ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ঢাকা ওয়াসা) কর্মচারীদের বিধিবহির্ভূতভাবে পারফরম্যান্স বোনাস বা উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২১ ধারা লঙ্ঘন এবং ৪৮ ধারা অনুসারে বিধি প্রণয়ন না করে পানির দাম নির্ধারণকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে আগেই এ দুটি বিষয় কার্যকর করে ফেলায় আদালত তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, কিন্তু ভবিষ্যতে বিধি প্রণয়ন ছাড়া আর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন।
আদালত রায়ে বলেছেন, ‘যেহেতু ওয়াসা আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে বিধি প্রণয়ন না করে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড বেআইনিভাবে পানির দাম বাড়িয়ে কার্যকর করেছে এবং আইনটির ১০(ঙ) ধারার সঙ্গে ২০১০ সালে প্রণীত ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি প্রবিধিমালার অসামঞ্জস্যপূর্ণ ৩৪(৩) প্রবিধির মাধ্যমে উৎসাহ ভাতাও কার্যকর করে ফেলেছে, তাই সেগুলো মার্জনা করে দেওয়া হলো।
কিন্তু বিধি প্রণয়ন না করা পর্যন্ত পানির দাম নির্ধারণ বা উৎসাহ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।’ সরকার অবিলম্বে বিধি প্রণয়ন করবে, রায়ে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আর ঢাকা ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাসুম ও সাঈদ মাহসিব হোসেন।
রায়ের পর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ উচ্চ আদালতের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিধিবহির্ভূতভাবে পানির মূল্য নির্ধারণ ও পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। যেহেতু অন্যায় কাজগুলো পূর্বেই সমাপ্ত হয়েছে, তাই সেসব বাতিল না করে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে বিধি ছাড়া যেন পানির মূল্য নির্ধারণ করা না হয় এবং পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়া না হয়, সে মর্মে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
’
তিনি আরো লেখেন, ‘মহামান্য আদালতের কাছে বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত জুডিশিয়াল গাইডলাইন করে দেওয়ার যে আবেদন ছিল তা আপাতত মঞ্জুর করা থেকে বিরত থেকেছেন এবং প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে সরকার অনতিবিলম্বে বিধি প্রণয়ন করে বিদ্যমান অসুবিধা দূর করবে।’
গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৯১তম সভায় পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (উৎসাহ বোনাস) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে করোনা মহামারি পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরে পারফরম্যান্সের জন্য ঢাকা ওয়াসার স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ওু প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেওয়া হবে।
আর গত বছরের ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২৮৬তম সভায় কর্মীদের একটি মূল বেতনের অর্ধেক ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাড়ে তিনটি পারফরম্যান্স বোনাস দিতে সংস্থাটির ব্যয় ধরা হয় ১৯ কোটি টাকার বেশি।
তার আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ওয়াসা।