জাতীয় সনদ প্রণয়নে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বদলের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, শেখ হাসিনা যে পথে চলে স্বৈরাচার হয়েছিলেন, সেই পথে চললে স্বৈরাচার হবেন, এটা নিশ্চিত। প্রয়োজন ওই পথ বন্ধ করা, অর্থাৎ স্বৈরাচারীব্যবস্থার পরিবর্তন। তাই নির্বাচনীব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) আয়োজিত ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ সম্পর্কে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তাঁরা। সুজন সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে ও সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তৃতা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার কমিশনের সভাপতি ড. তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনুভা জাবিন, বাংলাদেশ জাসদের ডা. মুশতাক হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার, প্রফেসর গাজী জাহিদ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ।
সংলাপে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য সুজনের দেওয়া ২১ দফা প্রস্তাব হালনাগাদ করা হয়েছে। সেখানে দ্বিকক্ষ সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ‘শাসিত’ সরকার, ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদ সদস্য প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্র সংস্কারে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদের একটি খসড়া তৈরি করে জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে অনেক নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। ওই সব সংলাপ থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে। জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূলে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জনগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সরকার চাইলে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে পারে। এ জন্য স্থানীয় সরকারের একটি একীভূত আইন দরকার।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সর্বপ্রথম আমরাই সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সে অনুযায়ী চলমান সংস্কারকাজে আমরা সহযোগিতা করেছি।
’
বিচার ও সংস্কারের পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি। ফলে বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মেরুদণ্ডহীন ও সবচেয়ে দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, স্বাধীনতার পর কোনো সরকার এত বড় সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলো এ সরকারকে সহযোগিতা করছে। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও সমর্থন রয়েছে। তবু সরকার নিজে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
বিদ্যমান সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগণ শেখ হাসিনার সরকারকে ফেলে দিয়েছে উল্লেখ করে ডা. তাসনুভা জাবিন বলেন, এনসিপি নির্বাচন ভয় পায় না। তবে নির্বাচনব্যবস্থায় গলদ আগে পরিবর্তন করতে চায়। এ জন্য মৌলিক সংস্কার হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তন না এলেও যেগুলোতে ঐকমত্য এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। চলতি মাসেই জাতীয় সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।