ইন্তিফাদা বাংলাদেশ অভিযোগ করেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হয়ে এখন আমেরিকান আধিপত্যবাদ কবুল করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাপলা চত্বরে শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে সংগঠনটির নেতারা এ মন্তব্য করেন।
গণসমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো—আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে কর্মরত খুনি ও ধর্ষকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সাজানো জঙ্গি নাটক ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে, ইসলামবিরোধী সংস্কার বাতিল করতে হবে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি গণ-আন্দোলনে ইসলামপন্থীরা রক্ত দিয়েছে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু তার পরবর্তী বাংলাদেশে ইসলামকে জনপরিসর থেকে বাদ দেওয়ার এক সচেতন চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনও ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী এজেন্ডা নিয়ে হাজির হয়েছে।
তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকাগুলো প্রশাসনের সঙ্গে মিলে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে নিরপরাধ মানুষকে কারাবন্দি করেছিল, গুম-খুন করেছে এবং ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে, যা আজও চলছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফুল্লাহ বলেন, ২০২১ সালে প্রায় সাত হাজার আলেম-উলামা কারাবন্দি ছিলেন। তাঁদের অনেককে ‘শতাব্দী’ নামের একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, যেখানে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও রাখা হয়। সেখানে এক শিশুকে দেখা যায়, যাকে শুধু একটি ফেসবুক কমেন্টের জন্য বন্দি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কী করলে জঙ্গি হয়, তার একটি তালিকা করা হোক। তাহলে দেখা যাবে, আমাদের আগে জঙ্গিবাদী কাজ করছে সরকারি দলের লোকেরাই।’ মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালে আওয়ামী লীগকে পিটিয়ে দাদার দেশে পাঠানো হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশে মুজিববাদের রাজনীতি করতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কাফনের কাপড় পরে রাজপথে না নামলে দেশ স্বাধীন হতো না।
সমন্বয়করা তাদের স্বার্থে আন্দোলন করেছে। দেশ স্বাধীন হলেও এখনো জঙ্গি নাটকের শিকারদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। আগামী দুই মাসের মধ্যে সব আলেমকে মুক্তি দিতে হবে।’ ইন্তিফাদা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিয়ান পাবলিকেশনের এমডি আহমাদ রফিক বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, মুসলিম বিশ্বজুড়ে পশ্চিমা শক্তি সেক্যুলারদের দিয়ে রাজত্ব কায়েম রাখে। আমাদের কেবলা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে দিতে হবে। জাতিসংঘের নাম করে দেশে মানবাধিকার নয়, বরং সমকামিতার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় তারা।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাস করে না। অথচ আওয়ামী লীগের অপরাধের সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। জাতিসংঘ সেই দণ্ড বাধাগ্রস্ত করতে এ দেশে অফিস খুলতে চায়, যা মেনে নেওয়া হবে না।
ইসলামী বক্তা আসিফ আদনান বলেন, ‘শাপলা চত্বরে মুমিনদের গুলি করে শহীদ করা হয়েছে। আজ আবার তৌহিদি জনতা এখানে জড়ো হয়েছে। আমরা এখনো আমাদের অধিকার ফিরে পাইনি। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও ইসলাম কায়েম হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার গোপন চুক্তি, জাতিসংঘ অফিস প্রতিষ্ঠার মতো দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। অথচ আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিচার এখনো হয়নি। আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেব।’ বক্তারা আরো বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ইসলামপন্থীদের অবদান উপেক্ষা করা হয়েছে। বরং নতুন করে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে আলেমদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাঁরা জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের নামে মিথ্যা মামলার নিন্দা জানান।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইন্তিফাদা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মীর ইদরীস। আরো বক্তব্য দেন মুফতি তারেকুজ্জামান, ডা. মেহেদী হাসান, ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি, এস এম ফাহিম, জাকারিয়া মাসউদ, মুফতি জসিমুদ্দীন রাহমানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফা মনজুর, ড. সরোয়ার, মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসুদ, মাওলানা রিদওয়ান, মাওলানা তানজিল আরেফিন আদনান, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা ইমরান রায়হান, রাফিউজ্জমান, মাওলানা ইনামুল হাসান ফারুকী, মাওলানা ফুআদ মুবতাসিম, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, কাজী মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।