একদিকে শুষ্ক মৌসুম। অন্যদিকে বইছে মৃদু হাওয়া। এরই মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজিবি গেট পর্যন্ত সাতমসজিদ সড়কে চলছে ডিভাইডার (বিভাজক) মেরামতের কাজ। এর ফলে ডিভাইডারের বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়ায় মাঝখান থেকে মাটি বেরিয়ে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে।
একদিকে শুষ্ক মৌসুম। অন্যদিকে বইছে মৃদু হাওয়া। এরই মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজিবি গেট পর্যন্ত সাতমসজিদ সড়কে চলছে ডিভাইডার (বিভাজক) মেরামতের কাজ। এর ফলে ডিভাইডারের বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়ায় মাঝখান থেকে মাটি বেরিয়ে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে।
পথচারী ও দোকানিরা জানান, ডিভাইডার না থাকায় বিভিন্ন যানসহ পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়ায় এই সড়কে তৈরি হচ্ছে যানজট। আবার ডিভাইডারের বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়ায় মাটি সরে সেখানকার ছোট-বড় গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এসব দেখভাল কিংবা ধুলা নিবারণে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কারো কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা কিংবা অন্য কোনো সংস্থাকে ওই সড়কে ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটাতেও দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীতে সর্দি, কাশি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা, ব্রংকাইটিস, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। বাতাসে অতিরিক্ত ধুলার কারণে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর থেকে ধানমণ্ডি-১৫ হয়ে জিগাতলা পর্যন্ত সাতমসজিদ সড়কের দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিং মলসহ নামিদামি রেস্তোরাঁ।
মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজের মাঠের সামনে সড়কের পাশে রয়েছে ময়লার স্তূপ। সেখানে ধুলা আর ময়লার স্তূপ মিলিয়ে এক অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাক চেপে যেতে বাধ্য হচ্ছে পথচারীরা। আর ব্যস্ত এই সড়কের ডিভাইডার ভেঙে নেওয়ায় যত্রতত্র পার হতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল দুপুরে শঙ্কর ছায়ানটের পাশে রিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগে আরোহীসহ চালক পড়ে আহত হয়েছে। পাশেই ভেঙে দেওয়া ডিভাইডার থেকে জ্বালানির জন্য শুকনা গাছ তুলে নিতে দেখা গেছে অনেককে।
গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাতের দোকানি আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুলাবালির কারণে কিছুক্ষণ পর পর দোকানের জিনিসপত্র মুছতে হয়। নাক-মুখ দিয়ে ধুলা ঢোকায় আমাদের সর্দিকাশি লেগেই আছে। সিটি করপোরেশন পানি ছিটালে এই ধুলা থেকে রেহাই পাওয়া যেত।’
মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজসংলগ্ন গাড়ির শোরুমের কর্মচারী মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজ উদ্যোগে দোকানের সামনে দিনে দু-তিনবার পানি ছিটাই। কিন্তু ধুলাবালির কারণে শান্তি শেষ।’
ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের পাশে পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাত দিন ধরে এখানে ডিউটি করছি নিয়মিত। সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষকে এই সড়কের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে এক বালতি পানি ছিটাতেও দেখিনি। ট্রাফিক পুলিশের চাকরি করি, এমন ধুলাবালিতে ডিউটি করতে অনেক বেশি কষ্ট হয়।’
ডিভাইডারে কাজ করা আসলাম নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমগো দায়িত্ব কাজ করা। পানি ছিটানোর দায়িত্ব আমগো না। তয় পানি ছিটাইলে আমগোর জন্য ভালো হইত। শরীরে ধুলাবালির আস্তর কম পড়ত।’
কত দিন ধরে চলবে এই কাজ, জানতে চাইলে ওই শ্রমিক বলেন, ‘সঠিক জানি না। আমাদের স্যাররা বলতে পারবেন। তবে মেলা দিন লাগবে বলে মনে হয়।’
এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা পথচারী আকবর হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্ষায় রাজধানীবাসী ভোগে কাদাপানিতে আর শুষ্ক মৌসুমে ভোগে ধুলায়। আমার ডাস্ট অ্যালার্জি হয়েছে এই ধুলাবালির কারণে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শীতকালে ধুলাবালির কারণে বেশি রোগবালাই হচ্ছে। ধুলাবালিতে ফুসফুসের রোগ, সর্দিকাশি, জ্বর, চোখের ব্যথা, ব্রংকাইটিস, মাথা ব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়।
এই সড়কে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেন, জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কে পানি ছিটানোর জন্য পর্যাপ্ত সোর্স আমাদের নেই। মাঝেমধ্যে ওয়াসা থেকে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করে থাকি। তবে এটা সত্য যে সাতমসজিদ সড়কে ধুলাবালি থাকায় ভুক্তভোগী অনেকে। এ রাস্তায় পানি ছিটানো বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে দেখব।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শর্ত দিলেও তারা সেভাবে মানতে চায় না।
সম্পর্কিত খবর
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।
পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’