাখা হয়নি।

হাসপাতালের কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা থাকলেও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতিস্থাপনের জন্য আলাদা কোনো আইসিইউ রাখা হয়নি। হাসপাতালে কোরিয়ার তৈরি লিফট ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহূত হয়েছে চায়না লিফট। লেভেল ৭, ৮ ও ৯-এ অবস্থিত ওয়ার্ডগুলোতে মোট ৫৪০টি শয্যা থাকলেও ৪৪৪ শয্যায় কোনো এসি বা চিলারের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে উন্নতমানের ফ্লোর টাইলস ব্যবহারের কথা থাকলে তা ব্যবহূত হয়নি, যা এক বছরের মধ্যে নষ্ট হওয়া শুরু করেছে। প্রকল্পে এক হাজার পিএবিএক্স টেলিফোন সংযোগের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটি সংযোগও দিতে পারেনি। মাস্টার ডাটা সংগ্রহের কাজটি পুরোপুরিভাবে করা হয়নি। দুটি ইকো মেশিনই পুরনো মডেলের, যা কোনো আধুনিক হাসপাতালে ব্যবহার হয় না। এক্স-রে মেশিনগুলো অ্যানালগ পদ্ধতির, যার প্রচলন নেই।

শুরু থেকে প্রকল্পের উপপরিচালকের দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক নূর-ই-এলাহী মিম কালের কণ্ঠকে বলেন, তিন কারণে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যায়নি। এক. নানা ত্রুটি নিয়ে হাসপাতাল চালু হয়; দুই. হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বিএসএমএমইউ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা; তিন. গত দুই বছরে পটপরিবর্তন হওয়া। যে কারণে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে হাসপাতালে পরিচালনার কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে যেসব যন্ত্রাংশ দেওয়ার বিষয় উল্লেখ রয়েছে, এর বাইরে এখনো কোনো যন্ত্রাংশ আমরা পাইনি। এখনো অনেক যন্ত্রের ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি আছে। এর পরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেটা সমন্বয় করে ঠিক করার সুযোগ রয়েছে; যেহেতু পুরো টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।’

চালুর জন্য এক বছর সময় পেয়েছি : বিএসএমএমইউয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগের প্রশাসনে সবাই আমার সিনিয়র, আমি উনাদের সম্মান করি। আগে কী হয়েছে সে বিষয়ে বলতে চাই না। আমি মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ, রক্ষার দায়িত্বও আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে আমাকে এবং নতুন উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শাহিনুল আলমকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এক বছর সময় পেয়েছি। এই সময়ে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে প্রশাসন সাজাব। সিন্ডিকেট ও গভর্নিং বডি পরিবর্তন করব। আমরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ঋণের টাকা এখনো দেওয়া শুরু হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। এটুকু নিশ্চিয়তা দিতে চাই, অর্থনৈতিক কোনো বদনাম শুনবেন না।

জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশটির এক্সিম ব্যাংক এর অর্থায়ন করছে। ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একনেক প্রকল্প অনুমোদন করে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

শেয়ার
শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।

পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সোয়া ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।

ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।

মন্তব্য
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব

৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কমিশন থেকে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য
খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা

আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এদিকে সিসিটিভির  ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।

তবে ওই মামলায় এ পর্যন্ত মোট দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার  রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।

যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।

দুটি গুলি তাঁর মাথা ও মুখের ডান পাশে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই পায়ের রগ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।

কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ