চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯৪ সালে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২১ বছরে অনুষ্ঠিত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথম তিনটি ও সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন। শুধু ২০১০ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন
সহিংসতার নেপথ্যে আ. লীগের কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার
নূপুর দেব, চট্টগ্রাম

আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে চসিকের ষষ্ঠ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দফায় (গত বছরের ২৯ মার্চ নির্বাচনের আট দিন আগে ২১ মার্চ করোনাজনিত কারণে স্থগিত হয়) গণসংযোগ-প্রচারণা চলাকালে নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষমতাসীন দলের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।
নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, কাউন্সিলর পদে যাঁরা দলের সমর্থন পেয়েছেন তাঁরা জয় পেতে যেমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তেমনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও চাইছেন যেকোনো মূল্যে জয়ী হতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, দল টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনেকে আখের গুছিয়েছেন। এ সময় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে যত না বিরোধ-দ্বন্দ্ব রয়েছে, তার চেয়ে বেশির ভাগ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছেন।
এক আওয়ামী লীগ নেতার মতে, দিনে দিন যেভাবে নির্বাচনী মাঠ রক্তাক্ত হচ্ছে তাতে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও শঙ্কিত। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রামে এসে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিজেদের প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন গত কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণা ও সাংগঠনিক সভাগুলোতে বিদ্রোহী ও তাঁদের অনুসারীদের নানাভাবে নির্দেশ দিলেও তাতেও কাজ হচ্ছে না। তাঁদের পাশাপাশি দল সমর্থিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও বেপরোয়া হয়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সামনে ঘটনা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এগুলো নির্বাচনী সহিংসতা নয়, রাজনৈতিক কারণেও ার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলালের অনুসারীদের সঙ্গে মনোনয়নবঞ্চিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নেপথ্যে ওই দুই নেতার প্রায় পাঁচ বছরের বিরোধ। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন কারণে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে বেলাল দলের সমর্থন পেলে বিরোধ আরো চাঙা হয়ে ওঠে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক দিন না যেতেই লালখান বাজার এলাকায় বিবদমান এ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে। দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রচারণায় আসার আগমুহূর্তে বিবদমান এ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
জানতে চাইলে দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বেলাল যদি নিজের ভোটের কথা চিন্তা করত তাহলে প্রতিপক্ষের (বিএনপি) প্রার্থী নিয়ে ভাবত। আমি ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকে আমাদের দলের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। আমি তো নিজের প্রার্থিতা (কাউন্সিলর পদে) প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু তার পরও আমার অনুসারীদের ওপর হামলার অর্থ হচ্ছে বেলাল নতুন করে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ ব্যাপারে আবুল হাসনাত মো. বেলাল বলেন, ‘২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে উনার সঙ্গে আমার দূরত্ব থাকলেও ২০১৭ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার ঘটনার পর থেকে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। আমি সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি। উনি (মাসুম) সব সময় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছেন এলাকায়। আমাকে দল থেকে সমর্থন দেওয়ায় তিনি সহ্য করতে পারছেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে নগরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর অনুসারী আজগর আলী বাবুল নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী এ সহিংসতায় আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে দায়ের করা মামলায় কাদেরসহ ১১ জন এখন কারাগারে।
জানা যায়, বাহাদুর ওই ওয়ার্ডে সাবেক তিনবারের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। অভিযোগ উঠেছে, গত নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে আবদুল কাদের বিজয়ী হয়েছেন! পাঁচ বছর ধরে কাদেরের একক আধিপত্যে ওই ওয়ার্ডে কয়েক লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। বাহাদুর দলের সমর্থন পেলেও নির্বাচনী মাঠ থেকে সরেননি কাদের। এলাকায় প্রচারণায় দলীয় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দেখে কাদেরের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল কাদের। তার সঙ্গে সাংগঠনিক কোনো বিরোধ নেই আমার। কিন্তু এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি আমার নির্বাচনী প্রচারণায় এ হামলা চালিয়েছে। এখন কারাগারে থাকলেও সেখান থেকে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নানাভাবে ভোটার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
গত ৮ জানুয়ারি প্রচারণা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নগরের বাকলিয়া থানার দেওয়ানবাজার ভরা পুকুর পার এলাকায় হামলা-ছুরিকাঘাতে আশিকুর রহমান রোহিত (২০) নামে এক ছাত্রলীগকর্মী গুরুতর আহত হন। গত শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এলাকায় মাদকবিরোধী লিফলেট লাগানোকে কেন্দ্র এ ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। তবে এ দিন মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটিয়েছে দলের প্রতিপক্ষ।
এর আগে গত বছরের ১৮ মার্চ নগরের হালিশহর থানাধীন ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত একদল সন্ত্রাসী বিদ্রোহী প্রার্থী সদ্যবিদায়ি কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরীর অনুসারী আনোয়ার জাহির তানভীরকে (৪০) ছুরিকাঘাতে খুন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মোরশেদের বাড়ির সামনে নির্বাচনী কার্যালয়ে তানভীর নিহত হলেও এ হত্যাকাণ্ডে এজাহারভুক্ত একাধিক আসামি (জামিনপ্রাপ্ত) এখন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত ৮ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে নগরের অনেক ওয়ার্ডে দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ি, সংঘর্ষ লেগেই আছে। আসন্ন এ নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলে এখনো ৪৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে দলের ৮৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। সমর্থিত ও বিদ্রোহীদের অনেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।
সম্পর্কিত খবর

বিজিবি মোতায়েন


পালিয়েছেন ঠিকাদাররা ইতিহাসের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন
এম আর মাসফি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নেমে এসেছে ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে। সদ্য শেষ হওয়া এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার হয়েছে মাত্র ৬৭.৮৫ শতাংশ, যা গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই চিত্র।
অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে গতি ছিল মন্থর।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অযাচিত ব্যয় বন্ধে কঠোরতা আরোপ প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও অপ্রয়োজনীয় খাতগুলোতে অর্থছাড় বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া হয়। এর ফলে একদিকে উন্নয়ন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে পড়ে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৮টি প্রকল্প ছিল এডিপির আওতায়।
অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেখা গেছে ব্যয় কমে যাওয়ার প্রবণতা। এ মাসে খরচ হয়েছে ৪২ হাজার ৪৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের মাত্র ১৮.৭৭ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় ধস দেখা গেছে বিদেশি সহায়তানির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬৫.৫৩ শতাংশ। এই হারও ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমনকি কভিড মহামারির মধ্যেও এই খাতে ব্যয় হয়েছিল ৯২ শতাংশের বেশি।
আইএমইডির ওয়েবসাইট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো অর্থবছরেই এডিপি বাস্তবায়নের হার ৮০ শতাংশের নিচে নামেনি। করোনাকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ, যা এবারকার তুলনায় ১২.৫৪ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯৪.৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৯৪.০২ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯২.৭২ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯২.৭৪ শতাংশ এবং ২০১১-১২, ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও ৯৩ শতাংশের ওপরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। এককথায়, কোনো অর্থবছরেই বর্তমান অর্থবছরের মতো এত খারাপ হয়নি।
এডিপি বাস্তবায়নে খাতভিত্তিক চিত্রেও ব্যাপক বৈষম্য লক্ষ করা গেছে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য খাত। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের বাস্তবায়ন হার ছিল মাত্র ১৫.৩৬ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ খরচ করেছে ২১.৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় ৩৭.৪৬ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৩২.০২ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৩৯.৫৫ শতাংশ এবং সরকারি কর্ম কমিশন ৩৭.৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯৯.৫৪ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৯৮.১০ শতাংশ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৯৮ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯৪.৭৭ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ৯১.০৭ শতাংশ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৯১.৫৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, তারা তাদের বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় করেছে ৩০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা, যা ৮৪.৫০ শতাংশ।
এ বিষয়ে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্য অর্থবছরগুলোর তুলনায় এবারের এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে, এটা ঠিক। তবে সরাসরি তুলনা সঠিক হবে না, কারণ গত অর্থবছরের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে এমনটি হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরে অন্তর্বর্তী সরকার অযাচিত অর্থ খরচে কঠোর হয়। এ কারণে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজেট বরাদ্দ দিলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পরিকল্পনা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা—এই তিনের সমন্বয় না হলে এডিপি বার্ষিক টার্গেটের নিচেই থেকে যাবে। প্রতিবছর এডিপি বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনতে সরকারের তরফ থেকে চাপ দেওয়া হলেও বাস্তব ফলাফল দৃশ্যমান নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর জবাবদিহির আওতায় আনাই হতে পারে ভবিষ্যতের বাস্তবায়ন সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির
কোনো মাস্তানতন্ত্র, কালো টাকার খেলা মানব না
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

নির্বাচন বিলম্বিত হলে জটিলতা সৃষ্টি হবে জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘তবে আমরা কোনো প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারি চাচ্ছি না। যে বাচ্চা ছয় মাসের মাথায় জন্ম নেয় তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হয়। ওই বাচ্চা সারা জীবন দুর্বল থাকে। আমরা এ রকম কোনো দুর্বল ও ইমম্যাচিউর গণতন্ত্র ও নির্বাচন চাচ্ছি না।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তি ও সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘অবশ্যই দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থানে আনতে আমাদের একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের প্রথম অংশে এ নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্বাচন কেমন চাই? আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য—অতীতের বস্তাপচা ধারার কোনো নির্বাচন আমরা চাই না এবং মেনে নেব না।
স্থানীয় নির্বাচন আগে দেওয়ার বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছি দুর্ভোগ কমানোর জন্য। বহু জায়গায় জনপ্রতিনিধি নেই—জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থান আমরা একা করিনি। আমাদের প্রবাসীরাও এতে সমান কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁদের ভোটাধিকার কেন থাকবে না? প্রবাসীদের ভোটাধিকার নেই বলে সরকারও তাঁদের গুরুত্ব দেয় না। তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয় কেবল এক জায়গায়—রেমিট্যান্স পাঠাতে বলে।’ আল্লাহর ইচ্ছায় আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জমিনের দায়িত্ব ও কৃতিত্ব বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের।
তরুণদের কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে ৪২ শতাংশের বেশি জনশক্তি রয়েছে, যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি। আমাদের দেশে ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের সংখ্যা বেশি। এরাই একটি সমাজকে গড়ে দিতে পারে। এটি বিশাল একটি শক্তি আমাদের দেশের। আমাদের মাটির নিচে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। মাটির ওপরেও দিয়েছেন, সমুদ্রের তলেও দিয়েছেন। কিন্তু এত সম্পদ দেওয়ার পরও কেন আমরা দেশটা গড়তে পারলাম না? উত্তর একটিই—চারিত্রিক সম্পদের অভাব।’ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যাঁরাই যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে গেছেন তাঁরা প্রথমে চিন্তা করেছেন—আমার সুবিধাটা কোথায়? এরপর চিন্তা করেছেন—আমার দলের সুবিধা কোথায়? এই দুই সুবিধা নিতে গিয়ে তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এরপর জনগণের দিকে ভালোভাবে ফিরে তাকানোর সময় তারা পাননি।’ তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এরা দুদককে ভয় পায়, আল্লাহকে ভয় পায় না। যদি তারা আল্লাহকে ভয় পেত, তাহলে জনগণের সম্পদে হাত দিত না।’

মমতাময়ী শিক্ষিকা মেহরিনের প্রশংসা করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শোক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। পাশাপাশি প্রশংসা করেছেন ২০ শিশুকে বাঁচানো শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর।
গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ঢাকার স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা শোনার পর বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার খারাপ লাগছে।