‘জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এক পার্সেন্ট ছাড়ও দেওয়া হবে না। যে মৌলিক সংস্কার এবং বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি, সেই জুলাই সনদে আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব না।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি জুলাই সনদ আদায় না করে সরকার যেতে পারবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন, ভোটাধিকার, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের লড়াই ছিল। আমাদের এই মুহূর্তের বড় সংকট হলো স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখা।
যদি রাজনৈতিক দলের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকে, তাহলে আরেকটি এক-এগারো আসবে। ছাড় দিতে দিতে আমরা শেষ পর্যায়ে এসেছি। আমরা এবার আর ছাড় দেব না।’ এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘একাত্তরের পর কিভাবে রক্ষীবাহিনী দিয়ে, বাকশাল তৈরি করে কিভাবে লুটপাট করা হয়েছিল। নব্বইয়ের পরেও কী হয়েছিল, তা আমরা দেখেছি। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর সেই ভুল হতে দেব না। সমীকরণ এখনো শেষ হয়নি, যাঁরা সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছেন, তাঁরা ভুল করছেন।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে, ফলে অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশ আমরা করছি। এক বছর আমরা কী পেলাম, তরুণরা কী পেল, দেশে কী কী পরিবর্তন হলো? গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরেও নতুন বাংলাদেশ আমরা পাইনি।’
এনসিপির মুূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাহলে আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, সংস্কারের জন্য, একটি নতুন সংবিধানের জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেই মরদেহটা সরকারের ফেরত দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একই সংবিধানে, একই ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষের শহীদ হওয়ার দরকার কী ছিল?’ সম্মেলনের যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আর একটা ফ্যাসিবাদের কারখানা রয়ে গেছে এখনো, বঙ্গভবন। এটার পতন আপনাদের হাত ধরে হবে ইনশাআল্লাহ।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ইদানীং মিডিয়া প্রেজেন্স দেখেন, টক শোগুলো দেখেন। দেখবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করার, ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ সামান্তা শারমিন আরো বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এটি শুধু এনসিপি এবং যুবশক্তির কাজ নয়, যুবকদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। রাজনৈতিক পক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবে—তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে, নাকি নতুন রাজনীতি করবে।’ এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘জুলাই পদযাত্রায় দেখেছি, তরুণদের মধ্যে জোয়ার এসেছে। তাঁরা দেশ নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এটাকে আমাদের লালন করতে হবে। যাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, আমরা আশা করব তাঁরা এটিকে লালন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ধরে তরুণদের বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে তরুণরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তরুণদের হেয় করে দেখা, ছোট করে দেখার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ এনসিপির এই নেত্রী বলেন, ‘তরুণরা বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে যাবেন। আমাদের এমন রাজনীতি করতে হবে, যেখানে নারীরা সামনে থেকে রাজনীতি করতে পারেন। এমন কোনো রাজনৈতিক নেত্রী নেই, যাঁদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়নি। এই সংস্কৃতি আমাদের ঠেকাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণরা মোকাবেলা করবেন প্রত্যাশা করি।’