ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

বিদ্রোহী নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল, পাত্তা দিচ্ছেন না রিফাত

আবদুর রহমান, কুমিল্লা
আবদুর রহমান, কুমিল্লা
শেয়ার
বিদ্রোহী নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল, পাত্তা দিচ্ছেন না রিফাত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) প্রতিষ্ঠার পর হওয়া দুটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে হারিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। আগামী ১৫ জুনের ভোটের মধ্য দিয়ে তিনি বিজয়ের হ্যাটট্রিক করবেন, নাকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেউ বসবেন নগরপিতার আসনে—সে আলোচনাই এখন নগরীর সর্বত্র। বিগত দুটি নির্বাচনে দল ক্ষমতায় থাকলেও কেবল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছিলেন বিশাল ভোটের ব্যবধানে। এবারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনেপ্রাণে চাইছেন, মেয়রের চেয়ারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই বসুন।

কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন দুপুর পর্যন্ত রিফাত ও নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন যে এবার দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছে না। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ সময়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। ইমরান বলেছেন, যত কিছুর বিনিময়ে হোক তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়বেন।

ইমরান প্রার্থী হওয়ার ফলে এরই মধ্যে পাল্টে গেছে কুসিক নির্বাচনের ভোটের সমীকরণ। সাক্কুর বিরুদ্ধে বিএনপিপন্থী হেভিওয়েট প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনী মাঠে থাকায় এত দিন বিএনপির কোন্দলে রিফাত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে যেন উল্টেই গেল ভোটের হিসাব। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এখন রিফাতের গলার কাঁটা।

আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামায় এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সাক্কু।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ইমরানকে থামানো না গেলে ক্ষতি হবে দলেরই। তবে বিষয়টিতে পাত্তা দিচ্ছেন না রিফাত। তিনি বলছেন, সবাই শেষ পর্যন্ত নৌকার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ইমরানের নির্বাচনে অংশগ্রহণে তিনি মোটেও অবাক নন।

রিফাত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন।

তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ইমরান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ঘনিষ্ঠ কর্মী আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের ছেলে। কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইমরান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে হেরেছেন। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমার ভাই। কুসিক নির্বাচনে এবার সীমা, ইমরানসহ ১৪ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুসিকের গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী হিসেবে আস্থা রেখেছিল আফজল খানের পরিবারে। ২০১২ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত আফজল খান। ২০১৭ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। দুটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা সাক্কুর কাছে পরাজিত হন বাবা-মেয়ে। এবারই প্রথমবারের মতো খান পরিবারের বাইরে গেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। গত দুটি নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রয়াত আফজল খানের সঙ্গে এমপি বাহারের ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ। নব্বইয়ের দশক থেকেই দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ বাহারকে বেছে নিলে আফজল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবার আফজলকে বেছে নিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাহার। আফজল খান মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে এমপি বাহারের সেই রাজনৈতিক বিরোধ এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে আফজল খানের পরিবারের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর মেয়ে সীমা ও ছেলে ইমরান। আফজল খানের পরিবারের সঙ্গে বাহারের সেই বিরোধ কুসিক নির্বাচনে আবার প্রকাশ্যে এলো।

জাহাঙ্গীর আলম ও ফয়েজ আহমেদ নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের দুই কর্মী বলেন, তাঁরা চান এবার পরিবর্তন হোক, নৌকার প্রার্থীই মেয়রের চেয়ারে বসুন। কিন্তু দলীয় কোন্দলসহ সব বাধা ডিঙিয়ে নৌকার প্রার্থী মেয়র হওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ইমরান যত ভোটই পাক তা আওয়ামী লীগেরই। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর বাবার একটি প্রভাব ছিল। তাঁকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

ইমরান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা নগরীর মানুষের সঙ্গে আছি। বাবার আদর্শে জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। কুমিল্লা নগরীর মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। যত কিছুর বিনিময়ে হোক শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। আশা করছি, মানুষ আমাকেই তাদের মেয়র হিসেবে বেছে নেবে।’

রিফাত বলেন, ‘আমার পক্ষে তৃণমূল থেকে প্রতিটি স্তরের আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। আশা করছি, কুমিল্লার মানুষ আমাকেই ১৫ জুনের নির্বাচনে বেছে নেবে। আমি মেয়র না, মানুষের সেবক হতে চাই। নেত্রীকে নৌকার বিজয় উপহার দিতে চাই। ইমরানকে বলব, তার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, তিনি নৌকা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই আজ

কুসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ১৬৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি জানান, মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭টি ওয়ার্ড থেকে ১২০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদের জন্য ৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

শেয়ার
শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।

পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সোয়া ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।

ফুটেজে দেখা গেছে, সঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।

মন্তব্য
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব

৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কমিশন থেকে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য
খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা

আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এদিকে সিসিটিভির  ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।

তবে ওই মামলায় এ পর্যন্ত মোট দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার  রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।

যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।

দুটি গুলি তাঁর মাথা ও মুখের ডান পাশে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই পায়ের রগ কেটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা।

কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ