ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ডুয়াল গেজে ব্যয় ৪ গুণ বেশি

এম আর মাসফি
এম আর মাসফি
শেয়ার
ডুয়াল গেজে ব্যয় ৪ গুণ বেশি

চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ ডুয়াল গেজে রূপান্তর প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের ব্যয় ধরা হয়েছে। শুরুতে প্রকল্পটির প্রস্তাবে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, চার বছর পর এর চার গুণ বেশি ব্যয় বরাদ্দে তা অনুমোদিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পটি আগাগোড়া যাচাই-বাছাই না করে তাড়াহুড়া করে অনুমোদন দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বলেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে অবনমনের কারণে ব্যয়ের অঙ্ক বেড়ে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত লাইনটি ডুয়াল গেজে উন্নীত করার পাশাপাশি সমান্তরালে পৃথক লাইন নির্মাণে ২০১৯ সালে দুই হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রাথমিক প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। এই ৫২ কিলোমিটার করিডরে একটি লাইন নির্মাণেই এখন আট হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয় করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায় ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে ৩০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ কেনা, কমিশনিং ও আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

চলতি বছর শুরু করে প্রকল্পটির কাজ ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সে অুনযায়ী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সেকশনে পূর্ণাঙ্গ গতির রেল সেবা চালু হতে সময় লাগবে আরো পাঁচ বছর।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নতুন উদ্বোধন করা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার লাইনে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলার সক্ষমতা থাকলেও চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনে ট্রেনের গড় গতি ৪৮ কিলোমিটার। ৯২ বছরের পুরনো এই লাইনের কারণে বড় দুর্বলতা নিয়েই রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সেবা চালু হচ্ছে।

নতুন লাইনের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনে প্রতিটি ট্রেনের ২২ মিনিট সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তা ছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশন বাইপাস করে কক্সবাজার যেতে সাশ্রয় হবে আরো এক ঘণ্টা।

প্রকল্পটিতে রেললাইন স্থাপনে অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় আড়াই থেকে চার গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। এতে ব্যয় বেশি হচ্ছে ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া পাথর ৪০-৬৭ শতাংশ, লোকোমোটিভ ৩৬-৪২ শতাংশ বেশি দামে কেনাসহ বিভিন্ন খাতে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

একনেক সভায় বা তার আগে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই বিপুল ব্যয় নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। সরকারের শেষ সময়ে প্রকল্পটি তাড়াহুড়া করেই দেওয়া হয়েছে অনুমোদন। পিইসি সভার পর নতুন করে প্রকল্পটিতে বড় একটি কেনাকাটা যুক্ত হলেও পরে আর কোনো সভা হয়নি।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন প্রকল্পটিতে রেলের পাত, লোকোমোটিভ, স্লিপার, পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম ধরা হয়েছে অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে বেশি।

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে ২৫ শতাংশের বেশি অবনমন হয়েছে। এ কারণে নতুন প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বাহার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ডলারের দাম ৮৫ টাকা ধরে আগের প্রকল্পগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। আর নতুন প্রকল্পে প্রতি ডলারের দাম ধরা আছে ১০৯ টাকা। প্রতিটি ডলারের দাম ২৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমদানিনির্ভর প্রতিটি উপকরণের দাম বাড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

লোকোমোটিভের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় বিদেশি মুদ্রায় প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পে এর অতিরিক্ত যতটুকু দাম বেড়েছে, তার মূল কারণ মুদ্রার বিনিময় হারে অবনমন। রেলপথ তৈরির মূল উপকরণ রেলপাত, স্লিপার, পাথরসহ বেশির ভাগ উপকরণই আমদানি করতে হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করেই অনুমোদন দিয়েছি। যে ব্যয় ধরা হয়েছে, সেটা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। আর এটা তো ওপেন টেন্ডার হবে। যে সর্বনিম্ন ব্যয় প্রস্তাব করবে, তারাই কাজ পাবে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই বিভাগের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রশ্ন তুললেও বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বলে এই ব্যয় লাগবে। আমরা তো ইঞ্জিনিয়ার না। আর কমিশনে প্রকল্পের যে চাপ, এতে এত ভেতরে ঢুকে দেখাও সম্ভব হয় না। 

তিনি জানান, প্রাথমিক প্রস্তাবে লোকোমোটিভ কেনার সুযোগ না থাকলেও এডিবি বাড়তি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়ায় ৩০টি রেল ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। তবে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের কাছে তো আগের ডাটা থাকা দরকার। কোন প্রকল্পে কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে, সেটা দেখলে তো আর এত ব্যয় অনুমোদন নিতে পারত না। পরিকল্পনা কমিশনের এ ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া দরকার।

আড়াই থেকে ৪ গুণ বেশি ব্যয়

ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত দ্বিতীয় ডুয়াল গেজ রেললাইন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি যে ব্যয় ধরা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত একই ধরনের রেলপথ নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে তার চার গুণ। ঢাকা-টঙ্গী -জয়দেবপুর প্রকল্পে মেইন লাইন লুপলাইনসহ মোট ১৩৭.৯৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা আছে দুই হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। আর লুপলাইনসহ নতুন প্রকল্পটিতে ৬২.৮৮ কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ঢাকা-টঙ্গী লাইনে কিলোমিটারে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় হলেও নতুন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা করে।

পাথর কেনা হচ্ছে ৪০-৬৭% বেশি দামে

অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল প্রকল্পে পাথর কেনা হচ্ছে ৪০ থেকে ৬৭ শতাংশ বেশি দামে। ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর লাইনে প্রতি ঘনমিটার পাথরের দাম ছয় হাজার টাকা ধরা হলেও নতুন প্রকল্পটিতে একই পাথর কেনা হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। এই হিসাবে নতুন প্রকল্পে প্রতি ঘনমিটার পাথরে বাড়তি ব্যয় হবে ৬৬.৬৭ শতাংশ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের তুলনায় ৪৪ শতাংশ, পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের তুলনায় ৪০ শতাংশ ও আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি দামে পাথর কেনা হচ্ছে নতুন প্রকল্পে।

লোকোমোটিভ কেনা হচ্ছে ৩৬-৪২% বেশি দামে

নতুন প্রকল্পটির আওতায় ৩০টি লোকোমোটিভ কেনা, কমিশনিং, স্পেয়ার পার্টস এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ বাবদ দুই হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিটি লোকোমোটিভ কেনায় ব্যয় হচ্ছে ৭৮ কোটি ৮১ কোটি টাকা, যা অন্য যেকোনো প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি।

এ ছাড়া প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজনে দেখা গেছে, নতুন প্রকল্পে প্রতিটি লোকোমোটিভ কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাতে প্রতিটি লোকোমোটিভে ব্যয় করা হচ্ছে ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
শেয়ার
স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিটন দাস ও শামিম হোসেন। পরে বোলারদের দাপটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।ছবি : মীর ফরিদ, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।

এর পরও ফুর্তিবাজ লঙ্কানরা দুলেছে। তবে ১৭৭ রানের পূঁজি গড়া বাংলাদেশ দল ওই রান আউটে রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। স্বাগতিকদের ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৩ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে ফেরা তাই একরকম নির্ধারিতই ছিল!

বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধোনা করা লঙ্কান সিংহকে বাংলাদেশ খাঁচাবন্দি করে ফেলে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ওই বলে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। স্বাগতিকরা থমকে যায় ৩০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে। এমন অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে পাথুম নিশাঙ্কা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দাসুন শানাকাকে সঙ্গী করে।
কিন্তু বাংলাদেশকে এদিন কে রোখে! এই ম্যাচে একাদশে জায়গা করে নেওয়া শরিফুল ইসলামের সুইং, মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার আর রিশাদ হোসেনের লেগস্পিন সামলানোর সক্ষমতা ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। এঁদের মধ্যে শেষোক্তজনের কথা ম্যাচ শেষে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। তবে ঘুরেফিরে দুই অধিনায়কের মুখেও উচ্চারিত হয়েছে শামীম হোসেনের সেই রান আউটের ঘটনাটি। বাংলাদেশের বোলার আর ফিল্ডারদের দক্ষতায় দুজন ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে যাঁদের কাজে লাগানোর কথা, সেই দুই ওপেনারতানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন গতকাল। এরপর রানখরায় ভোগা অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের রক্ষণশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বেশিদূর যাওয়া হবে না বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!

মন্তব্য

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

শেয়ার
অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরে জানা যায়, এই মামলার দুজন আসামি এরই মধ্যে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে আগের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আগের আদেশটি পরিমার্জন করা হলো।
২৬ জন আসামির মধ্যে যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য নয়।

পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মন্তব্য
হত্যা মামলায় জামিন

আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।

আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি রাজনীতি করতে চাই না।

এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি যে অর্থের জোগান দিয়েছেন, তা এজাহারে বলা নেই। নুসরাত ফারিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
আসামি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জামিন চাই। এ সময় বিচারক আসামি অপু বিশ্বাসের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু তিনি দুইবার মাথা নেড়ে না উত্তর দেন। এ সময় তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়।
তখন পাশ থেকে আইনজীবীরা বলতে থাকেন, অপু বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। টাকার বিনিময়ে মঞ্চে স্টেজে নেচে-গেয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিতেন। তিনি আবার হাসেন। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখে-মুখে ভীতি দেখা যায়। তখন তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তাঁকে থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। লাশের বন্যা বয়ে যায়। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাঁরা ছিলেন সবাই শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এই অপু বিশ্বাসরা ফেরদৌসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। শেখ হাসিনা আবার আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।

এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না। এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ