উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসাবে এই অঙ্ক আরো অনেক বেশি।
৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে
এম আর মাসফি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএসের অডিটরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এই খানা আয় ও ব্যয় জরিপে সারা দেশের ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটিই ব্যক্তির বা সাধারণ মানুষের ঋণ। ব্যক্তি ঋণ বাড়া স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। আর্থিক নির্ভরশীলতা যখন হয়, তখন ঋণের পরিমাণ বাড়বেই।
বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গ্রামের তুলনায় শহরের পরিবারগুলোর ঋণ প্রায় ২১০ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে গ্রাম এলাকায় পরিবারপ্রতি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪১১ টাকা, যেখানে শহরের পরিবারগুলোর ঋণ গড়ে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ টাকা, যা গ্রামের তুলনায় প্রায় তিন গুণের বেশি। যদিও শহরের ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ চার লাখ ১২ হাজার ৬৩৮ টাকা।
ছয় বছরের ব্যবধানে শহরে বাস করা পরিবারগুলোর ঋণগ্রস্ত হওয়ার হার বেড়েছে ১৩০.১০ শতাংশ। গ্রামের পরিবারগুলোর ঋণ বেড়েছে ৪১.৭৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে গ্রামে পরিবারপ্রতি ঋণ ছিল ৩১ হাজার ৩৩২ টাকা, শহরে ছিল ৫৯ হাজার ৭২৮ টাকা।
জরিপের বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের পরিবারগুলোর ঋণ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঢাকা শহরের প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ দুই লাখ ২০ হাজার ৬৭৭ টাকা। আর ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ সাত লাখ ৬১ হাজার ৬৪০ টাকা। রংপুর শহরে বাস করা ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার ১৬১ টাকা। বরিশালে দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৭৯ টাকা, চট্টগ্রামে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫২৩ টাকা, খুলনায় এক লাখ ৭৭ হাজার ৩২১ টাকা, ময়মনসিংহে এক লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ টাকা, রাজশাহী শহরে এক লাখ ১৫ হাজার ৫৫৪ টাকা, সিলেট শহরে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৩ টাকা। সে হিসাবে রাজশাহী শহরের পরিবারগুলোর ঋণ সবচেয়ে কম।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশে একজন মানুষের মাসিক গড় আয় সাত হাজার ৬১৪ টাকা বা বার্ষিক হিসাবে দাঁড়ায় ৯১ হাজার ৩৬৮ টাকা। ছয় বছর আগে ২০১৬ সালে মাসিক গড় আয় ছিল তিন হাজার ৯৪০ টাকা। সে হিসাবে এই আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষের আয় অনেক বেশি। শহরের একজন মানুষের মাসিক গড় আয় ১০ হাজার ৯৫১ টাকা। আর গ্রামের মানুষের আয় অর্ধেকের কাছাকাছি, ছয় হাজার ৯১ টাকা। বাংলাদেশে একটি খানা বা পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা ৪.২৬। পরিবারের সবাই আয় করে না। এ ক্ষেত্রে উপার্জনকারীদের গড় আয় ২৫ হাজার ৭০৭ টাকা। ছয় বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৬৪৬ টাকা।
বিবিএসের হিসাবে, পরিবারের মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। মাসে খরচ হয় গড়ে সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। খাবারের পেছনে প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার তিন টাকা খরচ করে একটি পরিবার।
মাথাপিছু ঋণের বিষয়ে বিবিএসের উপপরিচালক ও খানা আয়-ব্যয় জরিপের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে যে ঋণের বিষয়টি এসেছে, সেটি ব্যক্তি বা পারিবারিক ঋণ। এখানে দেশের ঋণ বা বৈদেশিক ঋণ নেই। আমরা জরিপের মাধ্যমে যে তথ্য পেয়েছি, সেটিই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
গত ছয় বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এখন সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ। ছয় বছর আগে ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২৪.৩ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬.১৪ লাখ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। আর সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৫ ডলার বা ৪০ হাজার ১৩৩ টাকা।
মাথাপিছু ঋণের বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, বিবিএসের জরিপে যে ঋণের বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটি ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণ। বাংলাদেশ বাংকের তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে সেটি হচ্ছে দেশের ঋণ। অর্থমন্ত্রী হয়তো শুধু সরকারের ঋণ তুলে ধরে ৩৬৫ ডলার বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যই সঠিক।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স