<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ, একটি জিনবাহিত রোগ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। মা ও বাবা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ২৫ শতাংশ। বাহক হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৫০ শতাংশ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সভাপতি ডা. এম এ মতিন কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না জানা জরুরি। কোনোভাবেই দুজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক যেন বিয়ে না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক তাহলে গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের পরীক্ষা করাতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, রোগটি কিন্তু ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর দেহের রক্ত যদি অন্যের শরীরে দেওয়া হয়, তাহলেও ওই ব্যক্তির থ্যালাসেমিয়া হবে না। থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঙ্গে যৌন মিলনেও এই রোগ ছড়ায় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। আক্রান্তের প্রতি মাসে রক্তের প্রয়োজন হয় এক থেকে তিন ব্যাগ পর্যন্ত। সময়মতো চিকিৎসা ও রক্ত দেওয়া না গেলে রোগী নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে মারা যায়। তাই চিকিৎসা থেকে প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত ও বাহকের সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে দেশের ১৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক ও ৭০ হাজারের বেশি শিশু এই রোগে আক্রান্ত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২০২২ সালে জরিপ করে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি। সে জরিপে প্রতি ১০০ জনে ১২ জন এই রোগের বাহক পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। প্রতিবছর নতুন করে জন্ম নিচ্ছে আরো সাত হাজার শিশু। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন পরিস্থিতিতে আজ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি, থ্যালাসেমিয়া সোসাইটি ও থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবারের প্রতিপ্রাদ্য ‘থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন হোন, আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আক্রান্তদের যত্ন নিন।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সন্তানের চিকিৎসা নিতে আসা হুমায়ুন কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস তখন তার বিটা থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। এখন তার বয়স ১১ বছর। দিন দিন তার পেট বড় হয়ে যাচ্ছে। খেতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে পারে না, হাঁটতে পারে না, খেলাধুলা করতে পারে না। ওকে বিছানায় শুইয়ে রাখতে হয়, আর না হয় কোলে নিয়ে হাঁটি। কখনো তার মা কোলে নেয়, কখনো আমি। এভাবেই আমার সন্তান বড় হচ্ছে।’ অসহায় এই পিতা আরো বলেন, ‘আগে প্রতি মাসে একবার রক্ত দিতে হতো এখন দুইবার রক্ত দিতে হয়। এই রক্ত জোগাড় করা কী যে কষ্ট...। যার সন্তান এই রোগে ভোগে তিনিই কেবল বলতে পারবেন।’ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগে শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনে ত্রুটি থাকে। ফলে আক্রান্ত রোগীকে রক্ত গ্রহণ করতে হয়। থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকার হয়ে থাকে—আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তীব্র হয় না। অনেক সময় উপসর্গও বোঝা যায় না, রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করে। তবে বিটা থ্যালাসেমিয়া হলে রক্তের স্বল্পতা দেখা দেয়, ক্লান্তি, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট ও ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। দেশে এ ধরনের আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিকিৎসা কী? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। শরীরে আয়রন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ওষুধ দিয়ে তা কমাতে হয়। প্লীহা বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে তা কেটে ফেলতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কমে আসে। আর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা, যা খুবই ব্যায়বহুল এবং অপ্রতুল। এ ছাড়া জিন থেরাপিও আরেকটি উন্নত চিকিৎসা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে শুধু ঢাকা সিএমএইচে একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব হয়েছে। বিএসএমএমইউ এবং আজগর আলী হাসপাতালও চেষ্টা করছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই অধ্যাপক বলেন, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কথাটা সহজ মনে হলেও থ্যালাসেমিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে এটি কিন্তু এত সহজ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ম্যাচিং না হওয়ায় এই ট্রান্সপ্লান্টেশন সম্ভব হয় না। আবার ম্যাচিং হলেও ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে সারিতে তোলা যায় না। বাংলাদেশে এই ট্রান্সপ্লান্টেশন খরচ পড়ে ২০ লাখ টাকা।</span></span></span></span></p>