ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বেনজীরের সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বেনজীরের সম্পদ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর, মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরসহ তাঁদের মালিকানায় থাকা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের এই আদেশের মাধ্যমে বেনজীর পরিবারের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার ও সাভারের সম্পত্তি, রিসোর্ট, স্থাপনা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে এলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন প্রশাসক নিয়োগের এই আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।

হাফিজুল ইসলাম বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের ক্রোক করা স্থাবর সম্পদ দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পর শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। তিনি আরো বলেন, বেনজীরের ৬২১ বিঘা স্থাবর সম্পদ ঢাকা, সাভার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কক্সবাজারে রয়েছে।

গোপালগঞ্জে থাকা ২৮টি পুকুর দেখভালে জেলার মৎস্য কর্মকর্তাকে, কক্সবাজারের সম্পত্তি দেখভালে জেলা প্রশাসককে এবং সাভারের স্থাবর সম্পদ দেখভালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অন্য স্থাবর সম্পদগুলো দেখভালে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট দেখভালে দুদকের পরিচালককে (সম্পদ ব্যবস্থাপনা) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের এই আইনজীবী আরো বলেন, যাঁদের রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মূলত ক্রোক করা সম্পত্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।

ওই সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব একটি নির্দিষ্ট সময়ে আদালতকে জানাবেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করা হতে পারে। তখনো রিসিভার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন।

 

গোপালগঞ্জের সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের অধীনে

দুদক সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসককে সেখানে থাকা বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের সম্পত্তি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আদালতের এই আদেশের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে কেনা ৬৫টি দলিলের ৩০২.৫৮ বিঘা ক্রোক করা জমি দেখভাল করবেন জেলা প্রশাসক, যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ৯ কোটি ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় রেজিস্ট্রি করা তিনটি এবং কোটালীপাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় থাকা ছয় দলিলের জব্দ করা জমিও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক দেখভাল করবেন। সম্পদগুলো বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠান সাভানা অ্যাগ্রোর নামে কেনা হয়।

 

মৎস্য খামার দেখবেন গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা

গোপালগঞ্জের মৎস্য খামার দেখভালের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে। বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভানা অ্যাগ্রো। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে গোপালগঞ্জের সাভানা রিসোর্টের ভেতরে আছে বিশাল আকৃতির ১৫টি পুকুরসহ মোট ২৮টি পুকুর। এসব পুকুর দেখভাল করবেন গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। ২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনজন। ১০টি শেয়ারধারী স্ত্রী জীশান মীর্জা চেয়ারম্যান, সমপরিমাণ শেয়ারের অধিকারী ২৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এমডি। আর ২৪ বছর বয়সী মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর আছেন পরিচালক হিসেবে।

 

মাদারীপুরের সম্পত্তি দেখবেন জেলা প্রশাসক

বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের মালিকানায় থাকা ২৭৩ বিঘা সম্পত্তি দেখভালের জন্য মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিয়েছেন আদালত।

দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে জীশান মীর্জার নামে ১১৪টি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। মাদারীপুর জেলার রাজৈর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ৬০ নম্বর সাতপাড়া ডুমুরিয়া মৌজায় এসব জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। উল্লেখিত দলিলগুলোতে জমির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ১৬ শতাংশ বা ২৭৩ বিঘা। এসব জমির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যদিও বাস্তবে এসব জমির ক্রয়মূল্য দলিলে দেখানো মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি। বেনজীর আহমেদ পুলিশের আইজি থেকে অবসরে যাওয়ার আগের ৫৯৪ দিনে বিপুল এই সম্পদ কিনেছেন। এ হিসাবে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৫.১৬ শতাংশ জমি কিনেছেন। তিনি অবসরে যান ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। আর মাদারীপুরের জমিগুলো কেনেন ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। জমি কেনা শুরু করেন ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি।

 

কক্সবাজারের সম্পত্তিও জেলা প্রশাসক দেখভাল করবেন

বেনজীর আহমেদের কক্সবাজারের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানকার জেলা প্রশাসককে। বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফরহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানীতে এবং সেন্ট মার্টিনের জিনজিরা দ্বীপে থাকা সাতটি দলিলের সম্পত্তি দেখভাল করবেন জেলা প্রশাসক।

 

সাভারের সম্পত্তি দেখভাল করবেন ইউএনও আদালতের নির্দেশে সাভারে থাকা বেনজীরের একটি দলিলের সম্পত্তি দেখভাল করবেন সেখানকার ইউএনও।

 

মানবিক কারণে গুলশানের ফ্ল্যাটে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি

দুদক সূত্র জানায়, গুলশান আবাসিক এলাকার সিইসি (জি) ব্লকের ১৩৪ নম্বর (পুরনো ১৩০) প্লটের ১২ কাঠা ১২ ছটাক জমির ওপর দুটি বেইসমেন্টসহ নির্মিত রেনকন আইকন টাওয়ারে ৯ হাজার ১৯২.৭৮ বর্গফুট ফ্ল্যাট ক্রয় করে বেনজীর আহমেদের পরিবার। চারটি ফ্ল্যাটের সমন্বয়ে বানানো হয় এটি। দুদক ডুপ্লেক্স এই ফ্ল্যাটে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার আবেদন করে। তবে আদালত জানান, যেহেতু এই ফ্ল্যাটে বেনজীর আহমেদ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন, সেহেতু মানবিক কারণে এটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেবেন না। তবে ফ্ল্যাটটি জব্দ অবস্থায় থাকবে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি প্রশাসক নিয়োগ না করলেও গুলশানের এ চারটি ফ্ল্যাট দেখভালে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়িত্ব দেন আদালত।

এদিকে আদালতে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের জন্য দুদকের আবেদনে বলা হয়, উল্লেখিত (বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের) স্থাবর সম্পদের সঠিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ আদালতের আদেশে ক্রোক করা বর্ণিত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে রিসিভার না থাকায় তা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে জমি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও বেশ কিছু জমিতে রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, কটেজ, ডরমিটরিসহ গাছ, বাগান, পুকুর, পশুর খামার, মৎস্য খামার রয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকম রাইড, বোট ও রাতযাপনের কটেজ রয়েছে। ফলে সেখানে জমি ও তার উপরিস্থিত স্থাপনা, স্থাপনায় রক্ষিত আসবাব, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বর্ণিত অন্যান্য মাল, যন্ত্রপাতি, মেশিনারি ক্রোকের আওতাভুক্ত করে ক্রোক করা যাবতীয় সম্পদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রিসিভার নিয়োগ করা হলে পরবর্তী সময়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন সহজতর হবে।

গত ২৪ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর, তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ২৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট), চারটি ক্রেডিট কার্ড ও ছয়টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে একই আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর, তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।

কালের কণ্ঠে বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগবনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। মূলত এর পরই দুদক বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নোটিশ পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। তবে তার আগে গত বুধবার আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন বেনজীর।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু

শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর)। এই আলোচনা ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প গত ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া বাণিজ্যসচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

এর আগে সোমবার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।

এদিকে শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান আশা করেছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আমরা ভেবেছিলাম শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। যেসব কারখানার রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার। শুরু থেকেই আমরা সরকারকে বলেছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে।

আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রস্তুতি রেখেছি। কিন্তু শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি।

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

 

মন্তব্য

শিশু কান্না

শেয়ার
শিশু কান্না
দাবি আদায়ে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন তথ্য আপারা। গতকালও মিছিল করেন তাঁরা। বাড়িতে ছোট সন্তানদের দেখার কেউ না থাকায় সঙ্গে নিয়ে আসেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রো রেল স্টেশনে বসিয়ে রাখেন তাদের। দীর্ঘ সময় একা থেকে এক শিশু কান্না শুরু করেছে। পাশেই আরেক শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে। গতকাল তোলা। ছবি : শেখ হাসান
মন্তব্য
চীনা রাষ্ট্রদূত

বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরো অনুকূলে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে চায়না-বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত।

ইয়াও ওয়েন জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০টি চীনা কম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাদের মোট প্রত্যাশিত বিনিয়োগ অঙ্গীকার কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেছেন, সুরক্ষার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ফোরামের আলোচনা হচ্ছে। এতে অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কিছু নেই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো, এনার্জি, বন্দর খাতে বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ আছে।

এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী।

চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিএইবি) আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো দেশ বিনিয়োগ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিডা সহযোগিতা করবে। চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে সেখানে বিডার একটি অফিস খোলা হবে।

তবে বাংলাদেশে চায়না টাউন নেই। ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী ও দক্ষ শ্রমশক্তিকে, বৈশ্বিকভাবে কাজ করা চীনা কম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে শীর্ষ দেশও চীন। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের এনার্জি ও বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার আরো সুযোগ আছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন চীনা কম্পানি আইসিটি খাতে সহযোগিতা করছে। সাইবার নিরাপত্তা খাতেও আমরা চীনের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে আমাদের হাই-টেক পার্কে চীনা বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আরো সুযোগ নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাহেলা আক্তার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোকছেদ আলী ও ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম বেপারী।

 

১২ ক্ষেত্রে কাজ করতে সম্মত তিন দেশ

সম্প্রতি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২টি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ইয়াও ওয়েন জানান, ১২টি ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, শিল্প, পরিবেশ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি সহযোগিতা ইত্যাদি। তিন দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা।

এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন সুরক্ষা পেতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যেই এই বৈঠক হয়েছে। তবে সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি, কেননা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের বিষয়।

মন্তব্য

কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

    তাজুল : রাজনীতি মানেই দুর্নীতি—শেষ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন

সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আদি ব্যবসা ছিল চোরাচালান। চোরাচালানের মাধ্যমেই ব্যবসায় হাতিখড়ি হয়েছিল তাঁর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন এই দুর্নীতিবাজ। সেখান থেকে তিনি আবার তাঁর পুরনো ব্যবসা নতুন করে চালু করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাজুল কলকাতায় অবস্থান করে বাংলাদেশ-ভারতের চোরাচালানের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কলকাতায় বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ-ভারত চোরাচালান রুটে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণ করেছেন তাজুল। কলকাতায় চোরাচালানের পুরনো সাথিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন করে শুরু করেছেন তাঁর আদি ব্যবসাটি।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর বিপুল সম্পদ আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠরা সেই সম্পদগুলো দেখভাল করছেন। তাজুলের আত্মীয়, এপিএস এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাইয়েও তাজুলের রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।
দুবাই ছাড়াও তাঁর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। তবে তাজুল কৌশলগত কারণে কলকাতায়ই অবস্থান করছেন। তাঁর ছোট ভাই অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে তাজুলের নির্দেশে।

কলকাতা থেকে তাজুল নিজে এখন দুবাই যাচ্ছেন না। কারণ দুবাইয়ে তাঁর যেসব সম্পদ আছে সেগুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্বস্ত লোক রয়েছে। কলকাতা থেকে ব্যবসা পরিচালনা তাঁর জন্য সহজ। এখনো বিপুল অবৈধ অর্থের লেনদেনের লোভেই কলকাতায় থিতু হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে শুধু তাজুল ইসলাম নয়, তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামেরও বিপুল সম্পদ রয়েছে। দুবাইয়ে কমপক্ষে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তাজুল। এসব অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর ছোট ভাই ও এপিএস এগুলো দেখাশোনা করেন। দুবাইয়ে তাজুল ইসলামের আরো কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলো আছে অন্যদের নামে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাজুলের একাধিক বাড়ি রয়েছে। সেগুলোও আছে অন্যদের নামে। এসব বাড়ি দেখভাল করেন তাজুল ইসলামের ছেলে ও ভাতিজা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তাজুল ইসলামের বাড়ি রয়েছে দুটাি। বাড়ি দুটির মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কানাডার টরন্টোতেও তাজুল ইসলামের বাড়ি আছে। বাড়িটি এক কেয়ারটেকার দেখাশোনা করছেন। দেশে তাজুলের জব্দ হওয়া সম্পদ তাজুলের প্রকৃত সম্পদের তুলনায় সামান্যই। দেশে তাজুলের বেশির ভাগ সম্পদই এখনো অনেকের কাছে অজানা। বিদেশেও তাঁর বহু অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে খোঁজ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বেনামি সম্পদগুলোর ব্যাপারে দুদক কিছু করতে পারছে না। দুদক শুধু সেটুকুই জব্দ করেছে, যেগুলো তাজুলের নিজের বা তাঁর পরিবারের নামে ছিল। যেসব সম্পদ বেনামে রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর দেশে বিভিন্ন নামে, এমনকি তাজুলের গাড়িচালকের নামেও জমি, ফ্ল্যাট রয়েছে। শুধু রাজধানীর গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় নয়, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মিরপুরেও বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর। ঢাকা মহানগরে তাজুল ইসলামের কম হলেও ৪২টি ছোট-বড় ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে দোকান রয়েছে কম হলেও ৫০টি। এসব ফ্ল্যাট ও দোকান তাঁর সহকারী, গৃহকর্মী ও গাড়িচালকের নামে কেনা হয়েছে। তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন আজমল। আজমলের নামে মিরপুরে একটি এবং জোয়ারসাহারায় আরো একটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে আজমল পলাতক রয়েছেন। তবে তাঁর নামে কেনা এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাঁরা জানেন, এটি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাড়ি। ধানমণ্ডি ও খিলগাঁওয়ে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাজুল ইসলামের বিশেষ সহকারীর নামে। এ ছাড়া তাজুল ইসলাম যে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার, সেই ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার নামেও বাড়ি আছে। এগুলোর মূল মালিক তাজুল। তাজুল তাঁদের দিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। আবার হেবা দলিলের মাধ্যমে এসব সম্পদের নিজের মালিকানা নিশ্চিত করেছেন। বাড়িগুলো এখন পর্যন্ত জব্দ করা হয়নি। এসব বাড়ির ভাড়া বাবদ যে বিপুল অর্থ আসছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় যাচ্ছে তাজুল ইসলামের কাছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এখনো তাজুল ইসলামের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সেখান থেকে অর্থ তোলা হচ্ছে। কুমিল্লা শহরে তাজুল ইসলামের বেনামে একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। ভাড়ার অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছেন। এ কারণে তাজুল কলকাতায় সপরিবারে অবস্থান করছেন নির্ভাবনায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, কলকাতায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা অভাব-অনটনে আছেন। তবে তাজুল নিউ টাউনের একটি সুরম্য ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকছেন। বিশাল ফ্ল্যাটে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়ায় থাকেন বলা হলেও কেউ কেউ মনে করছেন, চোরাচালানের চক্রের পক্ষ থেকে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁকে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বাংলাদেশে যেমন রাজকীয়ভাবে তাজুল ইসলাম চলতেন, এখন কলকাতায়ও ঠিক একই রাজকীয় কায়দায় চলছেন। বিলাসবহুল গাড়ি, দামি বাড়ি ছাড়াও তাজুল ইসলামের রয়েছে ব্যক্তিগত কর্মচারী। সম্প্রতি একটি অফিসও নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তাজুল ইসলাম শিগগিরই দুবাই যাবেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পরই তাজুল বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর এপিএস ও ছোট ভাইদুজনই গত বছরের ৩ আগস্ট দুবাই চলে যান। তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করেন। তারপর সেখান থেকে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফেরেন। সূত্র জানায়, তাজুল ইসলাম তাঁর পুরনো ব্যবসা ঠিকঠাক করে দুবাইয়ে পাড়ি জমাবেন এবং সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের বেশি সময়ে রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন তাজুল। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন, তার খুব সামান্যই এখন পর্যন্ত নজরে এসেছে এবং দুদক সেগুলো জব্দ করেছে। এখনো তাঁর বিপুল সম্পদ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও তাজুল বহাল তবিয়তে আছেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ