বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গেস্টরুমে ডেকে এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা। কান দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর ওই ছাত্র হাসপাতালে যেতে চাইলেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা যায়, চড় মেরেছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ ফরিদ।
আর ভুক্তভোগী সজীব আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
এ সময় গেস্টরুমে আরো উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), সহসভাপতি শাহ পরান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৪), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (রসায়ন-৪৪), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৫), উপছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকার (সরকার ও রাজনীতি-৪৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিনিয়রের অতিথির সঙ্গে ঝামেলাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ৮টায় হলের ৪৭ ও ৪৮ ব্যাচের কর্মী শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে ডাকেন ৪৪ ব্যাচের পদধারী নেতারা। কর্মীরা উপস্থিত হলে নেতাদের নির্দেশে ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মারধর শুরু করেন।
এ সময় সহসভাপতি ফরিদও এগিয়ে এসে সজীবের কানে সজোরে চড় মারেন।
এতে সজীবের কান ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।
সজীব চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে যেতে চাইলে সহসভাপতি ইমরান বাধা দেন। অন্যদের তিনি বলেন, ‘আগে দেখ ও নাটক করতেছে কি না।
এখন মেডিক্যালে নিয়ে গেলে নিউজ হবে। তখন আমরা বিষয়টা হ্যান্ডল করতে পারব না।’ পরে সজীবের অবস্থা খারাপ হলে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মামুন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে একজন শিক্ষার্থী ইমার্জেন্সি বিভাগে এসেছিলেন। ইমার্জেন্সি ডাক্তার তাঁকে তিনতলায় ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) পাঠিয়ে দেন।
সেখানে ইএনটির (নাক, কান ও গলা) ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিয়ে তিনি চলে গেছেন।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সজীব বলেন, ‘গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে সিনিয়ররা আমাকে, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সিয়াম এবং রসায়ন বিভাগের নাইমকে মারধর করেন।’
তবে অভিযুক্ত হাসান মাহমুদ ফরিদ চড় মারার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সজীবের অসুস্থতার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ১০ থেকে ১২ জন সাক্ষ্য দিলেই অভিযোগ সত্য হয়ে যাবে নাকি?’
অন্য অভিযুক্ত ইমরান বলেন, ‘রোজায় সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য গেস্টরুমে ডাকা হয়েছিল। এ সময় একটি ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে রুমে যেতে বলি। সে হাসপাতালে যেতে চাইলে পরে তাকে হাসপাতালে পাঠাই।’
মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। সে এখনো লিখিত অভিযোগ করেনি। সন্ধ্যায় আমরা হল প্রশাসন মিটিংয়ের পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’