ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭
ইউরোপীয় কমিশনের নতুন প্রস্তাব

ইউরোপে বাণিজ্য সুবিধা পেতে পরিবেশ মান বজায় রাখতে হবে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ইউরোপে বাণিজ্য সুবিধা পেতে পরিবেশ মান বজায় রাখতে হবে

যেসব স্বল্পোন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জিএসপির আওতায় অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে আসছে, তাদের নতুন করে আরো কিছু শর্ত পালন করতে হবে। গত পাঁচ দশক ধরে ইইউ ৬৭ দেশের জন্য জেনারালাইজড স্কিম অব প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) চালু রেখেছে। ২০২৪ সাল থেকে এর হালনাগাদ কার্যকর হবে।

তাতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গতকাল বুধবার ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব করেছে, যারা ইইউর বাজারে বাণিজ্য সুবিধা পেতে চায়, তাদের অবশ্যই পরিবেশগত ও শাসনগত মান বজায় রাখতে হবে।

এর পাশাপাশি মানব ও শ্রম অধিকার রক্ষার অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতিও মেনে চলতে হবে।

তাই হালনাগাদকরণে তারা নিজস্ব সবুজ কর্মসূচি ও ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের যে লক্ষ্য, তাতে জোর দিতে চায়। ২৭ দেশের ব্লক ইইউ যে তিন ক্যাটাগরিতে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে আসছে, তা তারা অব্যাহত রাখবে বলে জানায়।

প্রথম পর্যায়ে তারা জিএসপির আওতায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দিয়ে আসছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত ও নাইজেরিয়াসহ নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড জিএসপির আওতায় আংশিক সুবিধা দিচ্ছে। এ দেশগুলো দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যে আংশিক শুল্ক সুবিধা পায়। তৃতীয় পর্যায়ে জিএসপি প্লাসের আওতায় পাকিস্তান ও ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশকে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যে শূন্য ট্যারিফ সুবিধা দিচ্ছে। তাদের মানবধিকার ও শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও সুশাসন বিষয়ে ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন বা নীতি মেনে চলতে হয়।

ইউরোপীয় কমিশন নতুন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ২০২৪ সাল থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মেনে চলতে হবে। এতে ছয়টি নতুন ধারা যুক্ত হবে, যার মধ্যে থাকবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, মানবধিকার ও শ্রম অধিকার, পরিবেশ, প্রতিবন্ধীদের অধিকার, আন্তর্দেশীয় সংগঠিত অপরাধ ইত্যদি। সূত্র : রয়টার্স।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত

‘কেউ তো জানাবে আমার মেয়ে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে?’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘কেউ তো জানাবে আমার মেয়ে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে?’

যদি দেখতাম আমার পাখি ফিরে এসেছে, দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে : আম্মু, দরজা খোল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এমন বিলাপ ভেসে আসছিল রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আঙিনায়। কথাটি বারবার কানে বাজছিল অন্যদেরও। বিলাপ করছিলেন রাবেয়া খাতুন মিম।

গত সোমবার দুপুরে স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হলে আগুনে পুড়ে যায় তাঁর মেয়ে রাইসা মণির বই, খাতা, ব্যাগ ও আইডি কার্ড। এগুলোর পোড়া অংশ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে তিনি উদ্ধার করেছেন। তবে খুঁজে পাননি তাঁর মেয়ে রাইসা মণিকে। রাইসা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

এ ঘটনায় রইসার মা রাবেয়া খাতুন মিম  চোখে অন্ধকার দেখছেন। বেশির ভাগ সময় বাকরুদ্ধ থাকছেন। গত সোমবার দিনভর স্কুল প্রাঙ্গণসহ রাজধানীর অন্তত আটটি হাসপাতালে ছুটে গেছেন, সন্তানের খোঁজ পাননি। আশায় বুক বেঁধে আছেন, হয়তো জীবিত অবস্থায় তাঁর কোলে ফিরে আসবে ছোট্ট শিশুটি।

সেই আশা নিয়ে পরদিন গতকাল সকালেও রাবেয়া হাজির হয়েছিলেন রাইসার স্কুলের আঙিনায়। কেউ রাইসার খোঁজ দিতে পারেনি তাঁকে। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আর আর্তনাদের করে বলছিলেন, ভালো স্কুলে ভর্তি করায়া ছিলাম ভালো ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হইয়া গেল রে, স্কুল থেকেই আমার পাখিটা কোথায় চলে গেল রে, না জানি আমার পাখির কী হইছে।

যাঁরা তাঁর বিলাপ শুনছিলেন তাঁরা আরো কিছু জানতে চাইছিলেন। কিন্তু কান্নার জন্য রাবেয়া আর কিছুই বলতে পারছিলেন না। তিনি কেবলই বিলাপ করছিলেন। একই কথা বারবার বলছিলেন : যদি দেখতাম আমার পাখি ফিরে এসেছে... দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে আম্মু, দরজা খোল।

পাশেই ছিলেন রাইসার মামা সাগর হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, রাতভর রাইসাকে খুঁজেছি। সকাল হতেই আবার খুঁজতে এসেছি। তার বই, খাতা, আইডি কার্ড পেয়েছি। তাকে কেন পাওয়া যাচ্ছে না? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট কেউ তার খোঁজ দিতে পারছে না। জীবিত বা মৃত, যাই হোক সন্ধান তো পাওয়ার কথা।

স্কুল প্রাঙ্গণে নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ নিতে এসেছিলেন তানিয়া আক্তার। তাঁর মেয়ে মারিয়াম উম্মে আফিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে দিশাহারা তিনিও। সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন তাকেই মেয়ের ছবি দেখিয়ে খোঁজ জানার চেষ্টা করছিলেন। আফিয়া এই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জানিয়ে তানিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন স্কুল শেষে সে কোচিং করত। নিজে থেকে বাসায় ফিরত। সেদিন (সোমবার) আর ফেরেনি। বিমান দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলের কাছে ছুটে যাই। কিন্তু আমার বাচ্চাকে কোথাও খুঁজে পাইনি। রাতভর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। আজ সকালে আবারও স্কুলে এসেছি, হয়তো কেউ কিছু বলতে পারবে। কিন্তু কেউ তার খোঁজ দিতে পারছে না। অন্তত কেউ তো জানাবে আমার মেয়ে বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে!

মন্তব্য
চিকিৎসক-নার্সদের অভিজ্ঞতা

‘ভেতরে যেন প্রাণ আছে বাইরে পোড়া লাশ’

    মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
জুবায়ের আহমেদ
জুবায়ের আহমেদ
শেয়ার
‘ভেতরে যেন প্রাণ আছে বাইরে পোড়া লাশ’

আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ খবর আসে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে আসছে। প্রথমে কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না কী ঘটেছে। আমরা প্রস্তুতি নিই, কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি ঘটনা এতটাই হৃদয়বিদারক!

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পর দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার এসব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, হাসপাতালে আহতদের নিয়ে আসার পর আমরা একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হই। বাইরের অনেক লোক হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। আমরা চেষ্টা করছিলাম সবাইকে বাইরে বের করে দিতে, কারণ ভিড়ের কারণে আহতদের চিকিৎসা দিতে কষ্ট হচ্ছিল। ক্যানুলা লাগানোর মতো সাধারণ চিকিৎসার জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না।

আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের অবস্থা গুরুতর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু দগ্ধের শরীর থেকে চামড়া উঠে গিয়েছিল, যা দেখতে অত্যন্ত মর্মান্তিক ছিল। জীবিত মানুষের শরীর থেকে চামড়া উঠে যাওয়া এক বিভীষিকাময় দৃশ্য ছিল। ভেতরে যেন প্রাণ আছে, বাইরে পোড়া কোনো লাশ।

শিশু শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, শিশুদের অবস্থা আরো হৃদয়বিদারক ছিল।

সাধারণত বাচ্চারা অভিভাবক না দেখলে কান্নাকাটি করে, কিন্তু এই শিশুরা এতটাই ট্রমাটাইজড ছিল যে তারা কাঁদতেও পারছিল না। ট্রলিতে করে যখন তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তারা শুধু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তাদের চোখে ছিল এক গভীর শূন্যতা এবং অসহায়ত্ব। বাচ্চাদের পাশে কোনো অভিভাবক না থাকায় পরিস্থিতি আরো অসহায় হয়ে ওঠে। যাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানোর কথা, তাদের সঙ্গে কেউ ছিল না।
কিছু স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসেন শিশুগুলোর সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কিছু ক্ষেত্রে কেবল অ্যাম্বুল্যান্সচালক সঙ্গী হন। দগ্ধ শিশুদের কারো কারো অবস্থা এতটাই আশঙ্কাজনক ছিল যে মনে হচ্ছিল পথেই হয়তো মারা যাবে!

ডা. বজলুর রহমান আদিল এ কথা বলতে বলতে কান্না ধরে রাখতে পারেননি।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির বিভীষিকাময় দিনটি দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সামিউল আলম। তিনি বলেন, প্রথমে আসে এক সাত-আট বছরের মেয়ে শিশু। মেয়েটির শরীরের চামড়া ঝুলছিল, কাপড় পুড়ে গেছে। অথচ তাদের সঙ্গে কেউ নেই, না অভিভাবক, না শিক্ষক।

তিনি বলেন, তখনো কেউ ভাবতে পারিনি, এটি কেবল শুরু। মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট পরই একের পর এক পোড়া রোগী ঢুকতে থাকে জরুরি বিভাগে। কাউকে কাঁধে করে, কাউকে ট্রলিতে চাপিয়ে আনা হচ্ছিল। ছোট ছোট বাচ্চারা, তাদের শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কারো মুখে চামড়া নেই, কারো পিঠ গলে গেছে, কারো শরীরের চামড়া ঝুলে ঝুলে পড়ছে। প্রথমে আনা প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর বেশির ভাগেরই ৯০ শতাংশ শরীর পুড়ে গিয়েছিল। শ্বাসকষ্টে থাকা দেহগুলোকে অক্সিজেন দেব, সেই অবস্থাও নেই। কারণ কণ্ঠনালিও পুড়ে গেছে।

সিনিয়র এই নার্স বলেন, জরুরি বিভাগের ফ্লোরে এত পানি জমে গিয়েছিল যে মনে হচ্ছিল পায়ের গোড়ালি সমান পানিতে দাঁড়িয়ে আছি। আর সেই পানির মধ্যে পড়ে আছে দগ্ধ শিশুরা, ব্যান্ডেজ আর স্যালাইন।

মর্মান্তিক ঘটনা মনে করে লুবানা জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিরাজুন নাবী চঞ্চল বলেন, ঘটনার দিন সারাক্ষণ কেবল শিশুদের যন্ত্রণা দেখেছি। রাতে গিয়ে ঘুমানো যায়নি। এত ছোট দেহে এত যন্ত্রণা! না তারা কোনো ভুল করেছে, যার জন্য এই সাজা? তারা তো কেবল স্কুলে গিয়েছিল!

মন্তব্য
স্থায়ী কমিটির বৈঠক

বিএনপিকে বিব্রত করতে ‘অযৌক্তিক’ সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিএনপিকে বিব্রত করতে ‘অযৌক্তিক’ সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার

সংস্কারের নামে বিভিন্ন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকে বিএনপি নেতাদের অভিমত, গণতন্ত্রের ইতিহাসে দেশে দেশে যেগুলোর স্বাভাবিক প্র্যাকটিস আছে, সেগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে।

যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও দলের প্রধানই সারা জীবন প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। সুতরাং দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার প্রস্তাব বিএনপি মানবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে উত্তরার বিমান দুর্ঘটনা ছাড়াও দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারা না পারা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল অন্য দলগুলো অনেক বড় দল নয়। নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাব মেনে নিলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু বিএনপির পক্ষে এই সিদ্ধান্ত (দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা) মেনে নেওয়া কঠিন। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে কমিটির একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, তা ছাড়া নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের সংসদীয় কমিটিই ঠিক করে থাকে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এখানে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে, তারা দলীয় প্রধানকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে, তাহলে গণতান্ত্রিক এ প্রক্রিয়ার সুযোগ বন্ধ করা ঠিক হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য বলেন, বর্তমানে অযৌক্তিক অনেক সংস্কার প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য বিএনপিকে বেঁধে ফেলা।

কারণ বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে বিএনপিই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবেসম্প্রতি বিভিন্ন সংগঠনের জরিপেও সেই তথ্য উঠে এসেছে। সুতরাং কোনো অযৌক্তিক সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি মানবে না। তাদের যুক্তি, বিশ্বের গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হয়ে থাকেন। এ ছাড়া পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। আমাদের দেশেও দলীয় প্রধানরাই সারা জীবন প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তা ছাড়া বাংলাদেশে দলীয় প্রধানের পরিচয়েই মূলত সেই দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রেও দলীয় প্রধানের পরিচয়ই মুখ্য ভূমিকা রাখে।

স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকের মতো এ বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না। স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা, অর্থাৎ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দু-একটি বিষয়ে ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে যদি ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তো তেমন অর্থবহ থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সংসদেরই বা কী দরকার। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়বে। তবে এই আলোচনায় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলোচনা হবে।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় নিহত ছাত্র-ছাত্রী ও পাইলটের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, আহতদের আশু সুস্থতা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।

সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য
পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি

ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও বাংলাদেশের

বোরহান জাবেদ
বোরহান জাবেদ
শেয়ার
ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও বাংলাদেশের

একে তো পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি। মানসিক চাপ অনুভব করা অস্বাভাবিক ছিল না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। তার ওপর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেছে পুরো দেশকে। সেই বিষণ্নতা ছুঁয়ে গেছে লিটন দাস-তাওহিদ হৃদয়দেরও।

দুটিকেই জয় করে গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এই সংস্করণে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের স্বাদও যোগ হয়েছে এই জয়ে। স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেছে কানায় কানায় পরিপূর্ণ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের। অবশ্য ম্যাচের পূর্বাভাসে রঙিন দিনের বার্তা ছিল না।

আগে ব্যাটিং করতে নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যে মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। জাকের আলীর প্রতিরোধে ১৩৩ রানের যে সংগ্রহ পেয়েছিল স্বাগতিকরা, পরে সেটাই পাকিস্তানের ব্যাটারদের জন্য দুর্বিষহ করে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা।

চার বল বাকি থাকতে পাকিস্তান অলআউট হয় ১২৫ রানে। মিরপুরের উইকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো গতকালও ব্যাট হাতে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা।

এক পর্যায়ে ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারী দল। তবে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন আটে নামা ফাহিম আশরাফ। ১৯তম ওভারের শেষ বলে রিশাদ হোসেনের হাতে আউট হওয়ার আগে ম্যাচের ভাগ্য পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল তাঁর ৩২ বলে ৫১ রানের ইনিংসের সৌজন্যে। তিনি আউট হয়ে ফেরার সময় শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে চার মেরে পাকিস্তানের আশা আরো গাঢ় করেন আহমেদ দানিয়েল।
তবে দ্বিতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দিলে হতাশা সঙ্গী হয় পাকিস্তানের।

পাকিস্তানের ইনিংসের পতন শুরু হয় সাইম আইয়ুবের রান আউট দিয়ে। এরপর শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ হারিস। এক ওভার বিরতি দিয়ে নিজের পরের ওভারে সফরকারী দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার ফখর জামানের উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে ঢোকা শরিফুল। পরের ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে দেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। টানা দুই বলে দুই নাওয়াজকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দেন তানজিম। অফ স্টাম্প লাইনে লাফিয়ে ওঠা দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আগ্রাসী ব্যাটার হাসান নাওয়াজকে উইকেটকিপার লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তানজিম। এই পেসারের একই রকম ডেলিভারিতে উইকেটকিপার লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাওয়াজও।

প্রথম পাঁচ ব্যাটারকে ১৫ রানের মধ্যে হারানো পাকিস্তান আর দিশা খুঁজে পায়নি। বরং উইকেটে হাঁপিয়ে উঠে প্রথম টি-টোয়েন্টি-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান দলের কোচ মাইক হেসনের কথার সঙ্গে যেন একাত্মতা ঘোষণা করে যান সালমান আগা। অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ২৩টি বল খেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৯ রান করেন সালমান। একবারের জন্যও মনে হয়নি তিনি ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতে পারেন এবং এই সংস্করণে চলতি বছর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (২৬৯) ও স্ট্রাইক রেট (১৩৬.৮৪) তাঁর। ব্যাটে বল ছোঁয়াতে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচ শেষে মিরপুরের উইকেট নিয়ে কোচ হেসনের সঙ্গে সমালোচকের তালিকায় যুক্ত ছিলেন সালমানও। তাঁর দাবি ছিল, বাংলাদেশে কখনোই ভালো মানের উইকেট পাওয়া যায় না।

এই ম্যাচের পর সালমানের সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে বৈকি। সালমানের বিদায়ের পর রানের চাকা ঘোরাতে চেষ্টা করেন ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি ও দানিয়েল। শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা বৃথা গেছে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও পাকিস্তানের মতো। পাওয়ার প্লের ৫.৫ ওভারে ২৮ রানে প্রথম সারির চার ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এদিন তানজিদ হাসান তামিমকে বসিয়ে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয় নাঈমকে। ৭ বলে ৩ রান করে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। আড়াই বছরের বেশি সময় পর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছিলেন নাঈম। সেই সিরিজে এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন চার নাম্বারে। সিরিজ শেষে জানিয়েছিলেন, চারে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। যদিও গতকাল পছন্দের ওপেনিংয়ে নেমেও নাঈমের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা সীমাবদ্ধ জাকের আলী অনিক ও শেখ মেহেদীর দুটি ইনিংসে। পঞ্চম উইকেটে দুজনে ৫৩ রান যোগ করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন। এখান থেকে ৩৩ রান করে শেখ মেহেদী আউট হয়ে গেলেও বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ছিলেন জাকের। শেষ বলে আব্বাস আফ্রিদির হাতে আউট হওয়ার আগে জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান। তাতে যে লড়াইয়ের পুঁজি আসে, সেটা দিয়েই পাকিস্তানের ব্যাটারদের বেঁধে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে সিরিজ জয়ের ছোঁয়ায়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ