<p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে চিনি আমদানির ব্যয় বৃদ্ধিতে রেকর্ড হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ চিনি আমদানি করা হয়েছে। এমনকি পণ্য আমদানিতে সরকারের কড়াকড়ি আরোপের পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চিনি আমদানিতে প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনির সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে, যা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। আবার ডায়াবেটিস রোগীরা জেনে বা না জেনে চিনি থাকা অনেক প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাচ্ছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই পরিস্থিতিতে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও চিনির আমদানিও সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলায় স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে চিনি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বরে ৫০ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের চিনি আমদানি করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে চিনি আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৪১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রক্রিয়াজাত নানা খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর চিনি, লবণ ইত্যাদি উপাদান ব্যবহৃত হয়। এসবের মাত্রা বেশি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীরা কমবেশি অনেক প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাচ্ছে। অন্যদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা পরোক্ষভাবে অনেক খাদ্যের সঙ্গে চিনি গ্রহণ করছে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে চিনি আমদানিতে ১২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছরে এই পণ্যটি আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৯ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে চিনি আমদানি ব্যয় বছরের ব্যবধানে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চিনি আমদানিতে ব্যয় হয় সাত হাজার ৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিসাবে ২০২৩ সালে চিনি আমদানিতে ব্যয় দ্বিগুণের কাছাকাছি উঠেছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যবসায়ী সংগঠন এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে চিনির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ লাখ টন। বর্তমানে চিনির চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিবছর চিনির চাহিদা বেড়েছে এক লাখ টন। এখন দেশীয় চিনির উৎপাদন চাহিদার তুলনায় মাত্র ১ শতাংশের কম। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় কমবেশি ২১ হাজার ৩০০ টন। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি হয় অপরিশোধিত চিনি। ২০২৩ সালে ১৭ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর বাইরে সামান্য স্থানীয় উৎপাদন ছাড়া বাকিটা পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। ওষুধ কম্পানি ছাড়া ২৫ থেকে ২৭টি খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিনি আমদানি করে। বেশির ভাগ চিনি আমদানি করে চার-পাঁচটি বড় শিল্প ও বাণিজ্য গোষ্ঠী। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পরিশোধিত চিনির বড় অংশ বিভিন্ন শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হয়। সম্প্রতি পরিশোধিত চিনির একটি অংশ আসছে চোরাচালানের মাধ্যমে। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে সরাসরি চাহিদা অল্প পরিমাণে বাড়ছে। সে তুলনায় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যে চিনির চাহিদা বেশি বেড়েছে। এর চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ এবং শিল্পের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে ব্যবহার বাড়ছে ৮০ শতাংশ। বর্তমানে চোরাচালান হয়ে চিনি আসছে বলে কম্পানিগুলো আমদানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনিতে এখন ৪২ টাকা শুল্ক ও কর দিতে হয়। এ কারণে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। অথচ চোরাচালানের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে প্রচুর চিনি আসছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। অন্যান্য ভোগ্য পণ্য আমদানিও এ সময়ে ১৯.৬০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু এই সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।</span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black">  </span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><b><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমদানি বাড়লেও দাম সেভাবে কমছে না</span></span></b></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনির বাড়তি আমদানির পরও বাজারে দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। উল্টো চড়া মূল্যে চিনি কিনছে ভোক্তারা। গত নভেম্বরের শুরুতে চিনির মূল্য হ্রাস এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক করা হয়েছিল। তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মোটামুটি ২০ শতাংশ বেশি। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনি শিল্প বিষয়ক একটি পোর্টাল চিনিমান্ডির তথ্য অনুসারে, প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৩ রুপিতে, যা বাংলাদেশি ৫০ থেকে ৫৭ টাকা।</span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"> </p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><b><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিকিৎসক মহলের উদ্বেগ</span></span></b></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা পরিষ্কার যে বাজারের বিধান অনুযায়ী চাহিদা বাড়ছে বলেই চিনি আমদানি বাড়ছে। এটি দেশের স্বাস্থ্যচিত্রের ওপর প্রভাব ফেলছে। জন্মগত বা পরে হওয়া শারীরিক ত্রুটি ছাড়াও জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার যোগসূত্র আছে। চিকিৎসাবিদরা বলেন, স্থূলতা বৃদ্ধি, শরীরচর্চা না করা, মানসিক উদ্বেগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেশে বাড়ছে। স্থূলতার বড় একটি কারণ অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০.৮ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ। এদের ৯২ শতাংশই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ। এটি শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের গুরুতর শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মৃত্যুর ৬৮ শতাংশ কারণ হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ। এসবের পেছনে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর ভূমিকা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়লে চিনি গ্রহণের মাত্রা হয়তো এত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধির কথা নয়। প্রসঙ্গত, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বেশি খেলেই সরাসরি ডায়াবেটিস হয় না, কিন্তু ডায়াবেটিস একবার হয়ে গেলে চিনি খাওয়া নিষেধ। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া ফেরদৌসী বলেন, শর্করা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অনিয়ন্ত্রিত চিনি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নীরব ঘাতক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবেই পরিচিত। বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার হচ্ছে। এটি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। </span></span></span></span></span></span></p> <p align="left" class="body" style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="line-height:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনে একজন নারী সর্বোচ্চ দৈনিক ২৫ গ্রাম এবং একজন পুরুষ দৈনিক ৩৬ গ্রাম চিনি খেতে পারে। এর চেয়ে বেশি চিনি গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত চিনি যকৃতের (লিভার) ক্ষতি করে, রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে, যাতে রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া বাড়তি চিনি স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়, বিষণ্নতা তৈরি করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।</span></span></span></span></span></span></p>