বিকেল সাড়ে ৪টা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর দারুল উলুম মাদরাসা মাঠ। মাঠে সারিবদ্ধভাবে বসা মাদরাসাটির শিশু শিক্ষার্থীরা। সবার মায়াভরা মিষ্টিমুখ।
‘সুন্দর কম্বুল, আর শীত লাগত না’
নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর

হাতে একটি কম্বল পেয়ে ১০ বছর বয়সী শিশু মেহেদি হাসান জিজ্ঞাসা করে, ‘এইডা আমার?’ মাথা ঝাঁকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলতেই তার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। বারবার সে কম্বলটিতে চুমু খাচ্ছিল।
কম্বল পেয়ে সেটি নিজের গায়ে জড়িয়ে নেন বিধবা আয়তন নেছা। তিনি বলেন, ‘ছিড়া ফান্তা ফান্তা খেতা (কাঁথা) দেয়া শীত কাডাইতাছি গো বাজান। আজকা সুন্দর কম্বুল পাইছি। কী যে কাম অইছে! আর শীত লাগত না।
শিশু মেহেদি ও বিধবা আয়তন নেছার মতো শীতার্ত সবার হাতে গতকাল বৃহস্পতিবার কম্বল তুলে দেওয়া হয়। সব মিলে গাজীপুর জেলায় দিনব্যাপী এতিম শিশু, মাদরাসা শিক্ষার্থীসহ শীতার্ত এক হাজার ৩০০ জনকে বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারের কম্বল বিতরণ করেছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ।
সাতখামাইরের পর একই উপজেলার সোহাদিয়া জামিলুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। এর আগে সকালে গাজীপুর মহানগরের পুবাইল বালুর মাঠে, দুপুরে কাপাসিয়া উত্তর খামের ঈদগাহ মাঠে, বিকেলে কাপাসিয়া পাবুর ঈদগাহ মাঠে ও ঘাগটিয়া ইউনিয়নে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল পাওয়া কাপাসিয়া পাবুর গ্রামের জয়নব খাতুন বলেন, ‘কি যে টেল্যা (ঠাণ্ডা) লাগে! আমরা গরিব মানুষ।
কম্বল বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মোমেন মিয়া, শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, শুভসংঘ গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ইমরান হোসেন, কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কানিজ ফাতেমা রুহিতা, স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন, আলভি হাসান, নিলয় আহমেদ, মেহেদি প্রমুখ।
বিতরণের সময় আমানত হোসেন খান বলেন, ‘এর আগেও কাপাসিয়া উপজেলায় বসুন্ধরা গ্রুপ অনেক দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিকে এভাবে হাত খুলে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। আমি উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
সাতখামাইর দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ছোট বাচ্চারা কম্বল পেয়ে অনেক খুশি। শীতে ওদের অনেক কষ্ট হতো। এখন আর কষ্ট হবে না। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দীর্ঘায়ু দান করুন।’
সাতখামাইরে বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ আব্দুল লতিফ, সাতখামাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য এমদাদুল হক, শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, তেলিহাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জয়নাল আবেদিন পিওর, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাহবুব হাসান, শুভসংঘ শ্রীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, সহসভাপতি হারুন-অর-রশিদ রতন, পিন্টু আকন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম শেখ প্রমুখ।
শেখ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বরাবরই নিখাদ ভালোবাসার নজির দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের দেখে দান ও উদারতার শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
জয়নাল আবেদিন পিওর বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় বসুন্ধরা গ্রুপ দেশজুড়ে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রমাণ করেছে, তারা দেশের ও সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু।’
মাহবুব হাসান বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন গেছে। জন্মদিনে তিনি সারা দেশে এক লাখ ১১ হাজার এতিমকে উন্নত মানের খাবার খাইয়েছেন। এ থেকেই উনার পরিচয় পাওয়া যায় যে তিনি কতটা বড় মনের মানুষ।’
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ শুভসংঘের আয়োজনে দুস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বুধবার শীতের রাতে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া, চাকলাপাড়া, হামদহ, ভটিয়ারগাতীসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের উপদেষ্টা কাজী কামাল আহমেদ বাবু, ঝিনাইদহ জেলা শাখার সহসভাপতি পবিত্র কুমার বিশ্বাস, প্রতাপ কুমার বিশ্বাস, আজম খান সেলিম, আল মাহামুদ, সাধারণ সম্পাদক শুভ কুমার বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান অন্তর, রাসেল আহমেদ শুভ, প্রচার সম্পাদক জাহিদুজ্জামান জাহিদ, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ।
সম্পর্কিত খবর

২০ হাজার কোটি টাকার আলু নষ্ট হওয়ার শঙ্কা
- ঋণখেলাপির ঝুঁকিতে চার শ হিমাগার ব্যবসায়ী
হিমাগারে অবিক্রীত ৩৫ লাখ টন
সাইদ শাহীন

দেশে আলুর উৎপাদনে এবার রেকর্ড হলেও বিপরীত চিত্র বাজারে। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় হিমাগারে জমে আছে ৩৫ লাখ টনের বেশি আলু, যার বড় অংশই অবিক্রীত। চাহিদার ঘাটতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এসব আলুর একটি বড় অংশ—প্রায় ১১ লাখ টন—নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক ও হিমাগার ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সূত্র জানায়, এ বছর দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টন, যা চাহিদার তুলনায় ৪০ লাখ টন বেশি। উৎপাদন বেশি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ গত বছর কৃষক আলুর ভালো দাম পেয়েছিলেন। ফলে এ বছর অনেক বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।
কিন্তু অতিরিক্ত উৎপাদনের পর কোনো পূর্বপ্রস্তুতি বা বাজার ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছে পুরো খাতটি। হিমাগারে সংরক্ষিত ৩৫ লাখ টন আলুর মধ্যে ১০ লাখ টন বীজ আলু, বাকি ২৫ লাখ টনের বেশির ভাগই এখনো অবিক্রীত।
বিসিএসএর হিসাব অনুযায়ী, এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ১৭ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণের পর পরিবহন ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে প্রতি কেজির চূড়ান্ত খরচ দাঁড়ায় ২৫ টাকার মতো।
অর্থাৎ প্রতি কেজিতে কৃষকের লোকসান ৮ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। আর হিমাগার ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করেছিলেন, এই সময়ে গত বছরের মতো অন্তত ৩৯-৪০ টাকা কেজি দাম পাবেন। এখন দাম অর্ধেকেরও কম হওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগার থেকে খালাস না হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
হিমাগার মালিকদের দাবি, ১১ লাখ টন আলু যদি অবিক্রীত থেকে যায় এবং পচে যায়, তাহলে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো হবেই, অন্যদিকে তা পরিবেশ বিপর্যয়েরও কারণ হতে পারে।
বিসিএসএর পক্ষ থেকে সরকারকে কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে ৫৫ লাখ পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে, এর সঙ্গে প্রতিটি পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি আলু দেওয়া হোক; দেশের বিভিন্ন স্থানে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রির ট্রাক সেল কার্যক্রম চালু করা হোক এবং হিমাগার গেটে আলুর ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হোক।
এসব ব্যবস্থা নেওয়া গেলে একদিকে কৃষক ও হিমাগার ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন, অন্যদিকে আগামী মৌসুমের জন্য কৃষকের উৎপাদনের আগ্রহও টিকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে বিসিএসএর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার আলু নিয়ে আমরা মহাসংকটে আছি। হিমাগার ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আলু কিনেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে আলু বিক্রি না হলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। অনেকে ঋণখেলাপিও হয়ে পড়তে পারেন।’
মোস্তফা আজাদ আরো বলেন, ‘হিমাগারে আলুর ন্যূনতম মূল্য ২৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা না হলে আগামী বছর কৃষকরা আলু চাষে নিরুৎসাহ হবেন। এতে আবার ২০২৪ সালের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, যখন প্রতি কেজি আলুর দাম উঠেছিল ৭০-৮০ টাকায়।’
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের উচিত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে চালের পাশাপাশি আলু যুক্ত করা এবং সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে আলুর ট্রাক সেল কার্যক্রম চালানো। এতে যেমন আলুর চাহিদা বাড়বে, তেমনি কৃষকদের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থাও তৈরি হবে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক
বিএনপিকে বিব্রত করতে ‘অযৌক্তিক’ সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কারের নামে বিভিন্ন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে বিএনপি নেতাদের অভিমত, গণতন্ত্রের ইতিহাসে দেশে দেশে যেগুলোর স্বাভাবিক প্র্যাকটিস আছে, সেগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল অন্য দলগুলো অনেক বড় দল নয়। নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাব মেনে নিলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য বলেন, বর্তমানে অযৌক্তিক অনেক সংস্কার প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য বিএনপিকে বেঁধে ফেলা।
স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকের মতো এ বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না। স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা, অর্থাৎ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দু-একটি বিষয়ে ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে যদি ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তো তেমন অর্থবহ থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সংসদেরই বা কী দরকার। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়বে। তবে এই আলোচনায় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলোচনা হবে।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় নিহত ছাত্র-ছাত্রী ও পাইলটের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, আহতদের আশু সুস্থতা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।
সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি
ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও বাংলাদেশের
বোরহান জাবেদ

একে তো পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি। মানসিক চাপ অনুভব করা অস্বাভাবিক ছিল না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। তার ওপর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেছে পুরো দেশকে। সেই বিষণ্নতা ছুঁয়ে গেছে লিটন দাস-তাওহিদ হৃদয়দেরও।
এই সংস্করণে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের স্বাদও যোগ হয়েছে এই জয়ে। স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেছে কানায় কানায় পরিপূর্ণ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের। অবশ্য ম্যাচের পূর্বাভাসে রঙিন দিনের বার্তা ছিল না।
চার বল বাকি থাকতে পাকিস্তান অলআউট হয় ১২৫ রানে। মিরপুরের উইকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো গতকালও ব্যাট হাতে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা।
পাকিস্তানের ইনিংসের পতন শুরু হয় সাইম আইয়ুবের রান আউট দিয়ে। এরপর শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ হারিস। এক ওভার বিরতি দিয়ে নিজের পরের ওভারে সফরকারী দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার ফখর জামানের উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে ঢোকা শরিফুল। পরের ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে দেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। টানা দুই বলে দুই নাওয়াজকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দেন তানজিম। অফ স্টাম্প লাইনে লাফিয়ে ওঠা দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আগ্রাসী ব্যাটার হাসান নাওয়াজকে উইকেটকিপার লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তানজিম। এই পেসারের একই রকম ডেলিভারিতে উইকেটকিপার লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাওয়াজও।
প্রথম পাঁচ ব্যাটারকে ১৫ রানের মধ্যে হারানো পাকিস্তান আর দিশা খুঁজে পায়নি। বরং উইকেটে হাঁপিয়ে উঠে প্রথম টি-টোয়েন্টি-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান দলের কোচ মাইক হেসনের কথার সঙ্গে যেন একাত্মতা ঘোষণা করে যান সালমান আগা। অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ২৩টি বল খেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৯ রান করেন সালমান। একবারের জন্যও মনে হয়নি তিনি ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতে পারেন এবং এই সংস্করণে চলতি বছর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (২৬৯) ও স্ট্রাইক রেট (১৩৬.৮৪) তাঁর। ব্যাটে বল ছোঁয়াতে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচ শেষে মিরপুরের উইকেট নিয়ে কোচ হেসনের সঙ্গে সমালোচকের তালিকায় যুক্ত ছিলেন সালমানও। তাঁর দাবি ছিল, বাংলাদেশে কখনোই ভালো মানের উইকেট পাওয়া যায় না।
এই ম্যাচের পর সালমানের সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে বৈকি। সালমানের বিদায়ের পর রানের চাকা ঘোরাতে চেষ্টা করেন ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি ও দানিয়েল। শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা বৃথা গেছে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও পাকিস্তানের মতো। পাওয়ার প্লের ৫.৫ ওভারে ২৮ রানে প্রথম সারির চার ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এদিন তানজিদ হাসান তামিমকে বসিয়ে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয় নাঈমকে। ৭ বলে ৩ রান করে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। আড়াই বছরের বেশি সময় পর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছিলেন নাঈম। সেই সিরিজে এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন চার নাম্বারে। সিরিজ শেষে জানিয়েছিলেন, চারে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। যদিও গতকাল পছন্দের ওপেনিংয়ে নেমেও নাঈমের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা সীমাবদ্ধ জাকের আলী অনিক ও শেখ মেহেদীর দুটি ইনিংসে। পঞ্চম উইকেটে দুজনে ৫৩ রান যোগ করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন। এখান থেকে ৩৩ রান করে শেখ মেহেদী আউট হয়ে গেলেও বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ছিলেন জাকের। শেষ বলে আব্বাস আফ্রিদির হাতে আউট হওয়ার আগে জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান। তাতে যে লড়াইয়ের পুঁজি আসে, সেটা দিয়েই পাকিস্তানের ব্যাটারদের বেঁধে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে সিরিজ জয়ের ছোঁয়ায়।

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্সসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম আসছে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা দিতে ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স এবং বার্ন ইউনিটে ব্যবহৃত বিশেষায়িত চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এসব সহায়তা ঢাকায় এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনার ভিত্তিতে এ সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র বিবিসিকে জানায়, ‘আমরা আশা করছি, বার্ন ইউনিটে দীর্ঘদিন কাজ করা অভিজ্ঞ দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং কয়েকজন নার্সের একটি দল মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছাবে।
সূত্রটি আরো জানায়, বার্ন রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় কিছু মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টও পাঠানো হবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে আরো চিকিৎসক পাঠানো হতে পারে।
আগের দিন সোমবারের দুর্ঘটনার পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশের যেকোনো প্রয়োজনীয় সহায়তায় ভারতের প্রস্তুতির কথা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সোমবার সন্ধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া এক বার্তায় ঢাকার দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘ঢাকায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। এই দুঃসময়ে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে এবং সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত।’
এর পর থেকেই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে।
ঢাকায় সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লিকে জানানো হয়, বেশির ভাগ আহত ব্যক্তিই দগ্ধ হয়েছে। তাই বিশেষায়িত চিকিৎসকদল, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহ করা হলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই দিল্লি দ্রুত চিকিৎসক, নার্সসহ একটি টিম পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে তারা মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় জরুরি প্রয়োজনে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা কূটনৈতিক শীতলতা থাকলেও এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দুই দেশের মানবিক সহানুভূতির ভিত্তিতে যে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।