ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

মিয়ানমারে ফিরে যেতে বড় সমাবেশ রোহিঙ্গা শিবিরে

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি
শেয়ার
মিয়ানমারে ফিরে যেতে বড় সমাবেশ রোহিঙ্গা শিবিরে
মিয়ানমারে ফিরতে চায় তারা। দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার দাবিতে গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। ছবি : কালের কণ্ঠ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা নেতারা দ্রুত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এবং প্রত্যাবাসনে বাধা না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মিয়ানমারে ফিরে যেতে বড় সমাবেশ রোহিঙ্গা শিবিরেএদিকে কক্সবাজারে ওই সমাবেশ চলার সময় জেনেভায় মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট উদ্যোগ অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফিরলে তাদের জীবন ও স্বাধীনতা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এর আগে গত সোমবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী চার রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। পরের দিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকার ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিকে তলব এবং প্রত্যাবাসনে বাধা না দিতে সতর্ক করে। চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্ষার আগেই প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।

এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল রাখাইন রাজ্যে সরেজমিন দেখে এসেছে। ফিরে এসে ওই প্রতিনিধিদলের অনেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতেই রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাও আছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল উখিয়া ও টেকনাফের ১৩টি শিবিরে প্রত্যাবাসনের পক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। সমাবেশগুলোতে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে ধরে স্লোগান দেয়। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল লেটস গো হোম, মিয়ানমার; ডোন্ট ট্রাই টু স্টপ রিপ্যাট্রিয়েশন এবং হেল্প আস টু রিপ্যাট্রিয়েশন

উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়ার সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গাদের দুঃসময়ে আশ্রয় দিয়ে পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের ওপর তাঁরা আর বোঝা বাড়াতে চান না।

সমাবেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশ শেষে রোহিঙ্গা নেতারা বড় শোডাউন করে ক্যাম্পের অলিগলি প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তাঁরা রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করেন। এ সময় শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ তাঁদের সঙ্গে দেশে ফিরতে সম্মতি জানিয়ে লেটস গো হোম, মিয়ানমার স্লোগান দেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মো. জুবায়ের বলেন, আমরা প্রত্যাবাসন চাই। আমরা আমাদের দেশ মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে চাই। বছরের পর বছর আমরা বাংলাদেশে আশ্রিত জাতি হিসেবে আর সময় পার করতে চাই না। তিনি আরো বলেন, আমার পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে আমাদের মিয়ানমার ফিরে যাওয়া উচিতএ কথাগুলো আমরা এখন সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। অনেকে মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার যে কর্মসূচি, তাতে আমাদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন দিয়েছেন।

উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবনেতা মো. মুসা বলেন, শুধু দাবি আদায়ের কথা বলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের নিজেদের দেশ থাকতে আমরা এখানে আর ভাসমান জীবন কাটাতে চাই না। এ ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক ভাই এখনো ভুলের মধ্যে রয়েছে। দেশে ফেরার আগে যে আমরা শুধু নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ইত্যাদি দাবি তুলছি, সেগুলো বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তার চেয়ে নিজের দেশ জন্মভূমিতে বসবাস করা আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির।

প্রত্যাবাসনের সমর্থনে উখিয়ার কয়েকটি ক্যাম্পের সমাবেশে সম্প্রতি প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের পরিবারে রেশন বন্ধ করে দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কড়া সমালোচনা করেন রোহিঙ্গা নেতা ও সাধারণ রোহিঙ্গারা। তাঁরা বলেন, কেউ আমাদের সাহায্য করা মানে এই নয় যে পুরো রোহিঙ্গা জাতিকে তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হবে। আমাদের ভালো-মন্দ আমাদের বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের আজীবন শরণার্থী করে রাখার পরিকল্পনা মেনে নেবেন না বলেও জানান তাঁরা।

টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা জাফর আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগত ঐতিহ্য আছে, নিজেদের দেশ আছে। কোনো এক দুর্ঘটনায় আমাদের দেশ ছাড়তে হয়েছে। আমরা এখন আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই।

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সমাবেশে উপস্থিত বয়োবৃদ্ধ সালামত উল্লাহ বলেন, আমাদের বাপ-দাদা পূর্বপুরুষরা আরাকানের মাটিতে শুয়ে আছেন। আমরা আমাদের পবিত্র আরাকান ছেড়ে দিয়ে কেন পাহাড়ে ঝুপড়িতে জীবন কাটাব? আমরা আমাদের মাটির টানে, জন্মভূমির টানে মিয়ানমারের আরাকানে ফিরতে চাই।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

শেয়ার
শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।

পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সোয়া ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।

ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।

মন্তব্য
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব

৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কমিশন থেকে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য
খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা

আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এদিকে সিসিটিভির  ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।

তবে ওই মামলায় এ পর্যন্ত মোট দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার  রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।

যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।

দুটি গুলি তাঁর মাথা ও মুখের ডান পাশে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই পায়ের রগ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।

কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ