দেশে ২০ বছরে ৭২ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে। বাড়িতে প্রসব ও বাল্যবিবাহের ঘটনা কমে যাওয়ায় এবং প্রান্তিক পর্যায়ে প্রসবকালীন সেবা বাড়ার ফলে মাতৃমৃত্যুর হার কমে এসেছে।
সম্প্রতি মাতৃমৃত্যু নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ), ইউএনএফপিএ, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন থেকে মাতৃমৃত্যুর এই তথ্য জানা যায়। এতে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গর্ভধারণকালে, প্রসবের সময় এবং প্রসবের ৪২ দিনের মধ্যে মৃত্যু হলে তা মাতৃমৃত্যু।
মাতৃমৃত্যুর বিষয়ে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা কালের কণ্ঠকে বলেন, মাতৃমৃত্যুর ৩০ শতাংশই হয় প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণে। ২৪ শতাংশ হয় গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ফলে। বাকিগুলো গর্ভকালীন সংক্রমণসহ অন্যান্য কারণে।
তিনি বলেন, ‘দেশে গর্ভকালীন পরিচর্যা বাড়লেও এখনো ভালো করে নেওয়া হয় না। গর্ভাবস্থায় মায়েদের অ্যান্টিনেটাল চেকআপ খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের ৪৭ শতাংশ মা চারটি অ্যান্টিনেটাল চেকআপ নেয়, অন্যরা এ ব্যাপারে জানে না। একই সঙ্গে হসপিটাল ডেলিভারি বাড়াতে হবে, ডেলিভারির পর যে কেয়ার নেওয়া হয়, সেটিও বাড়াতে হবে।
’
এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ মায়ের মৃত্যু : বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিন হাজার ৭০০ মায়ের মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে ওই বছর এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মা মারা যান। এর আগে ২০০০ সালে এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৪৪১ জন মা মারা যান। এর পর থেকে মাতৃমৃত্যুর হার কমে এসেছে। ২০০৫ সালে লাখে ৩৭৬ জন, ২০১০ সালে ৩০১ জন, ২০১৫ সালে ২১২ জন মায়ের মৃত্যু হয়।
সব মিলিয়ে ২০ বছরে মাতৃমৃত্যু কমেছে ৭২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে বিশ্বে এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৩৩৯ জন মায়ের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে তা কমে হয় ২২৩ জন। অর্থাৎ মাতৃমৃত্যু হার ২০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। বেশির ভাগ মাতৃমৃত্যু হচ্ছে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। ২০২০ সালে এশিয়ায় মাতৃমৃত্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। অন্যান্য দেশের মধ্যে সে বছর আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি মাতৃমৃত্যু ঘটে, লাখে ৬২০ জন মা মারা যান। সবচেয়ে কম ৩৯ জন মারা যান শ্রীলঙ্কায়।
একই সময়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, প্রতি এক লাখ শিশুর জন্মের বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৬৮।
এমন পরিস্থিতিতে আজ রবিবার সারা দেশে পালন করা হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২৮ মে এই দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘গর্ভকালে চারবার সেবা গ্র্রহণ করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি’।
দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আজ থেকে ২ জুন পর্যন্ত বিশেষ সেবা দেওয়া হবে।
বাড়িতে প্রসব শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে : পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা) ডা. মো. মাহমুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরও ৫০ শতাংশ প্রসব হতো বাড়িতে। এখন সেটা ৩৫ শতাংশ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বাড়িতে প্রসব যেন না হয়। কারণ বাড়িতে প্রসব হলে পরবর্তী রক্তপাতসহ বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বাড়িতে প্রসব বন্ধ করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে লাখে মৃত্যু ৭০ জনের নিচে নামিয়ে আনতে পারব।’
মেয়েদের ২৫ শতাংশ বাল্যবিবাহের শিকার : পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের ২৫ শতাংশ বাল্যবিবাহের শিকার। অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি চারজনের একজনের বিয়ে হয়েছে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছরের আগে।
এ ব্যাপারে ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০ বছরের আগে গর্ভধারণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই বয়সে গর্ভধারণ করলে প্রসবকালে রক্তক্ষরণটা বেশি হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তিনি বলেন, গত দুই দশকে বাল্যবিবাহ কমেছে। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।